নিয়োগ-পদোন্নতি পদ্ধতির পরিবর্তন চান নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা

পুলিশ

নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তন চান নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে নিয়োগ সীমিত করারও দাবি জানিয়েছেন তারা। ২০ থেকে ৩০ বছর চাকরি করার পরও তাদের অনেককে মাত্র একটি পদোন্নতি নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশাও কাজ করছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই রুল পরিবর্তনের জন্য পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি বরাবর আবেদন করেছে নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে তারা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পুলিশ সদর দফতরে এই আবেদন জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। বছরের পর বছর চাকরি করার পরও পদোন্নতি না পাওয়া নিয়ে বৈঠকে বসেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিমান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিএম ফরমান আলীর সভাপতিত্বে গত ৩১ অক্টোবর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের স্বাক্ষরে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিস্টেমের পরিবর্তন চেয়ে আইজিপি বরাবর আবেদন পাঠানো হয়। এতে এএসপি পদের নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে বিভাগীয় ফিডার (ইন্সপেক্টর) পদ থেকে পদোন্নতির শতকরা ৬৭ ভাগ বা এর অধিক হারে উন্নীত করার আবেদন জানানো হয় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।

আবেদনে বলা হয়, কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট পদে এবং এএসপি পদের এই তিন পর্যায়ে বর্তমানে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়। কনস্টেবল পদে যোগদান করার পর সাধারণত একজন কনস্টেবল নায়েক, এএসআই, এসআই, টিএসআই, ইন্সপেক্টর ও এএসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত এএসপিরা সহজেই সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি বা ডিআইজি বা অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। কনস্টেবল ও এএসপি পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা পুরো কর্ম জীবনে চার থেকে পাঁচটি পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। অপরদিকে, যোগ্যতাসম্পন্ন সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত এসআই ও সার্জেন্টরা পুরো কর্মজীবনে একটিমাত্র পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হয়ে থাকেন। বেশির ভাগ ইন্সপেক্টররা ওই পদ থেকেই অবসরে চলে যান। প্রতি বছর ইন্সপেক্টর থেকে কিছু পদোন্নতি পেয়ে এএসপি হলেও এ হার খুবই সামান্য। বিষয়টি বিবেচনা করে ইন্সপেক্টরদের হতাশা দূর করার জন্য ডিএসপি পদ সৃষ্টি করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এই উদ্যোগকে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হলেও এটি কোনও বাস্তব সমাধান নয় বলে মনে করেন তারা। তারা মনে করেন, বাস্তব সমাধান হলো সমন্বয়। বর্তমানে প্রয়োজনীয় চাহিদার মাত্র ৩৩ শতাংশ হারে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে এনক্যাডারমেন্ট হয়ে থাকেন। অবশিষ্টাংশ সরাসরি বিসিএসের মাধ্যমে এএসপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে দুই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি কম সংখ্যক হারে পদোন্নতি পায়। অন্যদিকে, বিসিএস থেকে এএসপি পদে বেশি সংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও উচ্চতর স্তরে পদসংখ্যা সীমিত হওয়ায় তাদের যথাসময়ে পদোন্নতি হয় না।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বিশ্বাস ও আশা করেন যে, বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এএসপিদের ন্যূনতম ডিআইজি বা অ্যাডিশনাল আইজিপি হওয়া উচিত। আর এটা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ জন এএসপি বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া যৌক্তিক। একইভাবে যারা এসআই ও সার্জেন্ট পদে যোগ দেন তাদের ন্যূনতম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হওয়া উচিত।

আবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে পুলিশে ছয় হাজার ৮৬৯টি ইন্সপেক্টরের পদের মঞ্জুরি রয়েছে। যার মধ্য থেকে সামগ্রিক চাহিদার ৩৩ ভাগ কোটায় থাকা ইন্সপেক্টরদের পাঁচ ভাগ হারেও এএসপি পদে পদোন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়। এজন্য ৩০ থেকে ৩২ বছর কর্মকাল পার হওয়ার পরও অধিকাংশ ইন্সপেক্টররা এএসপি পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এএসপি পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেও এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর একমাত্র বাস্তব সমাধান, বিভাগীয় ৩৩ ভাগ কোটাকে ৬৭ ভাগ বা এর অধিক হারে উন্নীত করা। এতে প্রতি বছর অধিক সংখ্যক হারে অর্থাৎ কমপক্ষে ২০০ ইন্সপেক্টরের এএসপি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিভাগীয় এএসপিদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সার্বিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

বিসিএসে নিয়োগ সীমিত হয়ে আসলে তাদের যথাসময়ে পদোন্নতি প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে, কাঙ্ক্ষিত সময়ে পদোন্নতি পাবেন। মাঠ পর্যায়ে এএসপি বা তদুর্ধ্ব পদের শূন্যতা বা ঘাটতি থাকবে না। অন্যদিকে এসআই ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগপ্রাপ্তরাও পদোন্নতির অভাবে হতাশায় পড়বে না। পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগের প্রত্যাশায় অফিসাররা পেশাদারিত্বের প্রতি বেশি যত্নশীল হবেন। ফলে, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি দক্ষ যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম  বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এই আবেদন জানানো হয়েছে।’ তিনি পদোন্নতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি নিজেও ২০ বছরে মাত্র একটি পদোন্নতি পেয়েছি। অনেকের চাকরির মেয়াদ ৩০ থেকে ৩২ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একটি।’

এটা তাদের প্রতি বৈষম্য কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈষম্য নয়। এটা সিস্টেমের সমস্যা।’ তাই তারা এর পরিবর্তন চান বলে জানান তিনি।

Share: