“জন্ম হোক যেথা সেথা / কর্ম হোক ভালো” ——জাঁ-নেসার ওসমান


বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু, চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সত্তরের দশকে মঞ্চ ও টেলিভিশনে একবাক্যে যাঁকে সত্যিকারের অভিনেতা বলা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু তাঁর একজন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু তখন হোটেল পূর্বাণীর বেভারেজ ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন।
হোটেল পূর্বাণীর চেয়ারম্যান জয়নাল স্যারের ভাবনা “টোনা-টুনি”র ক্যাসেট, পরবর্তীতে সিডি, যা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর হাতে যৌবন পেল।
সে সময় এমন কোন বাসা ছিলোনা যে, বাচ্চাদের. জন্য টোনা-টুনির ক্যাসেট বাজেনি। বাড়ীতে নতুন অতিথি জন্মেছে মানেই বছর না ঘুরতেই টোনা-টুনির ক্যাসেট পৌঁচেছে। এই ছিলো বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর যাদুকরি হাতের ছোঁয়া। প্রায় সব ক্যাসেটের নেপথ্য কন্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর।
দিলুর, “আমি গাধা বলছি, সংশপ্তক, জনতার রঙ্গশালা, এমনি কত শত নাম বলব।
দিলুকে নিয়ে আমার পরিচালিত নাটক, “এ সময়ের দিনলিপি”র কথা বেশ মনে পড়ে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু শুটিং স্পটে থাকা মানে, কখন যে দিন শেষ হয়েছে বোঝা যায়নি।
এমনি প্রাণবন্ত ছিলো আমাদের. দিলু।
সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্মদিন নিয়ে এক এক দৈনিক সংবাদ পত্রে এক এক তারিখ ছাপা হচ্ছে।
এক বৃহৎ কাগজ, যারা আজকাল, বর্ণীল বিবাহ. সারমেয়র সারকথা, এসব নিয়ে ব্যাস্ত, তারা ছাপলেন,
“ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম ১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর, চট্টগ্রাম।
আর স্বল্প বৃহৎ কাগজ, ছাপলো; বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম:১৯ জানুয়ারি ১৯৫২।
মৃত্যু: ১৯ জানুয়ারি ১৯৫২।
ভুল মানুষেরই হয়, ভুল মানুষেরই হবে।
কিন্তু প্রশ্ন, বাংলাদেশের ডাক্তাররা যখন ভুল করে, তখন ভাংচুর হয়।
পুলিশ যখন নামের মিলে, নিরপরাধীকে বছরকা বছর জেলে পুরে. রাখে তখন পাবলিক ফ্যাল ফ্যাল করে, চাইয়া থাকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু আমাদের. দেশের সেরা অভিনেতাদের. একজন।
অথচ তার জন্মদিন নিয়ে যদি এমনি বালখিল্যতা প্রকাশ পায় তাহলে আমাদের. কি হবে??
কবি সামসুর রাহমানের কবিতার পংতি অনুরণনে বলতে হয়, “ অদ্ভুত এক ভুতের পিঠে চলেছে স্বদেশ”এর দৈনিক সংবাদ পত্র।
আর উনিশ শতকের কবিতার পংতি নিয়ে বললে বলব: “ জন্ম হোক যেথা সেথা, কর্ম হোক ভালো।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্মদিন যাই হোক ওর কর্ম ছিলো ভাল্।ো
জয় বাংলা।
মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারি সকাল ৬টা ৪০মিনিটে রাজধানী ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিটিভিতে প্রচারিত ‘সংশপ্তক’ নাটকে ‘বড় মালু’ চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন মুজিবুর রহমান দিলু। অনেকে তাকে ‘বড় মালু’ নামেই চেনেন।
আতাউর রহমান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, কীর্তিমান মঞ্চ ও টেলিভিশান অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আজ সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমের যাত্রী হয়েছেন। সে জীবন যুদ্ধে যেমন ছিল এক পরাক্রান্ত সৈনিক, তেমনি ছিল এক বর্ণিল জীবনের অধিকারী। তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনাই দেশবাসীদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।’
মুজিবুর রহমাম দিলুর অভিনয় শুরু মঞ্চ দিয়ে। ১৯৭২ সালে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন তিনি। ১৯৭৬ থেকে নিয়মিত অভিনয় করেছেন।
মাঝে দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন দিলু। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো: ‘তথাপি’, ‘সময় অসময়’, ‘সংশপ্তক’ ইত্যাদি।
তার মঞ্চ নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙের দিনগুলি’ ও ‘জনতার রঙ্গশালা’।
লেখক- জা-নেসার ওসমান,চলচ্চিত্র পরিচালক ।
দিলুর সংক্ষিপ্ত জীবনী-
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রখ্যাত নাট্যজন মুজিবুর রহমান দিলু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৭৭ সালে ঢাকা ড্রামা নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও তার দাদা ও নানার বাড়ি নোয়াখালী, বাবার চাকরির সুবাদে ১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে তার জন্ম।
মুজিবুর রহমান দিলু চট্টগ্রামের ওয়েস্ট এন্ড স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের স্কাউট দলের সদস্য হিসেবে ১৯৭০ সালে ঢাকার মৌচাকে পাকিস্তানের সর্বশেষ স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। আপাদমস্তক একজন সৃজনশীল শিল্পী ছিলেন মুজিবুর রহমান দিলু। অসীম সাহসী, পরিশ্রমী ও চিন্তাশীল এ মানুষটি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন স্মার্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থাতেই তৎকালীন ঢাকার বিখ্যাত হোটেল পূর্বাণীতে চাকরি শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে মুজিবুর রহমান দিলু ১৯৭২ সালে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় নাট্য উৎসবে নির্দেশনা দেন নাটক ‘কিংসুক যে মরু’তে। তার নির্দেশিত মঞ্চ নাটক হচ্ছে— ‘কড়াদাম চড়াদাম’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙের দিন গুলি’। মঞ্চ ও টিভির বহু নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। তার অভিনীত নাটকগুলো হচ্ছে— ‘তথাপি’, ‘সময় অসময়’, ‘সংশপ্তক’, ‘জনতার রঙ্গশালা’ ইত্যাদি। নির্দেশনা ও অভিনয় দুটোতেই সমান পারঙ্গম ছিলেন। টিভি নাটকের মধ্যে ‘নীল পানিয়া’, ‘মহাপ্রস্থান’, ‘কিছু তো বলুন’, ‘তথাপি’, ‘আরেক ফাল্গুন’ উল্লেখযোগ্য। বিটিভির ধারাবাহিক— ‘সময় অসময়’ এবং ‘সংশপ্তক’। তার অভিনীত ‘সংশপ্তক’র মালু চরিত্রটি আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।
হোটেল পূর্বাণী ছাড়াও মুজিবুর রহমান দিলু কাজ করেছেন— বৈশাখী টিভি, শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন, দৈনিক আজকের প্রত্যাশা ও শান্ত-মারিয়াম একাডেমি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে।
২০০৫ সালে নাটক নিয়ে ভারতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বন্ধুদের সহযোগিতা ও সরকারি অনুদানে ব্যয়বহুল চিকিৎসা শেষে আবার নাট্যাঙ্গনে ফিরে আসেন।
বহুবিধ বিষয়ে পড়াশোনা করতেন মুজিবুর রহমান দিলু। দেশি-বিদেশি গল্প-উপন্যাস, মনীষীদের জীবনী তার নখদর্পণে ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, সদালাপী।
ছয় ভাই ও দুই বোনের পরিবারে মুজিবুর রহমান দিলু ছিলেন ভাইদের মধ্যে চতুর্থ। পারিবারিক জীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। তারা ছয় ভাই হলেন— প্রখ্যাত নাট্যজন মঞ্চসারথী আতাউর রহমার, জাহিদুর রহমান, সাজিদুর রহমান (কবি মেহরাব), নাট্যজন মুজিবুর রহমান দিলু, নাঈম সাইফুর রহমান ও নোমান মাহমুদুর রহমান। দুই বোন যোবায়দা জেবু ও খুরশিদা বেগম।
১৯৭৮ সালে ‘পদাতিক নাট্য সংসদ’ প্রতিষ্ঠার পর টিএসসিতে নিয়মিত মহড়ায় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি আমাদের মহড়াঙ্গনের প্রাণ ছিলেন। ছোট-বড় সবার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। রাজপথের আন্দোলন, বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ, দুর্যোগ-দুঃসময়ে সব জায়গায়ই আমরা তাকে পাশে পেয়েছি। বিদায় প্রিয় দিলু ভাই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও নাট্যাঙ্গনে উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
Related News

“জন্ম হোক যেথা সেথা / কর্ম হোক ভালো” ——জাঁ-নেসার ওসমান
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু, চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সত্তরের দশকে মঞ্চ ও টেলিভিশনেRead More

“লাল সালাম, মুনীর ভাই” —জাঁ-নেসার ওসমান
“লাল সালাম, মুনীর ভাই” সালটা ১৯৬৪ কি ১৯৬৫হবে, আমাদের. শ্রী শ্রী মা সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুলRead More