সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার গ্রাফিতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং দেশি-বিদেশে এর প্রদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। বাংলাদেশের ইতিহাস সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ইতিহাস বিকৃত বা খন্ডিতরূপে প্রকাশ পায়। ফলে কি জাতি বিভ্রান্তির কবলে পড়তে থাকে যুগের পর যুগ। এক্ষেত্রে গ্রাফিতি একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু ইতিহাস রচনা নয়, নিরক্ষর জনসাধারণের কাছে এটি সহজে পৌঁছে যায়। গ্রাফিটির মাধ্যমে মূল বার্তাটি তারা সহজে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়। যা অন্য কোন মাধ্যমে বা সহজ উপায়ে কোন একটি ঘটনা বা বিপ্লব সম্পর্কে জানা সময় ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস ইতোমধ্যে সারা দেশজুড়ে গ্রাফিতির মাধ্যমে আরেকটি বিপ্লব রচনা করেছে। বিপ্লবের ইতিহাস শিল্পের ছোঁয়ায় গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছে। ফলে এর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। কিন্তু দেয়াল কিংবা ও পিলারগুলোতে অঙ্কিত গ্রাফিতি গুলো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিংবা বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও দলের পোস্টারে মূল্যবান গ্রাফিতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং রাষ্ট্রচিন্তক আব্দুল হক ছাত্র শিক্ষকদের প্রতিনিধিদেরকে বিভিন্নভাবে উপদেশ, সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রাফিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। এই কর্মবীর এবং ব্যবসায়িক এবং কূটনৈতিক ভাবে সফল একজন ব্যক্তি কিভাবে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনে অবদান রেখেছেন সেই বিষয়টি নিয়েই আলোকপাত করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটিতে। নিবন্ধিতিতে আলোচিত হয়েছে যে, একজন ব্যবসায়ী কিভাবে একটি দেশের কূটনীতিক হয়ে উঠতে পারেন এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকরী উদ্যোগ ও পন্থা বের করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সেই রকম একজন ব্যক্তিত্ব আব্দুল হক এর জীবনালেখ্য আলোকপাত করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে। নিবন্ধটিতে উঠে এসেছে আব্দুল হকের মত নির্মোহ কর্মবিদদের জাতি গঠনে উপদেষ্টা পরিষদে সংযুক্ত করার যৌক্তিকতা। এই ধরনের ব্যক্তিত্বদের সেবা পাওয়া রাষ্ট্রের মানুষের অধিকারও বটে। ছাত্র -শিক্ষক – জনতা মনে করছে আব্দুল হকদের মত ব্যক্তিত্বদের উপদেষ্টা পরিষদে সংযুক্ত করতে পারলে শম্ভূক গতির সরকারে সত্তিকার অর্থে একটি গতিময়তা ফিরে আসতে পারে। ফিরে আসতে পারে একটি স্বস্তিকর পরিবেশ। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে এ ধরনের ব্যক্তিত্বদের নিয়ে সরকার গঠন জুলাই বিপ্লবের দাবিও বটে।
ভূমিকা
গ্রাফিতি, সাধারণত দেয়ালে বা উন্মুক্ত স্থানে আঁকা চিত্রকর্ম হিসেবে পরিচিত, আধুনিক যুগে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম এবং শিল্পের রূপ হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু শৈল্পিক প্রকাশের জন্যই ব্যবহৃত হয় না, বরং সামাজিক বার্তা প্রেরণ, ইতিহাস সংরক্ষণ এবং বিপ্লবী চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিশেষত ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ পরবর্তী সময়ে, গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রবন্ধে গ্রাফিতির গুরুত্ব, এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব, এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হকের মত ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গ্রাফিতি বলতে কী বোঝায়?
গ্রাফিতি হলো একটি শৈল্পিক মাধ্যম যেখানে চিত্র, শব্দ, এবং রং ব্যবহার করে বার্তা প্রকাশ করা হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি উন্মুক্ত স্থানে আঁকা হয় এবং জনসাধারণের জন্য দৃশ্যমান থাকে। আধুনিক গ্রাফিতি শিল্পের উৎপত্তি পশ্চিমা দেশে হলেও এটি এখন বৈশ্বিক শিল্পধারায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে গ্রাফিতির প্রভাব
বাংলাদেশে গ্রাফিতি প্রথমে শৈল্পিক এবং প্রথাগত সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ তা এক নতুন মাত্রা দেয়। দেয়ালে আঁকা প্রতীক, রং ও বার্তা সাধারণ মানুষের চিন্তায় বিপ্লবের চেতনা ছড়িয়ে দেয়। নিরক্ষর মানুষ ইতিহাস না পড়লেও গ্রাফিতির প্রতীকগুলো দেখে বিপ্লবের গল্প জানতে পারে।
গ্রাফিতির জনপ্রিয়তা
গ্রাফিতি কেন জনপ্রিয়? এর উত্তর নিহিত রয়েছে এর সহজবোধ্যতা এবং প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতায়।
১. সহজলভ্য মাধ্যম: আঁকতে বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রয়োজন হয় না।
২. বার্তা প্রেরণের কার্যকারিতা: গ্রাফিতি সরাসরি মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করে।
৩. সামাজিক জাগরণ: সমাজের নানা অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য, এবং শোষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে এর জুড়ি নেই।
৪. সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ: গ্রাফিতি শুধুমাত্র একটি বার্তা নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকে।
‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর সময় সাধারণ মানুষের দেয়ালে আঁকা চিত্র এবং বার্তাগুলো এ দেশের সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্বর্ণালি অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে।
গ্রাফিতি সংরক্ষণ এবং সারা বিশ্বে প্রদর্শনের গুরুত্ব
বিশ্বব্যাপী গ্রাফিতি এখন শুধু রঙের খেলা নয়, বরং একটি সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাক্ষী। বাংলাদেশে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর চেতনা ধরে রাখার জন্য এই গ্রাফিতিগুলোকে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। কুমিল্লা টাউনহলে ২৫,০৭৩টি গ্রাফিতি প্রদর্শনী এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা স্থানীয় ইতিহাসকে বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করবে।
ইতিহাস সংরক্ষণ: গ্রাফিতি সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সংগ্রামী চেতনা তুলে ধরা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: বাংলাদেশের সামাজিক আন্দোলন এবং এর চেতনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
শিক্ষার মাধ্যম: গ্রাফিতি নিরক্ষর জনগোষ্ঠী এবং তরুণদের কাছে সহজভাবে বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।
সাংস্কৃতিক বিনিময়: বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে অন্য দেশের মানুষের পরিচয় হবে।
আব্দুল হকের ভূমিকা এবং চিন্তা
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও চিন্তাবিদ আব্দুল হক, যিনি তার দূরদর্শিতা এবং সমাজসেবার জন্য সুপরিচিত, গ্রাফিতি সংরক্ষণ ও বৈশ্বিক প্রদর্শনের বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন। তার পরিকল্পনা শুধু একটি শিল্পরূপকে জনপ্রিয় করা নয়, বরং এর মাধ্যমে বৈষম্যহীন, সচেতন এবং শিক্ষিত জাতি গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।
তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি:
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ভূমিকা:
দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গবেষণা করেছেন। তার চিন্তাধারা বাস্তবায়িত হলে দেশের আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আরও মজবুত হবে।
জাপানের উদাহরণ:
জাপানের মত পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসচেতন জাতি গঠনের জন্য তিনি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেন। এটি জাতি গঠনের একটি মূল ভিত্তি বলে তিনি মনে করেন।
গ্রাফিতির মাধ্যমে সামাজিক চেতনা জাগরণ:
তিনি মনে করেন, গ্রাফিতি শুধু একটি চিত্রকর্ম নয়, বরং এটি এক প্রকার বিপ্লব। তার নেতৃত্বে গ্রাফিতি সংরক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হলে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
জনাব আব্দুল হককে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করার যৌক্তিকতা
আব্দুল হকের মত ব্যক্তিত্বকে সরকার যদি উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে তার অভিজ্ঞতা এবং দূরদর্শী চিন্তাধারা জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
1. অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
তার পরিকল্পনা এবং গবেষণা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন:
স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজন্মকে দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে সহায়তা করবেন।
. সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ:
তার উদ্যোগে সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য আরও সুযোগ তৈরি হবে, যা জাতীয় ঐক্য বাড়াবে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
তার নেতৃত্বে গ্রাফিতি প্রদর্শনীর মত উদ্যোগ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিশ্বদরবারে তুলে ধরবে।
উপসংহার
গ্রাফিতি, যা একসময় শুধুই শৈল্পিক বিনোদন ছিল, তা এখন একটি বিপ্লবী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তুহিন আহমেদ প্রজন্ম এবং আব্দুল হকের মত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা এই মাধ্যমের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ থেকে উদ্ভূত গ্রাফিতিগুলো জাতীয় ইতিহাসের একটি গর্বিত অংশ।
বিশ্বব্যাপী প্রদর্শনী এবং সংরক্ষণ উদ্যোগ সফল হলে, এটি শুধুমাত্র আমাদের দেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠবে। একই সাথে, আব্দুল হক এর মত ব্যক্তিত্বদের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করা হলে জাতীয় উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এখন সময় এসেছে এই চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে কার্যকর উদ্যোগে রূপান্তর করার।