সোনাভানেরপুঁথি ও আমাদের সুশীল শ্রেণী(?) -নজরুল ইসলাম
গ্রামে গঞ্জে আগে সন্ধ্যার পরে পুঁথি পাঠের আসর বসত।আমি যখন ৪র্থ বা ৫ম শ্রেণীর ছাত্র তখনই বাবা আমাদের গ্রামের আসকর আলীর(মানিকের দাদা) কাছ থেকে পুঁথি নিয়ে আসতেন, বাড়ীর মা চাচীদের আমি পুঁথি পড়ে শোনাতাম।তখন থেকেই আমার ছন্দ বা কবিতার প্রতি আগ্রহ জন্মে।কিছুই হয়না তারপরও তখন থেকেই আমি টুকটাক লেখার চেস্টা করি।তখন গাজী কালু, সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল,জঙনামা(কারবালার কাহিনী) ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয় ছিল।সোনাভানের পুঁথিও বেশ জনপ্রিয় ছিল।
সেখানে কয়েকটি লাইন ছিল
লাখে লাখে সৈন্য মরে
কাতারে কাতার?
গনিয়া শুমার করে
দুই তিন হাজার………
করোনায় যখন সারাবিশ্ব আতংকিত, ইতালী, ফ্রান্স,স্পেন,আমেরিকার মত দেশ যখন করোনায় নাকাল পর্যুদস্ত তখন আমাদের সুশীল শ্রেণী(?)বিশেষজ্ঞ (বিশেষ অজ্ঞ) আবহাওয়া বার্তার মত করোনার যে পূর্বাভাষ দিলেন সেটা শুনে আমিও ধারণা করলাম কয়েক লাখ মানুষ মারা যাবে।
বাস্তবে যখন এতলোক মরল না বা মরছে না যখন আমরা হাফ ছাড়ছি,আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করছি, তখন হাল আমলের জবরদস্ত সুশীলকূল শিরোমণি আসিফ নজরুলরা বড়ই নাখোশ বাংলাদেশে এত কম মরল কেন!পড়তায় না মিললে যেমন ছোট বাচ্চারা খেলার মাঝখানে সবকিছু ঠেলেঠুলে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে বলে, তোর সাথে খেলতাম না।ওঁদের ভাব এখন অনেকটা সেরকম।এই মৃত্যু মানিনা!মানবনা!
আসিফ নজরুল আগে নিরপেক্ষতার নামে বানরের পিঠা ভাগের মত দুই দিকেই কামড়াতেন,বেশ কায়দাকরে একদিকে কামড়টা একটু বেশী দিতেন।ইদানীং তিনি আর রাখঢাক না করে একদিকেই কামড়াচ্ছেন।মাশাল্লাহ রিজভী ফেইল। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে More christian than Roman – রোমানদের চাইতেও খাঁটি খ্রীস্টান। মানে সে এখন রিজভীরদের চাইতেও সুশীল পুচ্ছধারী বড় বিএনপি।এমন কোন ইস্যু নেই সে সরকারের বিরুদ্বে লিখছে না।আমরাও চাই সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা করুক,এতে সরকার সাবধান হবে জনগণের ফায়দা হবে।কিন্তু মৃত্যু কেন কম এই জাতীয় বালখিল্য লেখা সরকার বা জনগণের কি উপকার করছে!
মফস্বলে গ্রাম্যহাটে একধরনের কবিরাজ সর্বরোগহর বটিকা বিক্রয় করে, এক বড়িতেই সব রোগের উপশম।আসিফ নজরুল সেই কবিরাজের মত দৈনন্দিন রাস্ট্রের সমস্ত সমস্যার জলবৎ তরলং সমাধান দিয়ে দিচ্ছেন।সেইগুলি জামাতী পেজ বাঁশেরকেল্লা খোঁয়াড়ের মর্দে মুমীনরা গোগ্রাসে গিলছে লাইক শেয়ার দিচ্ছেন।তাঁর লেখা বর্তমান হতাশাগ্রস্ত ম্রিয়মান জামাত বিএনপির কাছে সঞ্জীবনী সুধা,মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত পথিকের কাছে এক আজলা পানি যেমন মহামূল্যবান, তেমনি তাঁর লেখা তাদের কাছে প্রাণদায়ক,সোনার জিয়নকাঠি। তিনি যাই লিখুক না কেন, আহা মরি মরি!স্যার কি লিখেছেন!সেখানে আপনি যদি তাঁর মিল না রেখে কমেন্ট করেন তখন দেখবেন জামাতের ছানাপোনারা কিভাবে আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।আমি এনজয় করার জন্য মাঝে মাঝে কমেন্ট করে থাকি, দেখি তাদের থলের বিড়াল কতটা মিঁউ মিঁউ করে।তিনি তাদের কাছে আশার বাতিঘর।
এটা অনস্বীকার্য ইতালী,ফ্রান্স,আমেরিকা ইত্যাদি উন্নত দেশগুলো আমাদের দেশ থেকে শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থায় যোজন যোজন এগিয়ে আছে।বিশ্বের সবচাইতে জনবহুল দেশ, আবার আইন না মানাই যাদের প্রবৃত্তি, আমরা তাদের মত করে নিঁখুত মৃত্যুর হিসেব রাখা বোধহয় সম্ভব হচ্ছেনা।তাই বলে সোনাভানের পুঁথির মত লাখে লাখে, কাতারে কাতারে মানুষ মরছে এটাই বা কতটুকু সঙ্গত?আর মৃত্যু কম হচ্ছে বলে ইনিয়ে বিনিয়ে আসিফ রিজভী গংদের মত নানা কাহিনী ফাঁদব, এটাইবা কতটুকু সুবিবেচনা প্রসূত!?
লেখক-নজরুল ইসলাম,কবি,সংগঠক ও ৭৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা ।