পদ্মা সেতু উদ্বোধনে যোগদানের অপেক্ষায় লাখ লাখ মানুষ

দিপু সিদ্দিকী: আগামী ২৫ জুন রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ দ্বি-স্তর বিশিষ্ট বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের স্মরণীয় এবং ঐতিহাসিক দিন উদযাপনের জন্য লাখ লাখ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
জাজিরার বাসিন্দা মো. সুলতান হোসেন আজ বাসস’কে বলেন, “মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকার নারী, পুরুষ, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে যাবেন।”
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে সব সময় কাজ করে যাওয়া সাহসী ও দূরদর্শী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন দেশের দীর্ঘতম সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সুলতান আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
তরুণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো. মনিরুজ্জামান বাসসে’র সাথে আলাপকালে বলেন, সেতুটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে, কারণ এটি এসব জেলাকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করবে।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বি-স্তর বিশিষ্ট পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতুর উপরের স্তরে যানবাহন চলাচল ও নিচের স্তরে ট্রেন চলাচলের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে।”
মনিরুজ্জামান বলেন, স্বপ্নের এই সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দেবে, পাশাপাশি এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, “আমরা যখন সড়কপথে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসি, তখন প্রমত্তা পদ্মা নদী ফেরিতে করে পার হতে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মহৎ কাজের কারণে আমরা অন্তত ১৯টি জেলার মানুষ কোনো রকম বিপদ ও ঝামেলা ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবো।”
মনিরুজ্জামান বলেন, লাখ লাখ মানুষ আগামী ২৫ জুনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, কারণ এটি স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের জন্য উদ্বোধনের বহুল প্রত্যাশিত একটি দিন।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাসসে’র সাথে আলাপকালে বলেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য সব কাজ ঠিকঠাক মতো চলছে।
সকল কাজ শতভাগ শেষ করতে নির্মাণ কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে আমরা বৈদ্যুতিক লাইন, বৈদ্যুতিক বাল্ব ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ পরীক্ষা করে দেখছি ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার আশাবাদী যে, পদ্মা সেতু দেশের জিডিপি’তে ১.৫ থেকে ২ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে দেবে। পাশাপাশি এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে অবদান রাখবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, চীনা ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতুটি নির্মাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ।
বাংলাদেশীদের পাশাপাশি অনেক বিদেশী নাগরিক এই প্রকল্পে দিনরাত কাজ করেছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চল দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে ।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোড এবং মাওয়া প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া-২ কাজের উদ্বোধন করেন।
পদ্মা সেতুর কাজটি মোটামুটিভাবে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত, এগুলো হলো- প্রধান সেতু, নদী শাসন, দুটি সংযোগ সড়ক এবং অবকাঠামো (পরিষেবা এলাকা) নির্মাণ।
পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজের মধ্যে রয়েছে পাইলিং ও নদী শাসন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন ও অ্যাসোসিয়েটস ব্রিজ নির্মাণের তত্ত্বাবধান করেছে, যা দেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে অনেক বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের দীর্ঘ প্রতীক্ষা প্রায় শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) অধীনে ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থে এই সেতু প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ২০০৩-২০০৫ সালের মধ্যে এই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছিল।
এইসিওএম-এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শদাতারা পদ্মা বহুমুখী সেতুর বিশদ নকশা প্রস্তুত করেছেন। দলটিতে এইসিওএম, এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল, নর্থওয়েস্ট হাইড্রোলিক কনসালট্যান্টস ও এসিই কনসালট্যান্টস এবং এএএস-জ্যাকোবসেন ও এইচআর ওয়ালিংফোর্ড-এর অতিরিক্ত সহায়তা নিয়ে গঠিত হয়েছে।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন ও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেন। তাঁরা সেদিন শুক্রবার সকালে ৭ থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত ২ কিলোমিটার হেঁটে যান।সুত্র-বাসস

Share: