১২ দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করতেন সেলিমপুত্র ইরফান!
র্যাব সূত্র বলছে, দেহরক্ষীদের সঙ্গে নিয়মিত মদ পান করেন ইরফান। ঘটনার দিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহম্মেদ খানকে যখন মারধর করা হয় তখনও তিনি মাদক সেবন করেছিলেন। মদ খেয়ে মাতাল অবস্থাতেই মারধর করেন তিনি। ঘটনার পর বাসায় ফিরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন ইরফান। এই মারধরের পরিণাম ভাল হবে না ভেবে আবার দাদা বাড়ীর চারতালায় নিজের বারে ঢুকে সারারাত মদ পান করেন। অভিযান শুরু হলে র্যাবকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। নিজের মদ পানের কথাও স্বীকার করেন। অভিযান চলাকালীন সময়েই তার ডোপ টেস্ট করে র্যাব। সেটার রেজাল্টও পজিটিভ আসে।
বাংলা জানেন না ইরফান
ছোটবেলা থেকেই কানাডায় থাকার কারণে বাংলা ভাষার সঙ্গে তেমন সম্পর্ক ছিল না ইরফানের। হঠাৎ করেই দেশে ফিরে রাজনীতি শুরু করেন ইরফান। তবে বাংলা ভাষার চর্চা তখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি তিনি। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন সময়ে আদালতের কাছে অপরাধের স্বীকারোক্তি লেখার সময় বাংলার চেয়ে ইংরেজি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কথা জানিয়েছিলেন ইরফান। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত সেটাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বাংলা লিখতে অপারগতা প্রকাশ করেন এই কাউন্সিলর। পরবর্তীতে অন্য একজনের সহায়তায় বাংলা লেখা দেখে, নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তিমূলক স্টেটমেন্ট দেন ইরফান।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ইরফানের বাংলাটা খুব একটা ভালো না। সে ইংরেজি বলতে ও লিখতে অভ্যস্ত বলে মনে হয়েছে। আদালতের আদেশের নিজের নাম বাংলা লিখতেও অপারগতা প্রকাশ করেন।
রহস্যজনক চিরকুট
অভিযান চলাকালীন সময়ে ইরফানের কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ অক্টোবরের তারিখ দেওয়া পাঁচ লাইনের একটি চিরকুট উদ্ধার করে র্যাব। চিরকুটে লেখা আছে, ‘৭৮/ ১ মৌলভীবাজারের ভাঙ্গার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য চকবাজার মডেল থানা আমাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। যার কারণে আমরা নিশ্চিন্তে এবং নির্বিঘ্নে শামীম স্টোরের দখলে থাকা বিল্ডিং ভাঙ্গা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং উক্ত কাজে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য চক-বাজার মডেল থানার ওসি মহোদয়কে উপহার স্বরূপ।’
অবশ্য এই চিরকুটের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার। তিনি বলেন, আমার এই ধরনের কিছু মনে পড়ছে না। এটি অনেক আগের হলেও হতে পারে। আমি তাদের এ ধরনের কোনও কাজে সহযোগিতা করিনি। উপহারের তো প্রশ্নই আসে না।
অন্যদিকে বিকেলে র্যাব সদর দফতরে সার্বিক বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, এই অভিযানে আমরা অনেক কিছুর সঙ্গে আলামত হিসেবে উল্লেখযোগ্যভাবে ৩৮টি ওয়াকিটকি পেয়েছি এবং তিনটি ভিএইচএফ সেট (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) পেয়েছি। এসকল বিষয় অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি আমাদের জানান, মূলত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যক্তিগত খরচে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন। কিন্তু র্যাব পরবর্তীতে জানতে পেরেছে, মূলত এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্যই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ ধরনের ব্যবস্থা তিনি নিয়েছেন।
র্যাবের এই পরিচালক বলেন, ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ধরতেই সেখানে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। পাশাপাশি র্যাবের কাছে সুনির্দিষ্ট একটি তথ্য ছিল যে, এই ভবনে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক রয়েছে। যার সত্যতা মিলেছে। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবেন।
প্রসঙ্গত, নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সোমবার (২৬ অক্টোবর) বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফানকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় অবৈধভাবে ওয়াকিটকি ও মাদক রাখার দায়ে ইরফানকে ১ বছর ও ৬ মাস করে মোট দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
Related News
সাত শর্তে বাড়িতেই দুই বোনের দুই বছরের সাজা
অভয়নগর ঃ মাদক মামলায় দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত দুই বোনকে সাত শর্তে বাড়িতে সাজাভোগের আদেশ দিয়েছেনRead More
সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ: সহকারী কর কমিশনার বরখাস্ত
প্রেসওয়াচ রিপোর্টঃ শেষ পর্যন্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরি হারালেন এনবিআরের সহকারী কর কমিশনার মেজবাহ উদ্দিনRead More