বেরোবিতে জাতীয় পতাকা অবমাননা:গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই তদন্ত রিপোর্ট করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট/প্রেসওয়াচ রিপোর্টঃ

রংপুর: মহান বিজয় দিবসে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা অবমাননার মামলার প্রধান অভিযুক্ত উপাচার্য ড. অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং ভিসির পিএস আমিনুর রহমানকে বাদ দিয়ে ১৯ জনের নামে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। তদন্ত রিপোর্টে ভিসি এবং ভিসির পিএসের নাম না থাকায় তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাদিপক্ষ। তবে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই তদন্ত রিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।

জানা যায়, গত বুধবার রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজহাট আমলি আদালতে ১৮ জন শিক্ষকসহ ১৯ জনের নামে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ইজার আলী। তিনি বলেন, ‘এজহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানসহ ১৮ জন শিক্ষকসহ এক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে ১৯ জনের নামে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়েছে।’

পতাকা অবমাননার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহামুদুল হক এবং মশিউর রহমানের দায়েরকৃত দু’টি অভিযোগের তদন্ত করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজহাট আমলি আদালত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষুব্ধ বাদিপক্ষ। ভিসি যে মামলার প্রধান আসামি সেই মামলার বাদি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক। তিনি বলেন, ‘পতাকা অবমাননার প্রধান অভিযুক্ত ভিসিকে বাদ দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। তাই নিম্ন আদালত কী নির্দেশ দেন তার অপেক্ষায় আছি, এরপর প্রয়োজনে উচ্চ অদালতে যাবো।’

ভিসির পিএস আমিনুর রহমান যে মামলার তালিকায় দ্বিতীয় নম্বর আসামি সেই মামলার বাদি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিগত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ। তদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমি এই তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবো। চেতনার প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

তবে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই তদন্ত রিপোর্ট করা হয়েছে দাবি করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইজার আলী বলেন, ‘রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে আদালতে বাদিপক্ষ চ্যালেঞ্জ করবে।’

রংপুর মেট্রোপলিটন আদালতের ইন্সপেক্টর নাজমুল কাদির বলেন, ‘প্রসিকিউশনের আলোকে আদালত তার সুবিধামতো সময়ে সমন জারির মাধ্যমে অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেবেন।’

পুলিশের দেয়া তদন্ত রিপোর্টে নাম থাকা ১৮ শিক্ষক এবং ১ কর্মকর্তা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম ও শাহ জামান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নুর আলম সিদ্দিক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম সরকার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার।

বেরোবিতে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে বিজয় ‘উদযাপনে’ শিক্ষকরা

এছাড়াও পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চার্লস ডারউইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রামপ্রসাদ বর্মণ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো. রহমতউল্লাহ, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েদ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সেকশন অফিসার শুভঙ্কর চন্দ্র সরকারের নাম রয়েছে প্রতিবেদনে।

উল্লেখ্য, মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকার নকশা বিকৃতি করে নিজেদের মতো করে তৈরি করা জাতীয় পতাকা নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্বাধীনতা স্মারকে ছবি তোলেন বর্তমান প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা বেশ কয়েকজন শিক্ষক। পরদিন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এবং সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা তাজহাট থানায় দু’টি মামলা করেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ১৯ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়ে একটি প্রতিবেদন ভিসির কাছে দাখিল করে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে ঘটনার পর থেকেই মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

Share: