বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা বরাবরই আলোচিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাম্প্রতিক সময়ে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছেন। সরকারবিরোধী সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তার প্রতিক্রিয়া, দেশের রাজনীতিতে নতুন এক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
মামলা ও সমালোচনার প্রেক্ষাপট
জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ আনা হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় একজনকে হত্যার চেষ্টার জন্য। কিন্তু মামলার বাদী মো. বাকের, যিনি বনশ্রী এলাকায় সবজি বিক্রি করেন, প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে তিনি আসামিকে চেনেন না এবং কতিপয় আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি মামলাটি করেছেন। আসার কথা এই বিশ্লেষণটি লেখা কালীন সময়ে এই আইনজীবীর আগাম জামিন মামলা মঞ্জুর হয়েছে।
এই পরিস্থিতি দেশের আইনের শাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার প্রতীক। আগে বহুবার “ভুতুড়ে মামলা” নামে পরিচিত জাল মামলা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের হয়রানি করা হয়েছে, যেমনটি আমরা চাঁদপুরে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে দেখা গিয়েছিল। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর সহ বিরোধীদলীয় নেতাদের নামে শাহবাগে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি পোড়ানোর মামলা, সাবের হোসেন চৌধুরীর নামে প্লেট চুরির মামলা ইত্যাদি। এই উদাহরণগুলো আজও মানুষের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দেয়—দেশের আইনের শাসন কি সত্যি কার্যকর?
রাজনৈতিক দুষ্টচক্র ও দুর্নীতি
বিগত সরকারের আমলে দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ করে বড় বড় মেগা প্রকল্পে বিপুল দুর্নীতি ও অপচয়ের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জনগণের আস্থা তাতে হারিয়ে যাচ্ছে, কারণ ব্যাপক অর্থপাচার ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ।
দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বাস্তবতা এবং প্রকৃত সুফল কতটুকু তার নির্ণয় করা না গেলেও দুর্নীতি অর্থলোপাট হয়েছে ব্যাপক। সরকারবিরোধী ও সমালোচকদের মতে, এই প্রকল্পগুলোতে “মেঘা দুর্নীতি” হয়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবতা এবং এই প্রকল্পকে ঘিরে যাবতীয় দুর্নীতির শ্বেতপত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করা দরকার বলে জনগণ মনে করে। জনগণ চায় প্রকৃত দুর্নীতি মুক্ত, গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেখানে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে,একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় সকলের শিক্ষা স্বাস্থ্য চিকিৎসা সহ মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। এই সরকার দীর্ঘস্থায়ী নয় এবং তাদের উদ্দেশ্য হল একটি গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে করা মামলার মতো ঘটনা, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে এবং মানুষের মনে একটি অস্থিতিশীলতার জন্ম দিচ্ছে। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে।
বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
জেড আই খান পান্না ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলায় সরকারের সাথে তার বিরোধ শুরু হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, দেশের জনগণ তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে, তবে তাতে সরকারবিরোধী মতামত প্রকাশ করলেই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এই ধরনের মামলা ও হয়রানির মাধ্যমে সরকারের মূল সংস্কারের কাজ ব্যাহত হবে। গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা জরুরি।
উপসংহার
দেশে প্রবাহমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ স্টেশনে দেখা যায় যে, দেশের উন্নয়ন ও আইনের শাসনের জন্য যে বিশ্বাস ও আস্থা প্রয়োজন, তা প্রশ্নাতীত নয়। তাই ভবিষ্যতের জন্য সুষ্ঠু ও মুক্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক মতামত ও সমালোচনা
মোকাবেলায় সঠিকভাবে কাজ করা।