“যুক্তির পেছনে থাকে মুক্তির স্বপ্ন আর এই মুক্তির স্বপ্নই মানুষকে মানুষ বানায়।” ~ ক্রীতদাসের হাসি

 

“যুক্তির পেছনে থাকে মুক্তির স্বপ্ন আর এই মুক্তির স্বপ্নই মানুষকে মানুষ বানায়।”

– ক্রীতদাসের হাসি

 

পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে উপন্যাসটি রচিত হয় ১৯৬২ সালে।

 

উপন্যাসটির মূল চরিত্রে তাতারী। একজন ক্রীতদাস। খলিফার অজান্তেই খলিফাপত্নী তাতারী ও মেহেরজান নামে এক দাসীর বিয়ের অনুমতি দেন। বিয়ের পর তারা খলিফাপত্নীর অনুমতি নিয়েই প্রতিরাতে নির্ধারিত স্থানে মিলিত হত। তারা মিলিত হয়ে প্রাণখোলা হাসি হাসত। এদিকে খলিফা হারুনুর রশীদ যেন হাসতেই ভুলে গেছেন।

 

একদিন রাতের বেলা বাগানে বেড়াতে গেলে খলিফা সেখান থেকে তাতারী ও তার প্রেমিকার হাসি শুনতে পায়। হাসি শুনে খলিফা হারুনুর রশীদের খুব ঈর্ষে হয়। এমন হাসিও কেউ হাসতে পারে?

 

যে এমন প্রান খোলা হাসি হাসতে পারে তাকে খুজে বের করতে খলিফা তার সহচর মাশরুরকে নির্দেশ দেন। মাশরুর সেই হাসির উৎস খুঁজে বের করে এবং খলিফাকে জানায়।পরের দিন খলিফা গোপনে তাতারী ও মেহেরজান এর প্রেমলীলা প্রতক্ষ করেন।

 

খলিফার অদ্ভূত খেয়াল হয়। ক্রীতদাস তাতারীর প্রাণোচ্ছল হাসি শুনে বিমোহিত খলিফা ভেবেছিলেন তিনি তাতারীর হাসি কিনে নিতে পারবেন। যখন ইচ্ছে সেই হাসি শুনতে পারবেন। তাতারী যেন তার চাবি দেওয়া পুতুল।

 

সেই চেষ্টায় খলিফা তাতারী কে দাস থেকে মুক্ত করে অঢেল সম্পত্তি প্রদান করলেও কেড়ে নেন তাতারীর হাসির মূল উৎস মেহেরজান কে।

 

আসলে হাসি জিনিসটা ভেতর থেকে আসে। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে হাসি আসবে সেটা মহামূল্যবান। কেউ পার্থিব সম্পদ দিয়ে সে হাসি কিনতে পারে না। যেমন পারে নি উপন্যাসের খলিফা হারুনুর রশীদ।

 

মেহেরজান থেকে আলাদা হয়ে তাতারী কি হাসতে পারে? না পারেনি তাতারী। ক্রুদ্ধ খলিফার নির্দেশে চাবুকের আঘাতে তাতারীর কালো চামড়া ফালি ফালি হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু হাসি ফিরে আসেনি। না আর দশটা মানুষের মতো তাতারী পারেনি মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখতে। পারেনি অঢেল সম্পত্তি পেয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে।

 

রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে ফুটে উঠেছে স্বৈরশাসন বিরোধী প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনুর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পায় নি। খলিফার নির্দেশে হাসির চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করেছিল ক্রীতদাস তাতারী।

 

“ক্রীতদাসের হাসি” দারুণ একটা উপন্যাস। সাইজে বেশ ছোট হলেও গভীরতায় সমুদ্রসম।

 

শওকত ওসমান নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, রাজনৈতিক লেখা, শিশু-কিশোর সাহিত্য সর্বত্র তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তিনি ছিলেন এক উচ্চকিত কণ্ঠের অধিকারী। ক্রীতদাসের হাসি তাঁর একটি জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস।কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের ১০৮তম জন্মজয়ন্তীতে অতল শ্রদ্ধাঞ্জলি।

– দিপু সিদ্দিকী

Share: