“ষাট্-দশকের গান ও শ্যুডৌ বুদ্ধিমান’ –জাঁ-নেসার ওসমান
বাংলায় ষাটের দশকে কিছু কালজয়ী গান রচিত ও গীত হয়েছে-যার অবদান আজও মানুষের মননে প্রশান্তির অনুরণন জাগায়। শ্রদ্ধেয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে গীত এ-গানগুলো এখনো প্রতিটি উচ্চবিত্ত- মধ্যবিত্তের মনের মনি কোঠায় যায়গা করে. নিয়েছে।
সেদিন এমনি এক সোণাঝরা স্বন্ধ্যায় ক্লাব ঘরে ইউটিউব থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া;
“ কোনোদিন বলাকারা অতোদূরে. যেতো কি ওই আকাশ না ডাকলে / তাই বলি কোনো বাঁশি সুর খুঁজে পেতো কি কারোও নুপুর. না বাজলে…”
অদ্ভুত সুরেলা মিষ্টি রোমান্টিক গান। ঘর ভর্তি লোক পিন পতন নিঃশব্দতা।্ সবাই খুব মনেযোগ দিয়ে গান শুনছেন।
শ্রোতা বাংলার বিখ্যাত অভিনেতা আল-মনসুর,স্থপতি শাকুর মজিদ, ডিপিডিসির. প্রকৌশলী বাবু, প্রকৌশলী নাইম, ম্যাক্স গ্রæপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম আলমগীর,
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা রুপা চৌধূরী, বিশিষ্ট বাম নেতা এম.ই. চৌধূরী বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব জনাব কায়সার। বাংলাদেশের সব বাঘা বাঘা ব্যাক্তি জীবনে সফল সব মানুষের সান্নিধ্যে ষাট-দশকের এই কালজয়ী গান শুনতে পাওয়া সে এক ভাগ্যের. ব্যাপার।
ধীরে. ধীরে. গান শেষ। সবাই গানের মৌতাতে মশগুল। আমি তখন গানের রেশটা আরোও একটু ধরে. রাখার. জন্য হাত তুলে সবের. দৃষ্টি আকর্ষণ করে. বললাম; “এই গান নিয়ে আমার একটু প্রশ্ন আছে।”
সবাই আগ্রহ ভরে. জানতে চাইলেন, “ বলেন কি প্রশ্ন?”
প্রশ্নটা হলো এই গানের “বলাকা” শব্দের অর্থ কি?”
ব্যাস, এক স্থপতি আমার প্রশ্ন শুনে খেঁকিয়ে উঠলেন, “এইটা আবার. কোনো প্রশ্ন হইলো, “বলাকা” শব্দের মানে কি? আরে. মিয়া এখানে সবাই জানে “বলাকা”শব্দের মানে কি। আপনে মিয়া কথাশিল্পী শওকত ওসমানের পোলা বইলা আঁতেলৈকচুয়ালগিরি ফলাইতেছেন!!
জানি জানি আজকাল বুয়েটে অনেক নিচুতলার পোলাপান ভর্তিহয়। মেসে যে কাজের বুয়া বাসন মাজে শিক্ষার প্রসারের ফলে তার পোলাও বুয়েটে পড়ে। অহন আর বর্বর. পাকিস্তান নাই যে, ফ্যামিলি দেইখ্যা ছাত্র ভর্তি করবো। এখন জন্ম হোক যথা-তথা কর্ম হোক ভালো। এই নীতিতে বাংলাদেশ চলতাছে।
এই যে কয়েকদিন আগে বুয়েটে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়াতে, বুয়েটের পোলারা, বুয়েটের সতীর্থ আবরাররে. পিটায়া মারলো, ম্যাক্সিম গোর্কীর ভাষায় এসব নিচুতলার লোকের পোলা-পান।তাই বইলা এহানে এমন কোনো মা…চো নাই যে “বলাকা” মানে “বক” জানেনা।এক নাগাড়ে এতোগুলো কথা বলে থামলেন ষাটোর্ধ স্থপতি। তখন ম্যাক্সগ্রæপের স্বত্বাধিকারী প্রকৌশলী গোলাম আলমগীর হাত তুলে বললেন; “ আমি “বলাকা” মানে জানিনা।”
এবার বুঝলাম ম্যাক্স কেন ম্যাক্স। ম্যাক্স কেনো এতো বড় কোম্পানী।ম্যাক্সের. চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলমগীর ভাই বাংলাদেশের শীর্ষ থেকে একদম নিচু তলা পর্যন্ত সকলকে যথাসম্ভব আর্থিক সাহায্য করেন। উনার বদৌলতে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষরূপে প্রায় সত্তর থেকে আশি-হাজার পরিবার প্রতিমাসে আর্থিক সাহায্য পান।
আমার মহা ঋষি কনফুসিয়াসের কথা মনে হলো। মহা ঋষি কনফুসিয়াস বলেছেন; “ তুমি যদি কোনো কিছু না জান, তাহলে তুমি কিছুসময়ের জন্য বোকা। তারপর কাউকে জিজ্ঞেস করে. বিষয়টা বুঝে নিলে তুমি আর বোকা থাকলে না। কিন্তু তুমি যদি কাউকে কোনো দিনইজিজ্ঞেস করলে না, তাহলে তুমি সারা জীবনের জন্য বোকা হয়েই থাকলে।”
আমি তখন কাচু-মাচু হয়ে, ম্যাক্সের. চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলমগীর ভায়ের উদ্দেশ্যে বললাম,“ বলাকা মানে হলো, একপ্রকার ক্ষুদ্রজাতীয় বকী, অর্থাৎ “বলাকা” হচ্ছে বকের স্ত্রী-লিঙ্গ। আর বকের পুং-লিঙ্গ হচ্ছে “বলাক”। কিন্তু বক বললে বকের নারী-পুরুষ দুই লিঙ্গকেই বোঝায়।
তখন ওই স্থপতি বলে উঠলেন; “ হেঁঃ হেঁঃ বলাকা মানে বগী হেইডা তো আমি জানতামনা। আমিতো জানি বলাকা মানে বগা, হা হা হা। ্আজকে একটা ভালো জিনিস শিখলাম, বলাকা মানে,বগী। এবার থেইক্ক্যা কাউরে. বগী না মাইরা বলাকা মারুম হেঁঃ হেঁঃ ।”হুনেন আমাগো একটা গান আছে না, “ফান্দে পড়িয়া বগায় কান্দে রে..বগার কান্দন দেইখারে. বগী..” ্অহন বুজছি এই গানে বগীর কথা কইছে , কারণ হেরা আছিলো চারণ কবি, তাই লিখছে, বগ্।ী যদি রবীন্দ্রনাথ হইতো তায়লে লিখতো“বলাকা” হা হা হা।”
আমার প্রশ্ন কিন্তু স্ত্রী বক বা পুরুষ বক নিয়ে নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে আমাদের. দেশের. শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ থেকে পাশ করে. যারা বের হচ্ছেন তারাও কি এমনি অর্ধ-শিক্ষিত হয়ে জীবন পার করবেন!!
সেদিন স্থপতি মোবাশ্বের. হোসেন স্যার বললেন, “ যে সিংগাপুরে. একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর প্রায় সব দেশথেকে চার’শটি ডিজাইন জমা পড়েছিলো। এই চার’শ ডিজাইন থেকে কুড়িটি ডিজাইন প্রাথমিক ভাবে বাছাই করা হয়। এই কুড়িটির মাঝে কোনটা কোন দেশের তা প্রকাশ করা হয়নি। তারপর যখন কুড়িটি ডিজাইন খোলা হলো তখন দেখা গেলো ওই কুড়িটির মাঝে চারটির স্থপতি বাংলাদেশের। গর্বে বুক ভরে. ওঠে।সারাবিশ্বে এখন বংালাদেশের ছেলেদের. এগিয়ে যাবার পালা।
কিন্তু যখন দেখি মানুষ মানুষ হচ্ছেনা- কোনো জিনিসের পুরোটা না যেনেই দম্ভ-প্রকাশ করছে। বাংলার দরিদ্রতম হকারের পয়সায় ধণীর. ছেলেদের. বিদেশে পড়াচ্ছে- তখন বড় বেদনার সাথে বলতে হয় এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম বুঝি!!
লাখো ভায়ের জীবন উৎসর্গ করে. মা-বোনের সন্মান বিসর্জন দিয়ে এই দেশ চেয়েছিলাম? পাঁচ হাজার টাকার বালিশ, বত্রিশ হাজার টাকার পর্দা। তিন হাজার টাকার কাচ্চি বিরয়িানির প্যাকেট!!
সরকার কি করবে!! সরকার কি বিদেশ থেকে এসেছে?? সরকারতো আপনারাই। তাহলে আপনারা ভালোনা হলে, আপনারা সবাই মিলে আর একবার চেষ্টা না করলে সামনে আরোও বিপদই আসবে।
তাই অনুরোধ করি,এমনি অর্ধ-শিক্ষিত হয়ে বেঁচে না থেকে আসুন আরএকবার সব বাঙালী এক হোই পঁচিশে মার্চের. রাত্রির মতো।
জয় বাংলা।