দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসসহ চলমান কাজ জনস্বার্থে ঈদের আগের ৭ দিন ও পরের ৭ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীেেগর সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ বুধবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নবনির্মিত ভবনে ঈদ সামনে রেখে দেশের সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁর বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঈদের আগের সাতদিন ও পরের সাতদিন ফ্লাইওভার, আন্ডারপাসসহ চলমান কাজ জনস্বার্থে বন্ধ রাখতে হবে। আপনারা জানেন, সরকার ইতোমধ্যে ঈদে কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। তাই, আপনারা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন ১ আগস্ট উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদ উল আযহা। কঠিন এক বাস্তবতায় আমরা এবার ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। একদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি। অন্যদিকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়া বন্যা। সরকার নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে গণপরিবহন চলাচল অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই করোনার পাশাপাশি শ্রাবনের অবিরাম বৃষ্টি সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা এবং তাৎক্ষণিক মেরামতে অতীতের মতো সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণের ঈদ যাত্রা করতে হবে নির্বিঘœ।
সড়ক মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এক এক জোনের বাস্তবতা এক এক রকম। গাড়ির চাপ মহাসড়ক ভেদে ভিন্ন। তাই আমি চাই আপনারা জোন ভিত্তিক ও আন্তঃজোন সমন্বয় করে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
তিনি বলেন, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হতে পারবে না। বৃষ্টি যেন অজুহাত হিসেবে না আসে। গর্ত হওয়ার সাথে সাথে মেরামত করুন। না হয় জনভোগান্তি বাড়াবে। কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা জোনের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি বলে মনে করি। এক্সিট পয়েন্ট, বিশেষ করে ভুলতা, নবীনগর, চন্দ্রা, গাজীপুরের পুরো করিডোর, নবীনগর-চন্দ্রা করিডোর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর-চন্দ্রা করিডোর ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। পুলিশের সহযোগিতা নিতে হবে। এসব এলাকায় গাড়ি থামতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক বা কমিউনিটি পুলিশের সাপোর্ট নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত সড়ক-মহাসড়কের খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং যেকোনো মূল্যে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, গ্রাম মুখি মানুষকে সতর্ক করে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত ও গ্রামে অবস্থান করতে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো যেতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতু থাকতে পারে। বৃষ্টি বন্যা জনিত পানির প্রবাহ সেতু ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নজরদারিতে রাখতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু এবং বিকল্প ঠিক করে রাখতে হবে আগেই।
তিনি বলেন, নবীনগর, বাইপাইল, ইপিজেড, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গাজীপুর, ভুলতা, কাঁচপুর এলাকায় অসংখ্য গার্মেন্টস। এ সব গার্মেন্টস যেদিন ছুটি দিবে সেদিন ঘরমুখো মানুষের প্রচন্ড চাপ তৈরি হবে। চাপ সঠিকভাবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ম্যানেজ করতে আগেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিজিএমইএর সাথে সমন্বয় করুন। প্রয়োজনে বিআরটিসির বাস এ সকল পয়েন্টে আগে থেকে স্ট্যান্ডবাই রাখুন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি টঙ্গী- গাজীপুর সড়ক নিয়ে উদ্বেগে আছি। এ মহাসডকে বিআরটির প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রয়োজনে গাজীপুরের মেয়র, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। এবার বিশেষ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এমন পরিস্থিতি আমাদের জাতীয় জীবনে আগে আসেনি। তাই নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সড়ক-মহাসড়কে এখন গুড সেপ আছে। তবে এক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়িয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। তাই স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে অতীতের মতো আবারো আপনারা সচেষ্ট থাকবেন। ত্যাগ স্বীকার করবেন এ প্রত্যাশা রাখছি। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস, সমন্বয় এবং প্লানিংয়ের মাধ্যমে আমরা করোনার চোখ রাঙানোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে একটি স্বস্তিকর ঈদযাত্রা ও ফেরত যাত্রা উপহার দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সবুজ উদ্দিন খানসহ অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
image_print