মাহবুব বাশার/প্রেসওয়াচ রিপোর্টঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোই হচ্ছে আমাদের মূল টার্গেট। তিনি বলেন, ‘তাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেজন্য আমরা সবাই কাজ করছি। আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। তার আগে তাদের ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রথম সভা শেষে বুধবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সোয়া দুইটা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে সংঘটিত অভ্যন্তরীণ দাঙ্গার কারণে ১৯৭৮ ও ৭৯ সালে, ১৯৯১ ও ৯২ সালে এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ৩৫টি কেন্দ্রে অবস্থান করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত দুই দফায় ৪০৬টি পরিবারের প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসানচরে একটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট এবং একটি থানার কাজ চলছে।’ ভাসানচরে উৎসুক জনতা যাতে না যায়, সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনী এবং এপিবিএনের দুইটি ইউনিট কাজ করছে। একইসঙ্গে পুলিশ, বিজিবি, আনসার এবং র্যাব কাজ করছে। মাদকসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় পুলিশ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী টহল দেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে ১৪২ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১১১ কিলোমিটার বেড়া তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি, আগামী জুনের (২০২১) মধ্যে বেড়া তৈরির কাজ শেষ হবে। এছাড়া কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এতে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তাদের নিরাপত্তাও দেওয়া যাবে ‘
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ বড় একটি চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গা নাগরিকরা তাদের স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসে। এসবের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সেখানে খুনোখুনিও হচ্ছে। সেজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জাতিসংঘ সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি ১৮০টি এনজিও কাজ করছে। ভাসানচরেও ইতোমধ্যে ২২টি এনজিও কাজ শুরু করেছে। কিছু নিষিদ্ধ এনজিও এবং অনিবন্ধিত কোনও এনজিও ক্যাম্পগুলোতে কাজ করতে পারবে না মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মন্ত্রী জানান,কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১৩৪টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। পাঁচ হাজার ৪৯৫টি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ভাষা এবং ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আগমনে ক্যাম্প এলাকায় বনায়ন ধ্বংস হয়ে যায়। এজন্য সেখানে বৃক্ষ ও ঘাস রোপণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।