জায়েজ যেথা উৎকোচ —জাঁ-নেসার ওসমান

– হেঁ হেঁ, দাদাদের. দেশে ঘুরে এলুম।
– এ আবার এমুন নতুন কি?
– আরে. না, হেইডা নতুন না। তবে সব অসুইক্কা বেডা বেডি, দাদাদের. দেশে যায়। কিন্তু আমি গেলুম, বিনয়, বাদল, দীনেশ বাগ। দাদাদে সচিবালয়।
– তো, হ্যেতাগো, চেকরেটারিয়েটে অসুইক্কা বেডা-বেডি, মাইনে রোগী বর্তি নি!
– আরে কি বলচিস, প্রশাসন অসুস্থ্য হবে কেন সব শাকাহারী-ব্রহ্মচারী স্বাত্তিক ব্রাহ্মণ রে।
– তো হ্যাগে দেশে বামুন হইবো না তো কি যেই গ্রামের নাম লইতে হয় না। হ্যারা বামুন পুরুত হইবো!
– আরে বামুন যে জজমানি নেয় তেমনি দাদাদের. সচিবালয়ে প্রায় সবাই উৎকোচ মানে ঘুষ খায়!!
– চচিবালয়ে গুস খায়। দাদারা চামে চামে গুস খায় কি নয়াবার্তা হুনাইসেননি হিঃ হিঃ।
– আরে গাঁড়ল ঘুষ বা উৎকোচ নতুন নয়, বিষয়টা হচ্ছে দাদারা ঘুষটাকে জায়েজ করেছেন। তোকে বোঝাবার জন্য বলি বিবিডি বাগের কর্মকর্তারা উৎকোচ মানে ঘুষকে হালাল করেছেন।
– হেঁঃ হেঁঃ এইডা আবার কি কতা। আঁরাঁর রাবিশ মন্ত্রী তো ইস্পীড মানি হালাল করে।
– ওহে মুড় বালক রাবিশ মন্ত্রী কেবল মাত্র ঘুষ বা উৎকোচকে বৈধতা দিতে স্বচেষ্ট হয়েছেন, নতুন নামে ডাকতে চেয়েছেন কিন্তু ঘুষ তো ঘুষ, অপবিত্র নোংরা।
– আন্নে কিয়া কন, গুস আবার নোংরা নি, শুয়োরে নোংরা খায়- বায়সের কাচে বিষ্টা পায়স তো, ঘুষখোরের কাচে ঘুষ বিরিয়ানি।
– তাই বলে বায়সের মানে কাকের মতো মানুষ গু মানে ঘুষ খাবি ছিঃ।
– ছিঃ ছিঃ মারায়েন না। বিশ্বে বর্তমানে ঘুষ না দিলে কুনো কামই হয় না।
– আরে উৎকোচ বা ঘুষ নয় আমি বলছি, দাদারা ঘুষকে জায়েজ বা হালাল করেছেন ফলে, বুচলি না, উৎকোচ গ্রহণ আর পাপ নয়- ইহা মহ-পবিত্র পূণ্যের কাজ।
– ঘুষ খাওয়ান মহা-পবিত্র পূণ্যের, কাম ত-লায় চলেন, দাদাগো দেশে যায়া পূণ্যের, কাম মানে ঘুষ খায়া পরিশুদ্ধ হয়া আমু।
– যা ব্যাটা তুই ওয়ার্ক পারমিট পাবি কোথায়।
-ক্যা আমাগো দেশে নয় দশ লাখ দাদারা কাম করে না??
– ওরে তুই বুইচিস না ক্যানো, আমাদের ছেলেরা ওদের সাথে কাজে পারে না রে। দাদাদের, দেশে কেবল ঘরের চাকর-চাকরানী ছাড়া তোদের দেশের লোকের কাজ নাই রে—
– দাদারা আঁরারে ছুটো কাম দেয়, হ্যাতারা বালই জানে ছোট কামে গুস্ কাওয়েনর স্কুপ মানে সুযুগ নাই। -হেঃ হেঃ ওরে চাকর-চাকরানী দাদার দেশে উৎকোচ খাইবি নি??

– আরে ভাই কে বলেছে, ছোট কাজে ঘুষ বা উৎকোচের সুযোগ নেই। এই যে সেদিন ড্রাইভারের শত কোটি টাকার খবর বের হলো- আর পাসপোর্টের, অফিস সহকারির আলীশান বাড়ী—
– মিয়া বাই, এই ফিরিস্তি হুনতে হুনতে কান হচি গেছে গোই আর বালা লাগের না।
– কিন্তু ভাই তোমার দেশে এসব তো উৎকোচ-ঘুষ যা তোমাদের. আইনে দন্ডণীয়। কিন্তু দুদক ধরে, দাদাদের, দেশে উৎকোচ বা ঘুষ হালাল মানে আইনতঃ সিদ্ধ।
– ঘুষ জায়েজ!! কিয়া কন ঘুষ হারাম না??
– জ্বী না, উৎকোচ বা ঘুষ হারাম নয়।
– কেন? ক্যেন? মানে কি কারনে ঘুষ হারাম ন? মানে ঘুষ হারাম নয়?
– দাদাদের, ক্রিয়েটিভিটি মানে উৎভাবনী শক্তির বলিহরি।
– আরে ঘুষ কেমনে হালাল কইরেছে হিয়া কন?
– বলছি বলছি! শোন।
– কন?
– দাদাদের দেশের টাকার মাঝে কার ছবি?
– কার ফডু?
– মহাত্মা গান্ধী, মানে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর ছবি।
– ও কে, ট্যাকার মইধ্যে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর ছবি।
– গান্ধী জ্বী, দাদাদের কি?
– দেশ রতœ ডেঁডাইয়াগোর বাবা।
-তো??
– আরে ভাই এইখানে তো মজা, এখন কেউ যদি মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর ছবি তোকে দেয় তুই কি না নিয়ে পারবি??
– না, মহান দেশের মহান নেতার ছবি না লইলে তো পাপ হইবো।
– জ্বী, এখন দাদাদের দেশে কেউ যদি দেশের প্রধানের দাদাদের দেশের বাবার ছবি দেয় এখন সেটা গ্রহণ করা মহা পবিত্র পূণ্যের কাজ বলে গৃহীত। ফলে সি.বি.আই. সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশেন ফেইল। এরা আর মহাত্মা গান্ধীর ছবি সম্বলিত নোট গ্রহণ করাকে পাপ বা বেআইনী বলতে পারছে না। ফলে উৎকোচ হালাল।
– পয়েন্ট তো একটা বালাই বাইর করচে। বাউরে দাদাগো খুরে, পেন্নাম! বাইসা একগুন কথা কই?
– বলুন দাদা বলুন?
– আঁই কই কি, আন্নে এই বিষয়টা আর কাউরে কইয়েন না?
– কেন কেন বললে কি হবে বলুন??
– কইলে দাদাগো মতুন পাকিস্থানি ভাইরা আবার পবিত্র ঘুষ খাওয়া শিখি হালাইবো। হ্যোগো ট্যাকায় আবার দাদাগো আব্বাজান কায়েদ-ই-আযমের ছবি।
– ঠিকই বলেছিস ওদের রূপীতে আবার ওদের জাতীর, আব্বাজান কায়েদ-ই-আযমের ছবি সম্বলিত।
– তো আঁই কোনায় যাইয়ুম— ডিজিটাল যুগে ঘুষ লওন পবিত্র ও পূণ্যের কাজ!! কবে হুনুম ধর্ষনও পবিত্র বিয়ার প্রথম পদক্ষেপ!!হে চিষ্টি কর্তা আঁরে, বাঁচান!!হেতারা আঁরে টাইট মারি হালাইবো??
– অ্যাঁ
– হ্যাঁ।

জাঁ-নেসার ওসমান- চলচ্চিত্র পরিচালক ও সমাজ সংস্কারক লেখক।

Share: