জনপ্রিয় হচ্ছে ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে কোরবানির গরু বিক্রি

জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে কোরবানির গরু বিক্রি

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটে, বাজারে, খামারে ও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এবার কোরবানির গরু কিনতে হাটের ভিড় এড়াতে চাইছেন অনেকে। করোনা মহামারির এই সংক্রমণের কালে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না তারা। এতে করে অন্য সব পণ্যের মতো অনলাইনে বেড়েছে কোরবানির পশু বিক্রিও। খামারিরা ‘লাইভ ওয়েট’ পদ্ধতিতে অনলাইনে ক্রেতাদের কাছে গরু বিক্রি করছেন।

গজ বা ফিতার মাধ্যমে গরুর ওজন মেপে বিক্রির এই পদ্ধতিকে ‘লাইভ ওয়েট’ বলছেন খামারিরা। খামারি এবং ক্রেতা উভয়ই বলছেন, ওজন পদ্ধতিতে কেজি দরে পশু ক্রয় করলে ঠকার সম্ভাবনা কম।

ফিতা দিয়ে গরু মেপে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রচলনটা বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। বিশেষ করে ব্যাপারী ও খামারিরা ওজন ছাড়া যখন গরু ক্রয় -বিক্রয় করতেন তখন গরুর ওজন কত? কী পরিমাণ মাংস হবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন উঠত এবং এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট বার্গেনিং চলত। এক পর্যায়ে হয়তো পশু বিক্রিই হতো না। কিন্তু এখন সে সময় নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু মাপার ওজন এসেছে। এখন ব্যাপারীরা হাটে-বাজারেও ফিতা নিয়ে যান। এতে ঠকার সম্ভাবনাও থাকে না।

দেশের সর্ববৃহৎ ও পুরাতন খামার সাদেক এগ্রো অনেক আগে থেকেই ‘লাইভ ওয়েট’ হিসাব করে পশু বিক্রি করছে। তবে এবার বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। কারণ এই পদ্ধতিতে পশু কিনে মাংসের পরিমাপটা পাওয়া যায়। সাদেক এগ্রোর কর্মকর্তা শাহরিয়ার পরশ এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, ‘লাইভ ওয়েটে ২০০ কেজি থেকে ৩৯০ কেজি ওজনের গরু ৩৭৫ টাকা কেজি, ৪০০ কেজি থেকে ৪৯০ কেজি পর্যন্ত ৪২৫ টাকা কেজি, ৫০০ কেজি থেকে ৫৯০ কেজি ৪৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আর ৬০০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১৩৫০ কেজির পশুগুলোর কেজি দরে নয়; এগুলো পছন্দের ওপর নির্ভর করে বিক্রি হয়।’

গত কয়েক বছর থেকেই লাইভ ওয়েটের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। যদিও তখন এই ব্যবস্থা তেমন জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু চলতি বছর করোনাভাইরাসের কারণে এই মাধ্যম বেশ সাড়া ফেলেছে। ক্রেতারা ঘরে বসেই গরুর ওজন জেনে দরদাম করতে পারছেন। অনলাইনে ওজন এবং নিট মাংস কত কেজি হবে এসব বের করে দেয়ার কারণে অনেকে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) গাবতলী হাট থেকে গরু কিনেছেন মিরপুরের আবদুল কাদের। গরু কেনার সময় তিনি ফিতা দিয়ে মেপে নিয়েছেন। ব্যাপারী এবং ক্রেতা দুজনই ফিতার হিসাব বোঝেন। গরুর লাইভ ওয়েট মাপার পর তারা হিসাব করে দেখলেন, গরুটির সাড়ে তিন মণ মাংস হবে। পরে ৭০ হাজার টাকায় গরুটি কেনেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, আমার গরুর মাংসের কেজি পড়ল ৫০০ টাকা। এতে তিনি জিতেছেন বলে মনে করেন। কারণ কোরবানির গরু মাংস হিসাবে ও বছরভেদে কেজি ৭০০-৮০০ টাকাও পড়ে।

ওজন পদ্ধতির বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দিনেশ চন্দ্র বলেন, ‘ওজন দরে গরু বিক্রির ধারণাটি নতুন হলেও এটি বেশ চমৎকার ও গরু কেনার একটি ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ক্রেতাদের ঠকার সুযোগ থাকছে না। সাধারণত ১০০ কেজি ওজনের একটি গরু থেকে ৬০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। বাকিটা নাড়িভুঁড়ি। তাই এটা মাথায় রেখেই মাপটা করতে হয়।’

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, ক্রেতাদের সুবিধার্থে লাইভ ওয়েটে অনেকেই বিক্রি করছে। তবে এই পদ্ধতিতে যদি ক্রেতারা সন্তুষ্ট না থাকেন সরাসরি দেখেও কিনতে পারেন। বর্তমানে সকল খামারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু প্রদর্শন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন গরু কিনলে দুই সপ্তাহ খামারেই পরিচর্যা করা হবে। ফলে আরও বাড়তি ৫-১০ কেজি ওজন যোগ হবে। তাই এখন গরু ক্রয় করাই সুবিধাজনক।

পশুর লাইভ ওজন বের করার নিয়ম জানা থাকলে একজন খামারি ও ক্রেতা বুঝতে পারেন পশুর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। কীভাবে গরুর লাইভ ওজন নির্ণয় করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. জাকের উল্লাহ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গরুর আনুমানিক ওজন বের করতে আপনার প্রয়োজনীয় উপকরণ যা যা লাগবে, তা হলো-এক. গজ বা ফিতা, দুই. ক্যালকুলেটর। এই দুইটা জিনিস থাকলেই আপনি বের করে নিতে পারবেন আপনার গরুটির আনুমানিক ওজন। গরুর ওজন নির্ণয়ের জন্য আপনাকে কয়েকটি কাজ ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হবে।

যেভাবে শুরু করবেন-

আপনি যে গরুটার ওজন নির্ণয় করতে চাচ্ছেন, সেই গরুকে প্রথমে সোজা করে দাঁড় করান। সকালে গরুকে খাবার দেয়ার আগে ওজন নেয়া উত্তম। এতে সঠিক ওজন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। গরুর বুকের বেড় কত ইঞ্চি তা বের করতে হবে এবং লেজের কাছে হাড় থেকে শুরু করে সামনের পায়ের জোড়ার গিট পর্যন্ত ফিতা ধরে দৈর্ঘ্য বের করতে হবে।

গরুর ওজন মাপার সূত্র : গরুর দৈর্ঘ্য X বুকের বেড় X বুকের বেড়/৬৬০

ধরুন, আপনার গরুটির দৈর্ঘ্য ৫১ ইঞ্চি এবং বেড় ৫৬ ইঞ্চি। তাহলে গরুর আনুমানিক ওজন হবে (৫১X৫৬X৫৬)/৬৬০ = ২৪২.৩৩ কেজি.

ডা. মো. জাকের উল্লাহ বলেন, একটি পশুর যে লাইভ ওয়েট হবে তা থেকে ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ মাংস পাওয়া সম্ভব। তবে অভিজ্ঞ কসাই দিয়ে গরু কাটলে লাইভ ওয়েটের ৬০ ভাগ মাংস নিশ্চিত পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

Share: