নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমন্বিত উন্নয়নে ডা. মমতাজ বেগমের অবদান প্রাত:স্মরণীয়

রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকার বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ডা. মমতাজ বেগমের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। মরহুমের পবিত্র স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তার আত্মার শান্তি কামনা করছি । ডা. মমতাজ বেগম ছিলেন নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নারী উন্নয়নের রূপকার।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমন্বিত উন্নয়নে ডা. মমতাজ বেগমের অবদান প্রাত:স্মরণীয়

তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষিত নারী-সমাজ সৃষ্টি করতে না পারলে দেশের সমন্বিত উন্নয়ন ব্যাহত হবে। নারীর অধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে নারী শিক্ষার গুরুত্বারোপ করেছিলেন। নারী উন্নয়ন ও শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি সকলের জন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসাবে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে অবহেলিত এবং অসচ্ছল নারীর শিক্ষা প্রসারের যে ধারা তিনি সূচনা করেছিলেন তারই সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।তার উদ্যোগ আজ সারাদেশে নারী শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক জাগরণের সৃষ্টি করেছে।তাই তাকে বলা হয় আধুনিক বাংলার রোকেয়া। মেধা, যোগ্যতা এবং কর্মগুণে সমাজ সেবার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন বিশিষ্ট মানবিক চিকিৎসক ডা. মমতাজ বেগম। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসা অঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ের শিল্প-বাণিজ্য গ্রুপ প্রিমিয়ার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান।

ডা. মমতাজ বেগম এর জন্ম এক শিক্ষিত অভিজাত পরিবারে। তাঁর পিতা মরহুম আবু তৈয়ব এবং মা মরহুম আলহাজ আনোয়ারা বেগম। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দারুণ মেধাবী। মমতাজ বেগম কৃতিত্বের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন এবং দীর্ঘ সময় চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

চিকিৎসা পেশা থেকে অবসর নেয়ার পর নিজেদের পারিবারিক শিল্প-বাণিজ্য সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত হন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘এই পৃথিবীতে যা কিছু কল্যাণকর অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। ঠিকই একইভাবে বলা যায় দেশখ্যাত শিল্প-বাণিজ্য গ্রুপ হিসেবে প্রিমিয়ার গ্রুপের এই যে ব্যপ্তি, এই যে বিস্তৃতি ও সাফল্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ.বি.এম. ইকবালের সহযোদ্ধা ও রানিংমেট হিসেবে তাঁর স্ত্রী ডা. মমতাজ বেগমের ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরণীয়। চিন্তা চেতনায়, মেধা ও মননে আধুনিক এবং দূরদৃষ্টির অধিকারী ছিলেন ডা. মমতাজ বেগম। নিজের কাজকে কখনো ছোট মনে করেন না। বরং কাজকে করতে পারাকে গর্বের সাথে অনুভব করতেন।

ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনের উজ্জ্বল নারী তারকা ডা. মমতাজ বেগম প্রিমিয়ার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য যেসব দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম তিনি প্রিমিয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লি. (পাঁচ তারকা অ্যামেরিকান চেইন হোটেল হিলটন), প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লি. (পাঁচ তারকা অ্যামেরিকান চেইন হোটেল রেনেসন্স ঢাকা গুলশান)-এর ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি নারীর উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও রেখে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা (আরইউডি) এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং এর বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপার্সন।

বিদুষী রমণী ডা. মমতাজ বেগম গালফ মেডিকেল সেন্টার এবং বুখারা রেস্টুরেন্ট (প্রা.) লি.-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এছাড়া তিনি সেন্টর লি. নওরীন ইলেকট্রনিক্স লি., বেঙ্গল টাইগার সিমেন্ট ইন্ডা. লি., এয়ার কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল লি. এর পরিচালক। তিনি বিকন ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল লি. এর চেয়ারম্যান।

ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনের সফল নারী উদ্যোক্তা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মমতাজ বেগম বরাবরই একজন প্রচারবিমুখ উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব। তিনি মনে করতেন, নিষ্ঠার সাথে সৎ উদ্যোগ এবং ভালো কাজে অংশ নেয়া ইবাদতের সামিল।

লেখক পরিচিতি: ড.মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক (দিপু সিদ্দিকী),কলা অনুষদের ডিন ও শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা।

Share: