প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে নিজের ভাইকে সরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছেন শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গেল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এতে সেখানে রাজনৈতিক অচলাবস্থাও দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করেছে মানুষ।
এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশটির একজন সুপরিচিত আইনপ্রণেতার বরাতে শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা এপি এ খবর দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটি জাতীয় পরিষদ গঠনে একমত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এতে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার পাশাপাশি পার্লামেন্টের সব দলকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে।
শুক্রবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনপ্রণেতা মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এমন দাবি করেছেন। রাজাপক্ষের আগে শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট ছিলেন সিরিসেনা। তিনি সরকারি দলের এমপি হলেও সম্প্রতি প্রায় ৪০ এমপিকে সঙ্গে নিয়ে দলত্যাগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের মুখপাত্র রোহান ওলিওয়াইতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট কোনো যোগাযোগ করেননি। যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে তা অচিরেই ঘোষণা করা হবে।
দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে থাকা শ্রীলঙ্কা ঘোষণা দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে উদ্ধার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় পৌঁছানোর আগে কোনো বিদেশি ঋণ শোধ করতে পারবে না।
চলতি বছরে দেশটিকে ৭০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ শোধ করার কথা রয়েছে। আর ২০২৬ সাল নাগাদ দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ১০০ কোটিরও কম বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে।
এতে শ্রীলঙ্কায় আমদানি মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি, রান্নার গ্যাস ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহে তাদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নাগরিকদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
গেল দুই দশকে শ্রীলঙ্কানদের জীবনের প্রতিটি দিকে প্রভাব বিস্তার করে এসেছে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে ও তার পরিবার। চলমান সংকটের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে মার্চ থেকে সড়কে বিক্ষোভ চলছে। এ ঘটনায় দায়ীদের রাজনীতি থেকে অবসরের দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগে চাপ দিতে লোকজন দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সাধারণ ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন। এ সময়ে গণপরিবহন চলাচলেও বাধা দেওয়া হয়েছে।
এরআগে মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাস করেছিলেন রাজাপক্ষে। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে একটি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাজাপক্ষের ভাইদের নেতৃত্বে কোনো সরকারে যোগ দিতে অস্বীকার জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলেও এপ্রিলে রাজাপক্ষে পরিবারের অন্য সদস্যরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে তারা সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো দুর্বল ও বিভক্ত হওয়ায় পার্লামেন্টে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।