আজ ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

প্রেসওয়াচ রিপোর্টঃ আজ ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ৪৯ বছর আগে এই দিন পাকিস্তান সেনা সদস্য ও তাদের দোসররা মানিকগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। হানাদারমুক্ত এই দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। দিনটিকে স্মরণীয় এবং নতুন প্রজন্মকে জাগ্রত করতে প্রতি বছর উৎসবমুখর পরিবেশে ১৫ দিন ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়ে এলেও করোনা মহামারির কারণ এবার থাকছে না কোনও আয়োজন।

জেলার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ানে এবং ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। মুক্তিকামী মানুষ সরকারি মালখানা থেকে ছিনিয়ে নেয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ভারত থেকে অস্ত্র চালনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিরোধ শুরু করেন। পাকবাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, রাজাকারদের আক্রমণ, ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট খন্দকার চান মিয়াকে চেয়ারম্যান করে মো. মোসলেম উদ্দিন খান হাবুমিয়া, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী,মীর আবুল খায়ের ঘটু,মফিজুল ইসলাম খান কামাল এই সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এদের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা হয়। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ জন মুক্তিসেনা পঙ্গু হয়ে যান। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পান।

মানিকগঞ্জ সিএন্ডবি’র ডাকবাংলো ছিল পাক হানাদার বাহিনীর সদর দফতর। এখান থেকেই হানাদার এবং তাদের দোসররা নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করতো। আর মূল ব্যারাক ছিল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পিটিআইয়ের মূল ভবনে।

মানিকগঞ্জে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে খ্যাত গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ। সিংগাইর থানার এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন তোবারক হোসেন লুডু। গোলাইডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প দখলের জন্য ৩ শতাধিক পাকবাহিনী ১০/১২টি নৌকা নিয়ে সেখানে আসে। এই খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ২টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয় এবং তাদের আয়ত্তের মধ্যে আসার পর দ্বিমুখী আক্রমণে একজন কর্নেলসহ ৮১জন পাকবাহিনী মারা যায়।

১৩ ডিসেম্বর বিজয়ী বেশে মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সমবেত হন। আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল হক চাঁন মিয়ার সভাপতিত্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ জন মুক্তিসেনা পঙ্গু হয়ে যান। ৪জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পান।

খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতিক) এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।

Share: