যুগের চিন্তামণি ড. নেয়ামত উল্লা ভূঁইয়ার “এখানে সকাল হয় রাত পোহায় না” কাব্যগ্রন্থের স্বাতন্ত্র্য চেতনা – অধ্যাপক ডক্টর দিপু সিদ্দিকী

ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া রচিত “এখানে সকাল হয়, রাত পোহায় না” নিছক একটি কাব্যগ্রন্থ নয়, এটি একটি সময়ের কণ্ঠস্বর, এক অনন্য জীবনদর্শনের রূপান্তর। এই গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা যেন পাঠককে হাত ধরে নিয়ে যায় আত্মজিজ্ঞাসার গভীরে, সমাজ-মানবজগত-চেতনাস্রোতের রন্ধ্রে। জীবনের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি বোধ, প্রতিটি দ্বন্দ্বকে তিনি চিত্রিত করেছেন সূক্ষ্ম অথচ সহজ শব্দশিল্পে।

 

এটি একটি দার্শনিক কাব্যগ্রন্থ, যেখানে কবিতার ভাষায় ধরা পড়ে জীবনের আলো-আঁধারির বিপুল বৈচিত্র্য। কবি যেভাবে মানবজীবনের সত্য-মিথ্যা, প্রেম-বিরহ, নিঃসঙ্গতা-আশা, সংগ্রাম-আত্মোপলব্ধি, আত্মপ্রকাশ-আত্মনিবেদন, বিশ্বাস-প্রতারণা, আনন্দ-বেদনা—সবকিছুকে একাত্ম করেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।

তাঁর কবিতা শুধু অনুভবের নয়, বোধেরও। প্রতিটি শব্দে, ছন্দে, চিত্রে তিনি দর্শনের এমন এক স্বাতন্ত্র্য নির্মাণ করেছেন যা সমকালীন বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। তাই পাঠকের কাছে এটি হয়ে ওঠে এক অনুভবময় পাঠ-অভিজ্ঞতা—যেখানে রোমান্স, বাস্তবতা ও আত্মার আলাপন এক হয়ে যায়।

ড. নেয়ামত উল্লাহকে এ যুগের “চিন্তামণি” বলা হয় নিছক অভিধায় নয়, এটি তাঁর জীবনচর্চা ও সাহিত্যদর্শনের এক বাস্তব স্বীকৃতি। কবির অন্বেষণ মানুষের আত্মার গভীরে, সেখানে যেখানে প্রশ্ন সহজ, উত্তর জটিল, এবং বিশ্বাস এক ধ্যানমগ্ন অভিপ্রায়।

৩১১ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি পাঠকের সামনে খুলে দেয় এক অলৌকিক দরজা—যেখানে কবিতার ছায়ায় দেখা যায় মানুষের মুখ, সমাজের প্রতিচ্ছবি, একক ও সামষ্টিক অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব।

বিষয়ের বিস্তার ও বিন্যাস:

গ্রন্থটিতে প্রেম, সমাজ, রাজনীতি, আত্মোপলব্ধি, আধ্যাত্মিকতা, ঈশ্বর ও সময়চেতনা—সবই নিজস্ব স্বরে উচ্চারিত হয়েছে। “মানুষ”, “প্রেম না হলে”, “বিবেকের লজ্জা”, “আত্মোপলব্ধি”, “মায়ের অশ্রু যখন অস্ত্র”, “সাত আসমানের ভর”, “জীবনের জয়ধ্বনি”, “স্মৃতি কাতরতা”, “মান ভাঙাবার গান”, “তোমার হাসি-কান্না”—প্রতিটি কবিতার নামেই যেন একটি গল্প, একটি চেতনার ঝলক খেলে যায়।

কাব্যিক গুণ ও ভাষাশৈলী:

তার সহজ-সরল ভাষার আড়ালে যে গভীরতা, তা পাঠককে প্রথম পাঠেই টেনে নেয়। শব্দের বিন্যাসে যে সংগীত, ছন্দে যে শুদ্ধতা, তা পাঠককে আবিষ্ট করে রাখে।

এই কাব্যগ্রন্থ তাদের জন্য, যারা শব্দের মাঝে জীবন খোঁজেন, যাদের কাছে কবিতা শুধুই অনুভব নয়, আত্মার প্রতিবেদন।

“এখানে সকাল হয় রাত পোহায় না” এর কয়েকটি কবিতাংশ তুলে ধরে তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি, যা পাঠকের ভাবনার জগতে কিঞ্চিত হলেও আলোকপাত করবে।

কবিতাংশ:

“প্রশ্ন সহজিয়া” (পৃষ্ঠা: ১৮)

“প্রশ্ন করি – মানুষ কেনো মরে?

কেউ কি দিতে পারে সহজ উত্তর?

জীবনের যতো জটিল সমীকরণ,

প্রতিটিই যেন প্রশ্নের সরল ছায়া।

তবুও মানুষ সহজ হতে চায় না।

প্রশ্নের মুখোমুখি নয়, দেয় ব্যাখ্যার পাহাড়।

আমি চাই—একটু সহজ হতে,

প্রশ্ন সহজিয়া হয়ে বাঁচতে।”

এই কবিতাংশে কবি জীবনের মৌলিক ও শাশ্বত প্রশ্নগুলোকে গভীর সরলতায় উপস্থাপন করেছেন। “মানুষ কেনো মরে?”—এই একটিমাত্র প্রশ্নে কবি আমাদের অস্তিত্ব ও মৃত্যুবোধের মুখোমুখি দাঁড় করান। এখানে “প্রশ্ন সহজিয়া” শব্দবন্ধটি কেবল কাব্যিক নৈপুণ্য নয়, বরং তা দর্শনীয় অবস্থানও। কবির বক্তব্য, মানুষ প্রশ্নের সহজ উত্তর না খুঁজে তা জটিল ব্যাখ্যায় আড়াল করতে চায়। কিন্তু কবি চান সরলতাকে ধারণ করতে, প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সহজতার মধ্যে গভীরতাকে উপলব্ধি করতে।

এখানে ‘সহজ’ মানে নয় সরলবুদ্ধি, বরং সেই অন্তর্দৃষ্টি যা অহংকার ও ক্লান্ত যুক্তির আবরণ ছিন্ন করে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়।

এই কবিতাংশে কবি জীবনবোধের যে আভাস দেন তা সহজিয়া দর্শনের (লালনীয় মানবতাবাদী চিন্তা) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রশ্ন এবং উত্তর নয়, বরং প্রশ্নের ভেতরের চিন্তা ও স্বীকারোক্তিই কবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটি পাঠককে আত্মজিজ্ঞাসার পথ ধরে নিয়ে যায়।

এভাবে প্রতিটি কবিতা কেবল অনুভূতির প্রকাশ নয়, এক একটি দর্শনের আখ্যান—যেখানে প্রেম, বেদনা, আত্মোপলব্ধি এবং সমাজ-বাস্তবতা মিলে গড়ে তোলে এক বুদ্ধিদীপ্ত ও হৃদয়গ্রাহী কাব্যপট।

মানুষ – পৃষ্ঠা ৪ কবিতাটিতে বলা হয়েছে,

“আমি বিশ্বাস করি, মানুষ খারাপ না

মানুষের মাঝে থাকে এক আলো,

যা অন্ধকারেও জ্বলে।”

এই অংশে কবি মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা আলোর কথা বলেছেন—এ আলো মানবিকতার, সহানুভূতির, বিবেকের। কবি বিশ্বাস করেন, মানুষ স্বভাবগতভাবে খারাপ নয়। সমাজ, পরিস্থিতি কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত মানুষকে পথচ্যুত করতে পারে, কিন্তু তার অন্তরে এক জ্যোতি থাকে যা অন্ধকারে আলোর দিশা দেখাতে পারে। এ বিশ্বাস থেকেই কবি জীবনের নানা পঙ্কিলতায়ও মানুষের প্রতি আস্থা হারান না।

প্রেমের ইশতিহার -পৃষ্ঠা ৭

“কেউ বলে প্রেম মানে ফুলের সুবাস

কেউ বলে প্রেম মানে শুধু যন্ত্রণা—

তবে কি প্রেমের কোনো ইশতিহার নেই?”

এই অংশে কবি প্রেমের বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরেছেন। কেউ প্রেমকে রূপকথার মত সুন্দর বলে, আবার কেউ এটিকে কষ্টের প্রতীক মনে করে। কবি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রেমের কি তবে কোনো নির্ভরযোগ্য সংজ্ঞা নেই? এ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে তিনি প্রেমকে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির ওপর নির্ভরশীল বলে প্রতিষ্ঠিত করেন। এটি এক ধরণের দার্শনিক অনুসন্ধান—যেখানে প্রেম কোনো একক ব্যাখ্যায় আবদ্ধ নয়।

আজব আঁধার -পৃষ্ঠা ১১

“পথে ঘুমায় মানুষ

আর প্রাসাদে জেগে থাকে নিষ্ঠুর রাজা।”

এই দুটি পংক্তির মাধ্যমে কবি চরম বৈষম্য এবং ন্যায়বিচারের অভাব ফুটিয়ে তুলেছেন। একজন সাধারণ মানুষ দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পথেই ঘুমিয়ে পড়ে, অথচ সমাজের ক্ষমতাধররা প্রাসাদে বসে কেবল উপভোগ করে—তাদের মানবিকতা হারিয়ে যায়। ‘নিষ্ঠুর রাজা’ এক প্রতীক—অসহায়দের দুঃখ যাদের স্পর্শ করে না। এই কবিতাংশ আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরে।

আর নয় রাজা-রাণির গল্প – পৃষ্ঠা ১৪

“সখিনা মরেছে কেরোসিনে আগুন দিয়ে

তিনদিন খায়নি কিছু—তবু কেউ জানেনি।”

এই হৃদয়বিদারক চিত্র সমাজের এক নিষ্ঠুর নির্মমতা তুলে ধরে। দরিদ্রতার কারণে আত্মহননের ঘটনা আমাদের সমাজে ঘনঘন ঘটে, কিন্তু তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। ‘তিনদিন খায়নি কিছু’—এই পংক্তিটি শুধু খাদ্যাভাবে নয়, একটানা অবহেলার প্রতীক। কবি এই অংশের মাধ্যমে সমাজের অবিচার ও নির্লজ্জ উদাসীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছন।

এখানে সকাল হয় রাত পোহায় না পৃষ্ঠা ১৭

“ওদের ঘরে বসন্ত মানে সস্তা জামা

আমাদের ঘরে বসন্ত মানে কাজ হারানোর ভয়।”

এখানে কবি ঋতু পরিবর্তনের সামাজিক বৈষম্যমূলক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন। কিছু মানুষের কাছে ‘বসন্ত’ মানে আনন্দ, কেনাকাটা, উৎসব—অন্যদিকে গরিব মানুষের কাছে এই ঋতুই জীবিকার অনিশ্চয়তা বয়ে আনে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ভিন্ন বাস্তবতা কবি অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে তুলে ধরেছেন। এ কবিতাংশ দারিদ্র্যের বাস্তবতা ও শ্রেণি বৈষম্যের একটি করুণ দলিল।

“এখানে সকাল হয়, রাত পোহায় না” একটি কাব্যিক জীবনযাত্রা। এটি পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার পাশাপাশি সাহিত্যের দরবারেও এক গৌরবময় সংযোজন। ভবিষ্যৎ সাহিত্যালোচনায় এই গ্রন্থের বিশেষ স্থান থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই।

ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়ার চিন্তা ও কবিতার সংমিশ্রণে বাংলা কবিতা পেল এক ব্যতিক্রমধর্মী বোধগম্য, আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক গ্রন্থ। এই বই পাঠ করলে কেবল কবিতা পড়া হয় না—পড়তে হয় নিজেকে, উপলব্ধি করতে হয় অস্তিত্বকে।

তাঁর রচিত “এখানে সকাল হয় রাত হয় না” একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক ভাবনার কাব্যগ্রন্থ, যা গভীর জীবনবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে গঠিত। তাঁর দর্শনের স্বাতন্ত্র্য উপলব্ধি এবং বোধগম্যতার প্রয়োজনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।।

১. জীবন ও সত্যের অনুসন্ধান

তাঁর চিন্তা দর্শন মূলত মানুষের আত্মানুসন্ধান ও অস্তিত্বের প্রশ্ন নিয়ে কাজ করে। কবি এখানে জীবনকে এক রহস্যময় ভ্রমণ হিসেবে দেখেছেন, যেখানে মানুষ চিরকাল সত্যের সন্ধান করে যাচ্ছে। কবি জীবন ও যুদ্ধ এবং ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য স্পষ্ট করেছেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। তার কর্ম এবং জীবনাচরণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মানবকল্যাণ। মানবকল্যাণের বৈচিত্র্যময় ধারা সৃষ্টিতে তিনি থাকেন ধ্যানমগ্ন তাই এই বিরল প্রতিভাবান এই কবিকে বলা হয় এযুগের চিন্তামণি। গ্রুপ শেষে বলা যাবে যুগ শ্রেষ্ঠ চিন্তাগুলি কিনা সেটি ভিন্ন বিষয় ।সময়ের পরিক্রমায় সে বিচার নিশ্চয়ই হবে।

 

কবি ডক্টর নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া রচিত “এখানে সকাল হয় রাত পোহায় না” কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা পাঠককে নিয়ে যাবে এক অন্যরকম জগতে কখনো রোমান্সের কোমলতায়, কখনো ব্যথার গভীরে, কখনো জীবনদর্শনের নির্মল উপলব্ধিতে। সহজ-সরল ভাষার মোড়কে লুকিয়ে থাকা গভীর চিন্তার বিন্যাস, ছন্দের মৃদু স্পর্শ আর শব্দের জাদু মিলিয়ে হয়ে উঠেছে এক আবেগঘন কাব্যসফর। বইয়ের কবিতাগুলোর মধ্যে কিছু কবিতা আধ্যাত্মিকতা, দর্শন, এবং জীবনের অর্থ নিয়ে ভাবনাকে উস্কে দেয় এবং পাঠককে নিজের অস্তিত্ব এবং বিশ্ব সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে প্ররোচিত করে; পাঠককে যুক্ত করে নেয় অবলীলায়।

যারা কবিতার ছন্দে হারিয়ে যেতে ভালোবাসেন, শব্দের গভীরতায় জীবন খুঁজে পান, তাদের জন্য এই বই হবে এক অনবদ্য পাঠ-অভিজ্ঞতা। প্রতিটি পৃষ্ঠায় লুকিয়ে আছে নতুন এক গল্প, নতুন এক বোধ, নতুন এক অনুভূতি।

এখানে সকাল হয় রাত হয় না

এই কবিতায় কবি দুটি সমাজের তুলনা করেছেন-একটি যেখানে ঋতুর পরিবর্তন আনন্দ ও উৎসব নিয়ে আসে, এবং অন্যটি যেখানে ঋতুর পরিবর্তন দুঃখ ও কষ্টের বার্তা নিয়ে আসে। তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে সমাজের বৈষম্য মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। কবিতাটি একটি সামাজিক সমালোচনা, যা সমাজের অসাম্য, অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। কবি আশা করেন, এই অন্ধকার কাটিয়ে সমাজে আবার আলো ফিরে আসবে।

আর নয় রাজা-রাণির গল্প

এই কবিতায় কবি বাস্তব জীবনের কষ্ট, দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন সখিনার মতো গুণবতী নারীকে দারিদ্র্যের কারণে আত্মহত্যা করতে হয়? কেন রাজু-রানুর মতো শিশুরা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়? কেন মানুষ ফুটপাতে রাত কাটায়? কবি এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে সমাজের অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বাস্তবতার মুখোমুখি হতে আহ্বান করেছেন।

আজব আঁধার

এই কবিতায় কবি সমসাময়িক সমাজের অস্থিরতা, হিংসা, লোভ ও নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে সমাজে হিংসা, দ্বন্দ্ব, লোভ ও স্বার্থপরতা মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধকে গ্রাস করছে। কবিতাটি একটি সতর্কবার্তা, যা সমাজের এই অন্ধকার দিকগুলোর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চায়। কবি আশা করেন, এই আঁধার কাটিয়ে সমাজে আবার আলো ফিরে আসবে।

প্রেমের ইশতিহার

এই কবিতায় কবি প্রেমের সংজ্ঞা ও তার সার্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চান, প্রেমের কি কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা বা শাস্ত্র আছে? প্রেম কি সবার কাছে একই রকম? কবির মতে, প্রেম একটি ব্যক্তিগত ও গভীর অনুভূতি, যা কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় আবদ্ধ নয়। তিনি প্রেমের ইশতিহার রচনার আকুতি প্রকাশ করেন, যা প্রেমের প্রকৃত রূপ ও গভীরতা তুলে ধরবে। কবিতাটি প্রেমের জটিলতা, তার অভিব্যক্তি ও উপলব্ধির বহুমাত্রিকতা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনার প্রতিফলন।

মানুষ

এই কবিতায় কবি মানুষের প্রতি অপরিসীম আস্থা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি মানুষ মূলত ভালো, কারণ স্রষ্টা তাকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’-সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কবি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান এবং তার অন্তর্নিহিত মানবতাবোধের প্রতি আস্থা রাখেন। তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরে, যেমন-ফুটপাত, বস্তি, কারখানা, রাজনীতি, এমনকি অপরাধের জগতেও মানুষের অস্তিত্ব ও মানবতাবোধের সন্ধান করেন। কবির এই অনুসন্ধান প্রমাণ করে যে, মানুষের প্রকৃত স্বরূপ তার অন্তরে লুকিয়ে থাকে, যা ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মানবিকতায় প্রকাশ পায়।

প্রেমের ইশতিহার / ১৩ মানুষ / ১৪ মন ভাঙার মরমিয়া / ১৬ কণ্ঠলগ্নসমুদ্র স্নান / ১৭ প্রশ্ন সহজিয়া / ১৮ জীবন-নদী /১৯ পরমের কাছে নিবেদন / ২০ খাঁটি উন্মত / ২১ আত্মোপলব্ধি / ২২ হার মানা হার / ২৩ দরদ / ২৪ প্রতিরোধের আবাহন / ২৫ বিবেকের লজ্জা / ২৬ রব রাজি যেই ঈদে / ২৭ বিশ্বাসের জোর / ২৯ অশেষ আঁধার / ৩০ যুগল আয়োজন / ৩১ তুমিই হবে / ৩২ লোক হাসানো কথা / ৩৪ শ্রেষ্ঠতম ঈদ / ৩৫ ঘামের দাম / ৩৬ চকিত পাহারা / ৩৭ দলিত জীবন-প্রেম / ৩৮ অবাধ্যতার শাপমুক্তি / ৪০ জীবনের গান / ৪১ তোমার ছন্দ তালে / ৪২ আজব আঁধার / ৪৩ প্রিয়ার হাসি / ৪৪ মন্দ স্মৃতি / ৪৫ রূপের বাহার / ৪৬ চাঁদের কলংক / ৪৭ তোমার লীলা / ৪৮ শুধুই শুনবো / ৪৯ তোমার বসতি / ৫০ আকাশের রূপালি ফাঁদ / ৫১ রূপরাণির ফাঁদ / ৫২ জীবনের জয়ধ্বনি /৫৩ মানুষের গান / ৫৪ চোখের জলের ঢল / ৫৫ নিঃসঙ্গের হাহাকার / ৫৬ সাত আসমানের ভর / ৫৭ লোকান্তের পারাপার / ৫৮ প্রেম না হলে / ৫৯ আমার সোনার দেশ / ৬০ বোধোদয় / ৬২ পান্থজনের সখা / ৬৪ বিদ্রোহী কবি’র প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা / ৬৬ সুখের পায়রা/ ৬৮ নব-সূর্যের সংরাগে / ৬৯ চেতনাবেগ / ৭০ শেষ চুমুক / ৭১ বাদী-প্রতিবাদী / ৭২ স্বর্ণালি সুপ্রভাত / ৭৩ পোড়া মন / ৭৪ বলতে এমন দ্বিধা / ৭৫ মান ভাঙ্গাবার গান / ১১০ মরণ নয়, স্মরণ / ৭৬ বহু কাঙ্ক্ষিত ভোের / ১১১ খেলাঘর / ৭৭ দ্বিধার দণ্ড / ১১২ চোখের সাগর / ৭৮ খেয়ালি অভিযাত্রা / ১১৩ তোমার কৃপা / ৭৯ না বলা কথা / ৮০ দ্বিধান্বিত প্রেম / ৮২ এতোটুকু হাসি হাসো / ৮৩ রূপালি চাঁদ চাই না / ৮৪ শুধুই প্রেমের কথা / ৮৫ মন দিয়েছি যাওে / ৮৬ ধনুকভাঙ্গা পণ / ৮৭ মনের ব্যাকুলতা / ৮৮ আমার দুঃখের দরদি / ৮৯ দুর্বিনীত সংগীত / ৯০ গানের খোঁজে / ৯১ ক্ষণিকের অতিথি / ৯২ আমার বিলয় / ৯৩ প্রকৃতি ও মন / ৯৪ কুলবধূর প্রতি / ৯৫ ভাবনার পাখনা / ৯৬ মানুষ নকল, প্রেম আসল / ৯৭ রূপের শংসা / ৯৮ লাজুক কন্যা / ৯৯ দারিদ্র্যের মোহর / ১০০ স্বপ্ন-ভরা দিন / ১০১ উড়ো-উড়ো মন / ১০২ জীবনের মানে / ১০৩ অথৈ সাগর / ১০৪ কষ্টে কষ্টে কষ্টি পাথর / ১০৫ সুরের ধারা / ১০৬ মনের মানুষের খোঁজে / ১০৭ আলাপ / ১০৮ কালের ব্যবধান / ১০৯ উত্তরে পাহাড় / ১১৪ প্রাণের তান / ১১৫ নৈকট্য সংকট / ১১৬ নিষ্ফল প্রেম/ ১১৭ সুদূরের দোল/ ১১৮ কথা কলি/ ১১৯ পাগল প্রাণ / ১২০ অবগুণ্ঠিত রূপ / ১২১ রহস্য-লিপিকা / ১২২ চোখের জলে নিভে না বুকের জ্বালা/১২৩ নজর নামের খেয়া / ১২৪ কথা রাখোনি / ১২৫ ভাবনা বিভ্রাট / ১২৬ তুল্য মূল্য / ১২৭ মাধুরি-মাখা ক্ষণ / ১২৮ পথ চেয়ে জাগা চোখ / ১২৯ উষর জীবন / ১৩০ বিসদৃশ বিনিময় / ১৩১ বোঁটার অভিশাপ / ১৩২ রূপের হাট / ১৩৩ মায়ের অশ্রু যখন অস্ত্র / ১৩৪ পারের কড়ি / ১৩৫ প্রেমের প্রথম শিহরণ / ১৩৬ রঙ্গিলা রে / ১৩৭ মন পবনের নাও/১৩৮ আর নয় রাজা-রাণির গল্প / ১৩৯ আর এলে না / ১৪০ প্রীতির স্মৃতি / ১৪১ বাঁকা নজর / ১৪২ কালের কলস / ১৪৩ কথা দাও/ ১৪৪ ও আমার প্রিয়ে / ১৪৫ ঝংকার / ১৪৬ তোমার হৃদয়ে লিখি / ১৪৭ বিষণ্ণতার বিদায় / ১৪৮ কোন চাওয়া নেই / ১৪৯ সুরের পাখনা / ১৫০ চলে যাব বললেই / ১৫১ মুখ ঢেকো না/ ১৫২ কলংক/ ১৫৩ রূপ ঢাকা যায় না / ১৫৪ পাখির নাম ভালোবাসা / ১৫৫ পিরিতির আগুন / ১৫৬ বিলীন / ১৫৭ এক নীড়, এক ঠিকানা / ১৫৮ স্মৃতি কাতরতা / ১৫৯ বাঁচবার আশা / ১৬০ তাইতো জেগে আছি / ১৬১ যেয়ো না সাথি / ১৬২ ঠিকানা দিলে না / ১৬৩ পাড়ি দেব সাত সমুদুর / ১৬৪ চপল ভাবনা / ১৬৫ তোমার হাসি-কান্না / ১৬৬ রঙিন পৃথিবী / ১৬৭ কেবলই কান্না / ১৬৮ তোমার চাঁদমুখ / ১৬৯ ভালোবাসার ভাব / ১৭০ নারী /১৭১ স্বর্গ রচনা / ১৭৭ তুমিহীনের আকুতি / ১৭৮ তোমার হাসির জোছনা / ১৭৯ দ্বিধার নিপাত / ১৮০ প্রেমের বিকি-কিনি / ১৮১ আমি পতাকার লাল হব শহীদের খুনে/১৮২ এখানে সকাল হয়, রাত পোহায় না / ১৮৫ কী এক দুঃসময় / ১৮৮ নিরুপায়ের নিবেদন / ১৮৯ নারী নামের মানুষের কথা / ১৯১ বাঁধনহারা / ১৯৩ নূরে মুজাসসাম / ১৯৫ না’তে রাসূল/ ১৯৭ ভোগ নয়, ত্যাগ চাই / ১৯৯ নিদ্রা এবং স্বপ্নের আহুতি / ২০১ মুক্তির আকুতি / ২০২ প্রেমের সমর্পণ / ২০৫ কসরত/ ২০৬ লজ্জা/ ২০৭ নিন্দা ও প্রেম/ ২০৮ স্বপ্ন রচনা / ২০৯ অপেক্ষার খেয়া / ২১০ জীবনের ছক ২১২ কারবালা / ২১৩ ফুটফুটে ফুলকি / ২১৪ ঈশ্বর / ২১৫ নিদারুণ বিড়ম্বনা / ২১৬ মারের সাগর / ২১৮ অশমিত আগুন / ২২০ কবিতার নির্বাসন / ২২১ মানুষের কষ্ট, আমার কষ্ট / ২২৩ বেদনার ভার / ১৭২ কাঙ্ক্ষিত বার্তা / ১৭৩ প্রথম দেখা / ১৭৪ অতৃপ্তি/১৭৬ মাটি হবার সাধ / ২২৪ স্মৃতি অম্লান / ২২৫ বীরত্বের হাসি / ২২৭ মৃত ভুবন / ১৭৫ পারমাণবিক গোলা / ২২৮ মানুষ / ২৩০ কল্পলতা / ২৩৮ পরিচয়ের পতাকা / ২৩১ কোভিড শেষে / ২৩৯ ফানুস কন্যা / ২৩২ কবিতা নিয়ে কবিতা / ২৪০ থেকে যেতে চাই / ২৩৩ কবির স্বভাব / ২৩৪ কাব্য কণা ২৪১ একান্ত আরাধ্য / ২৩৫ কবিতা কণিকা ৩০৩ পতনের পরিতাপ / ২৩৬ মতলবি মুক্তমত / ২৩৭ ।

৩১১ পৃষ্ঠার এই বইটিতে ২০৩ টি কবিতা স্থান পেয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন । ২০২৫ সালের বইমেলায় এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠজগতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এটা নিছক একটি কাব্যগ্রন্থ নয় একটি কাব্য সমগ্র বলা যায়। লেখক ও কবি গ্রন্থের সংখ্যা না বাড়িয়ে একটি বৃহৎ গ্রন্থে তাঁর কবিতা সমগ্র পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন অকৃপণ হৃদয়ে। চলুন তাঁর কয়েকটি কবিতায় চোখ বুলিয়ে নেই।

প্রেমের ইশতিহার

প্রেমের জন্যে এতো যে আকুতি, হৃদয়ের হাহাকার, কেউ কি এখনো লিখতে পেরেছে প্রেমের ইশতিহার?

প্রেমের আসল কোন সংজ্ঞাটা হয়েছে সর্বজনীন! হৃদয়ের সব সিংহাসনে কি সে প্রেম হয়েছে আসীন?

সকলের কাছে গ্রহণীয় প্রেমের আছে কি কোনই শাস্ত্র? প্রেম জয় করার গোলা-বারুদের রয়েছে কি ক্ষেপনাস্ত্র?

তোমাদের এই কথা বলাবলি ফুরোবে না কোনো দিন, ভূমিকার চরে আটকাবে খেয়া, উপসংহার হবে বিলীন।

সংক্ষেপে মূল কথা সেরে নাও, মঞ্জিল এখনো দূরে, তা না হলে কথার স্রোতেরা আবার ভূমিকাতে যাবে ঘুরে।

 

মন ভাঙার মরমিয়া

আমার মন ভেঙেছে মনের মানুষ; মনের ব্যথা কই কারে, সে কথা শোনার মানুষ নেই যে বিশ্ব সংসারে।

 

আমি একা মনের কোণে, লুকাই ব্যথা সংগোপনে, মনকে জানাই মনের ব্যথা মনের গহন অন্দরে-সে কথা শোনার মানুষ নেই যে বিশ্ব সংসারে।

 

দীর্ঘশ্বাসের বোঝা বয়ে, মন যে থাকে কাতর হয়ে, দিন যত যায় মনের দুঃখের সীমা ততো যায় বেড়ে-সে কথা শোনার মানুষ নেই যে বিশ্ব সংসারে।

ভাঙা ঘাটে খেয়া লয়ে, মন শুধু রয় ব্যাকুল হয়ে, মনের মানুষ যদি ফিরে সেই পুরানো বন্দরে-সে কথা শোনার মানুষ নেই যে বিশ্ব সংসারে।

কণ্ঠলগ্ন সমুদ্র স্নান

না, আমি যাব না, যেতে চাইলে তোমরা যাও, তিয়াসে তড়পানো ভূচরেরা গিয়ে জলের পাঁজরে জড়াও।

আমি জানি, যারা দিন রাত জলের আকালে ভোগে তারাই খরগোসের মতো ব্যস্ত হয়ে ছোটে সাগর সম্ভোগে।

আমার বাঁ পাঁজর ঘেঁষে কণ্ঠলগ্ন হয়ে আছে উত্তাল সাগর; যার বুক জুড়ে বয়ে যাওয়া কাল-বোশেখি ঝড় প্রাণের কী আকুতি ঢেলে আমাকে সেই ঝঞ্ঝার সাথি হতে বলে নিস্তবতার কোলাহলে; তার আকুতি উপেক্ষার সাধ্য নেই আমার। বিশ্বাস করো, কোনো আদম সন্তানের এমন বুকের পাটা নেই কিংবা দমের শক্ত পাটাতন নেই নিষ্কম্প দাঁড়িয়ে থাকবার; অথবা দম টেনে টেনে নির্বিকার পাশ ফিরে শুয়ে থাকবার।

পাহাড়ের পাদদেশে সৈকত সহবাসে কী উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ে অকারণ উল্লাসে, একঝলক ঢেউয়ের শিস উষ্ণতার শিহরণে আমার পা ছুঁয়ে যেতে যেতে বলে, ‘এখন যৌবন যার, শরীর ঘেঁষে বয়ে যাওয়া সাগর সংগমের তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার, সেই সমুদ্রের অতলে রসাতলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ যৌবনমত্ত সাগরিকার শীৎকারের কাছে দখিনা সাগরের নির্ঘোষ নিতান্ত নস্যি, তবুও তোমরা যেতে চাও সেই অনুগত সমুদ্র জলের স্নানে কণ্ঠলগ্ন সাগরের মতো নয় যে অতোটা দস্যি।

আমার সমুদ্র স্নানের সুখ খুনসুটির খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধে মধুমা দস্যিপনায়,

এ ভাবেই সমুদ্র আর আমি ভরে উঠি কানায় কানায়।

কালের কলস

কালের কলস জল ঢালে না; ফল ঢালে, কর্মগুণে সে-ফল পাবে শেষ কালে। মন যদি হয় কর্মে অলস; ফলে ভরা রসের কলস লুটে নিয়ে তুলবে ঘরে দস্যু-চামার-চন্ডালে।

 

ফুল-যে ফোটে কর্ম-গাছে, ঘামের-জলে সে গাছ বাঁচে, ফল-যে ফলে শ্রমের ফুলে, জীবন তরুর মগডালে-কর্মগুণে সে-ফল পাবে শেষ কালে। যার খাটুনি যত খাঁটি, উর্বরা তার জমির মাটি, ফসল ফলায় পরিপাটি, গুণ থাকে যার লাঙ্গলে-কর্মগুণে সে-ফল পাবে শেষ কালে।

যতোই ফলুক থোকায় থোকায় বোকার ফসল খায় যে পোকায়; ক্ষেত ভরে যায় পঙ্গপালে, আগাছা আর শৈবালে-কর্মগুণে সে-ফল পাবে শেষ কালে। মন রে তুমি হও সচেতন, ফসল ফলাও মনের মতন করলে যতন মিলবে রতন, ফসল কাটার কাল এলে-কর্মগুণে সে-ফল পাবে শেষ কালে।

অবিচল পাটাতন

টলমলে পা নিষ্কর্মা-যুগের সন্ধিক্ষণে, সাফল্য পেতে চাই দৃঢ়পদ অবিচল পাটাতনে।

পতনের পীড়া

উত্থান নিঃশব্দে হয়; সশব্দে পতন, উত্থানে অপার সুখ; পতনে পীড়ন।

উত্থান গড়ে, রচে, করে নির্মাণ, মৌন বিনয়ে ঘটে শুভ উত্থান।

পতন ভাঙ্গন ঘটায়, করে ছারখার, ডংকা বাজিয়ে ভাঙ্গে সব অহংকার।

উত্থানের আহ্লাদে হলে বেপরোয়া, অর্জিত ধন-মান-যশ: যায় খোয়া। পতিতের কোন কাজে আসে না অতীত, পতনের কালে মতি হয় বিপরীত। উত্থানের আলেয়ায় খেয়ো না ধোঁকা, উত্থান-বীজে থাকে পতনের পোকা। কেউ তোমার উত্থান যদিও না জানে, পতনের শব্দ যায় প্রতি কানে কানে। উত্থান-বরে হও যত সক্ষম,পতনের পীড়া কিন্তু আরো নির্মম।

সংশয়

কার আশীর্বাদের বর্ষণের আশায় তাকিয়ে আছি ব্যগ্রতা ভরে, ইহলোকে সে কি রয়েছে লুকিয়ে, নাকি আছে কোন লোকোত্তরে?

মধুমিলন

এখন ঘড়িতে সময় ঠিক বারোটা; ঘণ্টা মিনিট সেকেণ্ডের তিনটে কাঁটা ঠায় বারোটার কোঠায় আঁটা। তোমার-আমার মিলন জোয়ারে তবে কেনই পড়বে ভাটা?

পরের হিত সাধন

হরি নাম জপে জপে দিন রাত যতো করো হরি কীর্তন, আত্মার শুদ্ধি ছাড়া পুণ্যের কানাকড়ি হয় না অর্জন। পরের হিতের সাধন জাগে যদি মনে, সে পুণ্যে ধন্য জীবন; শুদ্ধ আচরণে।

নিন্দা

যতো পারো আমার নিন্দা করো তাতে আমার কোনো ক্ষতি নেই, নিন্দার অভ্যাস হলে নিন্দাচর্চা ছাড়া তোমার আর গতি নেই।

শেষতক দেখবে

তোমার হীনমন্যতার যতি নেই আপন মূল্যবোধেও তোমার মতি নেই মানুষের সঙ্গে তোমার সম্প্রীতি নেই

আর এভাবেই মর্মবেদনা থেকে আমৃত্যু তোমার নিষ্কৃতি নেই

সভ্যতা

সভ্যতা কতটুকু আলো ছড়ালো, কতো জনপদে সেই ঢেউ গড়ালো!

পৃথিবীর কতো লোক পেলো সেই শুভালোক কতোটা সিক্ত হলো সভ্যতা রসে!

বিষণ্ণ হয়ে দেখি সে হিসেব কষে; সভ্যতা শূন্য পায় পাশ নম্বর দশে।

মানুষ

সব মানুষকেই আমার কাছে ভালো মানুষ বলেই মনে হয়, সচরাচর এ অনুভূতির ঘটে না তেমন বিশেষ কোনই ব্যত্যয়।

শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেন, ‘এটা তোমার নিতান্তই চারিত্রিক দুর্বলতা।’ আমি বলি, ‘সৃষ্টির সেরা জীবকে মন্দ ভাবা নিতান্ত অভব্যতা।

মানুষ ভালো হবে’ সেটাই পরম চাওয়া বিশ্বস্রষ্টার, এর অন্যথা হলে স্রষ্টার কোপানলে পড়বেই সেই দুরাচার।

মানুষকে মন্দ ভেবে আমি কেন বিপরীতে নিতে যাবো স্রষ্টার অভিসম্পাত, যেখানে স্রষ্টাই বলেন, মানুষই সৃষ্টির সেরা-তাঁর প্রিয় ‘আশরাফুল মাখলুকাত’।

অন্ধকার হোক না নিকষ, হোক না-সে আলোক নিধনের সশস্ত্র আততায়ী, আলো জ্বালাতেই থাকো; হোক তা যতোই ক্ষীণ, স্ফুলিঙ্গের মতো হোক যতো ক্ষণস্থায়ী।

আঁধারের সাধ্য নেই রোধ করে আলোর উন্মিলন, স্রষ্টার আলোক ছটায় যেহেতু সৃষ্ট এই সমগ্র ভুবন।

পরিচয়ের পতাকা

আমার বিরান বাস্তু-ভিটায় ঘাতকের অপঘাতে শ্বেত পায়রারা মরে থাকে চিৎ হয়ে ধুলোর আলিঙ্গনে, পরিচয়ের পতাকা দুমড়ে মুচড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে ভাঙ্গা ঠোঙ্গার মতো ঝুলে আছে ফণিমনসার কাঁটাবনে।

জানি না, এ কোন নরক থেকে ধেয়ে আসা সর্বনাশের আসুরিক আলামত! গাছের শাখায় শাখায় ঝুলে থাকা বাদুরের পাখনাগুলো গর্হিত পতাকার মতে ওড়ে পতপত।

তবে কি শেয়াল ও শকুনের খাদ্য হবে কবিদের আবেগের অবাধ উচ্ছ্বাস কিংবা জীবনের শ্বাস?

আমি তার কিছুই জানি না, হয়তো জানতেন অগ্রজ নমস্য কবি জীবনানন্দ দাশ।

আমরা অকাতরে বার বার দিয়েছি সীতার অগ্নিপরীক্ষা, আমাদের কেশাগ্র ছুঁতে পারেনি সন্দেহের লেলিহান শিখা।

মনে রেখো, হয়তো তুমি হতে পারো রাক্ষস রাবণ কিংবা দুর্যোধন পাপাচারী, আর আমাদের পতাকা কিন্তু পরমাত্মার আশীর্বাদ; দ্রৌপদীর অন্তহীন লীলাময়ী শাড়ি।

২৩১ পৃষ্ঠা

কবি ডক্টর নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া নিজ সম্পর্কে বলেন “কারো কারো এমন বিজ্ঞ অভিমতও রয়েছে যে, কেবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসের স্বতঃস্ফূর্ততায় কবিতা হয় না। ব্যাকরণসহ আরো নানান অনুষঙ্গ নাকি স্বাভাবিক কবি হয়ে ওঠার পূর্বশর্ত। তাজ্জব ব্যাপার তো! এত শাসন-বারণ মানলে সে আবার কেমন কবিতা? হ্যাঁ, কানুন মেনে কামান না দাগলে সর্বনাশ। কিন্তু কানুন না মেনে কবিতা লিখলে কীসের হা-হুতাশ? এত আইনের ধারায় পড়ে তো, বরং মাঠে মারা যেতে পারে ভাবের নির্যাস। কায়দা মানলে কবিতার ফায়দা কী? কানুন মানবে না বলেই তো সে কবিতা। নিগড়ে বাঁধলে কবিতা অঘোরে মরে। না, আমি স্বেচ্ছাচারী হতে বলছি না; মনের মতো করে মুক্ত হতে বলছি। অবাধে উৎসারিত হতে বলছি। ভাব, আবেগ, অনুভূতি, বোধ, চেতনা, শৈলী, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সুর, ছন্দ, তাল-লয়, স্বর-সংগতি-অসংগতি, অক্ষরের মিত্রতা-অমিত্রতা, মিল-অমিল, মুক্তক অমুক্তক, ভাষা, অলংকার-সে সব গুরু আলোচনা পণ্ডিত আর সমালোচকদের অধিক্ষেত্রে পড়ে। আমার কাছে কবিতা তো কথাই; অন্তরের কথা। যে কথা মনের মধ্যে কবিতা হয়ে উঁকি দেয়, সে কথা তার নিজের পছন্দের ভাষায়, তার কায়দায়, তার স্বাচ্ছন্দ্যমাফিক বাইরে এসে ধরা দিলেই তো হলো। তবে সেই কথাটাকে কত সুন্দর শব্দে সাজিয়ে, কতটা সাবলীল ঢঙে আনন্দের সঙ্গে আরেক মনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, সেটাই কি আসল কথা নয়? সে বিষয়টাকে মাথায় রেখেই বোধি ও বুদ্ধি, জ্ঞান ও অনুভব, ভাব ও কল্পনা, দ্যুতি ও দীপ্তির মাধ্যমে চেতনার গতিকে সঞ্চারিত করে আমার কবিতাকে পাঠকদের উদার হাতে তুলে দিলাম।”

স্বাতন্ত্র্য: এটি পাশ্চাত্যের অস্তিত্ববাদী দার্শনিকদের (যেমন: জ্যাঁ-পল সার্ত্র, মার্টিন হাইডেগার) মতো নিরাশাবাদী নয়, বরং আত্মদর্শনের মাধ্যমে আলোকপ্রাপ্তির পথ দেখায়।

২. আধ্যাত্মিকতা ও সুফিবাদ

কবি নেয়ামত উল্লার দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার গভীর সুফি চেতনা। তিনি আত্মজিজ্ঞাসা, মানবাত্মার শুদ্ধি এবং পরম সত্তার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কথা বলেন।

স্বাতন্ত্র্য: রুমি, হাফিজ, ও আল্লামা ইকবালের মতো সুফি কবিদের দর্শনের সঙ্গে মিল থাকলেও, তাঁর লেখনীতে-তে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে আধ্যাত্মিক সংশ্লেষের একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

৩. নৈতিকতা ও সামাজিক ভাবনা

তাঁর কাব্য দর্কেশন কেবল ব্যক্তির আত্মানুসন্ধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমাজের প্রতি ব্যক্তির দায়িত্ব ও নৈতিকতার ওপরও গুরুত্ব দেয়।

স্বাতন্ত্র্য: এটি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি ও রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের সংমিশ্রণে গঠিত, তবে এখানে ব্যাক্তি ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের একটি ব্যতিক্রমী ব্যাখ্যা আছে।

৪. প্রকৃতি ও সৌন্দর্যচেতনা

নেয়ামত উল্লাহ প্রকৃতিকে কেবল রূপ-লাবণ্যের প্রতীক হিসেবে নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক শক্তি ও দার্শনিক উপলব্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখান।

স্বাতন্ত্র্য: ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো প্রকৃতির প্রশস্তি থাকলেও, এখানে প্রকৃতি এক ধরনের আধ্যাত্মিক শিক্ষক, যা পূর্ব ও পশ্চিমা কাব্যধারার মধ্যে এক ভিন্নতর সংযোগ সৃষ্টি করেছে।

৫. সময়, মৃত্যু ও পুনর্জন্মের ভাবনা

কাব্যগ্রন্থটিতে -তে সময় ও মৃত্যুর ধারণাকে একধরনের নবজাগরণের দর্শনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের বিভিন্ন দার্শনিক ধারণার সংমিশ্রণ ঘটায়।

স্বাতন্ত্র্য: এটি হিন্দুধর্মের পুনর্জন্মবাদ, ইসলামি আখিরাত চিন্তা এবং বৌদ্ধ ধর্মের নির্বাণ ধারণার সঙ্গে সংলাপ তৈরি করে, যা সাধারণত একসঙ্গে দেখা যায় না।

নেয়ামত উল্লাহর কাব্যগ্রন্থটি কাব্য ও দর্শনের একটি স্বতন্ত্র সংমিশ্রণ, যেখানে ব্যক্তি, সমাজ, আধ্যাত্মিকতা ও প্রকৃতি একসঙ্গে মিলে একটি সামগ্রিক জীবনদর্শন গঠন করে। এটি প্রচলিত দর্শন থেকে স্বতন্ত্র, কারণ এটি কেবল বিমূর্ত তত্ত্ব নয়, বরং জীবনের বাস্তবতায় এর প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দেয়।

কবি নেয়ামত উল্লার চিন্তা ও দর্শনের স্বাতন্ত্র্য

কবি নেয়ামত উল্লার কবিতা জীবন, সমাজ, প্রেম, আধ্যাত্মিকতা ও প্রতিবাদের এক স্বতন্ত্র মিশ্রণ, যেখানে তাঁর চিন্তা ও দর্শন অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে ওঠে। তাঁর লেখায় ব্যক্তি ও সমষ্টির অভিজ্ঞতার গভীরতা, ভাষার শক্তি এবং দার্শনিক প্রতিফলন এক অনন্য মাত্রা পায়। নিচে তাঁর চিন্তা ও দর্শনের স্বাতন্ত্র্যবোধে স্থান পেয়েছে মানবিকতা, নির্মমতা, আশাবাদ ও জীবনবোধের অনুভূতির সংমিশ্রণ।

মানবিকতা ও জীবনবোধ: বাস্তবতা ও অনুভূতির সংমিশ্রণ

নেয়ামত উল্লাহর কবিতায় মানবজীবনের জটিলতা ও সৌন্দর্য একসঙ্গে প্রকাশিত হয়। তিনি ব্যক্তি-মানবের বেদনা ও সমাজের বৃহত্তর বাস্তবতাকে সমান্তরালে তুলে ধরেন।

স্বাতন্ত্র্যের বৈশিষ্ট্য:

তাঁর কবিতায় বাস্তবতা কখনো নির্মম, আবার কখনো আশাবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে।জীবনকে তিনি সরলভাবে দেখেন না; বরং তার নানা স্তর ও দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করেন।জীবনকে নিছক বেঁচে থাকার মাধ্যম হিসেবে না দেখে, তিনি এর তাৎপর্য অন্বেষণ করেন। তাঁর সাহিত্য রচনার ধরনের চেতনায় বিশ্বসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

প্রেম ও প্রকৃতির রোমান্টিকতা: অনুভূতির নতুন রূ

তাঁর প্রেমের কবিতা নিছক আবেগ প্রকাশের মাধ্যম নয়; বরং প্রেম এখানে আত্মোপলব্ধির ও অস্তিত্বের অন্বেষণের প্রতিচিত্র। প্রকৃতি ও প্রেমের সংমিশ্রণ তাঁর কাব্যধারার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।

স্বাতন্ত্র্যের বৈশিষ্ট্য:

প্রেমকে তিনি নিছক মানবীয় সম্পর্কের বাইরে নিয়ে গিয়ে এক পরম অস্তিত্বের সঙ্গে সংযুক্ত করেন।প্রকৃতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি একধরনের দার্শনিক রোমান্টিকতা সৃষ্টি করেন। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও পাবলো নেরুদার প্রেম ও প্রকৃতি ভাবনার মিল রাখলেও, নেয়ামত উল্লাহ এখানে এক ধরনের আত্মদর্শনের উপাদান যোগ করেছেন।

সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনা: প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর

নেয়ামত উল্লাহর কবিতায় সমাজের অসঙ্গতি, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ দেখা যায়। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদ একপেশে নয়; তিনি শোষিত ও শোষকের দ্বৈততাকে গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেন।

স্বাতন্ত্র্যের বৈশিষ্ট্য:

কেবল ক্ষোভ প্রকাশ নয়, পরিবর্তনের দিকনির্দেশনাও দেন।তাঁর কবিতায় সংবেদনশীলতা ও যুক্তির সংমিশ্রণ দেখা যায়।

বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি প্রতীকধর্মী ভাষা ব্যবহার করেন। বৈষম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদের ধরন ব্রেখট ও নজরুলের প্রতিবাদী চেতনার সঙ্গে মিল রাখলেও, নেয়ামত উল্লাহ তাঁর ভাষায় প্রতীকধর্মী গভীরতা যোগ করেছেন।

আধ্যাত্মিকতা ও আত্মানুসন্ধান: সুফিবাদের ছোঁয়া

তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে এটি প্রচলিত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং ব্যক্তিগত আত্মানুসন্ধান ও চেতনার জাগরণ থেকে উদ্ভূত।

আত্মিক ও দর্শনশাস্ত্রের সংমিশ্রণে নতুন ভাবনার প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বতন্ত্রতা ফুটে উঠেছে।সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে প্রচলিত ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে এনে ব্যাখ্যা করেছেন কবি। কবি নেয়ামত উল্লা আত্ম-পরিচয়ের সন্ধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আত্ম অনুসন্ধানে চিন্তামগ্ন থাকেন সর্বদা।

উপসংহার

নেয়ামত উল্লাহর কবিতা প্রেম, প্রতিবাদ, জীবনদর্শন ও আত্মানুসন্ধানের এক অনন্য সংমিশ্রণ। তাঁর কবিতার ভাষা সহজ, কিন্তু ভাবনা গভীর। তাঁর চিন্তা ও দর্শন অনেক দার্শনিক ও কবির সঙ্গে মিল থাকলেও, তাঁর উপস্থাপন ভঙ্গি ও বিশ্লেষণ তাঁকে স্বতন্ত্র করে তোলে। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতা, বাস্তবতা, প্রতিবাদ ও আত্মদর্শনের সংমিশ্রণ কবিতার এক নতুন ভাষা তৈরি করে, যা বিশ্বসাহিত্যের আলোচনার যোগ্য।

ড. দিপু সিদ্দিকী
লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

লেখক: প্রফেসর ড. দিপু সিদ্দিকী, কবি ও কলামিস্ট। ইমেইল: daily.presswatch@gmail.com

 

 

Share: