বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় অনুমোদন ছাড়াই ভূগর্ভে ট্যাংকি স্থাপন করে ও ওপরে ডিসপেনসার মেশিন বসিয়ে অবাধে পেট্রোল, ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মুদি দোকানেও প্রকাশ্যে চলছে তেলের কেনাবেচা। এতে যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তেলের ডিলার ও ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার ১২টি উপজেলার প্রতিটিতে ২-৩টি করে জ্বালানি তেলের অন্তত ৩০টি অবৈধ পাম্প রয়েছে। প্রভাবশালীরা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়াই মাটির নিচে ট্যাংকি করে ও ওপরে ডিসপেনসার মেশিন বসিয়ে অবাধে তেলের ব্যবসা করছেন।
তাদের এ ব্যবসায় জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র ও বিস্ফোরক অধিদফতরের কোনও অনুমোদন নেই। অনেকে বাসাবাড়ি ও দোকানে পাম্প স্থাপন করেছেন। এতে শুধু প্রকৃত পাম্প মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে। শহর ও উপজেলা পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক মুদি দোকানে বোতলে করে প্রকাশ্যে পেট্রোল, ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি ওপেন-সিক্রেট হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বগুড়ার অন্যান্য এলাকার মতো গাবতলী উপজেলার প্রধান সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি অবৈধ পাম্প রয়েছে। এরমধ্যে নারুয়ামালা বাজারে জামি ট্রেডার্স, কলেজ রোডের আটাপাড়া বাজারে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, নেপালতলী বাজারে সমীর অ্যান্ড সাফি ফিলিং স্টেশন, গোলাবাড়ি বাজারে নুরুল ইসলাম অ্যান্ড সন্সসহ কয়েকটি পাম্প খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
জামি ট্রেডার্স বাড়িতে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাসও বিক্রি করেন। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দোতালা বাড়ির নিচতলার এক পাশে দুটি ডিসপেন্সার বসিয়ে পেট্রোল পাম্প বানিয়ে তেল বিক্রি চলছে।
বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সও একই কায়দায় তেল বিক্রি করছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি বিপিসির পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে কোনও অনুমোদন না নিয়েই তারা ব্যবসা করছেন।
২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক বাজারে নওশিন এন্টারপ্রাইজ নামে অবৈধ পাম্পে আগুন ধরে যায়। এতে প্রাণহানি না হলেও বিপুল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। গাবতলীর পদ্মা অয়েল কোম্পানির কয়েকজন ডিলার এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তেল কোম্পানির কাছে অভিযোগ করেছেন।
জামি ট্রের্ডাসের মালিক আবু বকর সিদ্দিক জানান, তিনি এখনও অনুমোদন পাননি। তবে অনুমোদন পাওয়ার জন্য পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে আবেদন করেছেন।
তবে পদ্মা অয়েল কোম্পানির বগুড়ার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
স্থানীয়রা বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এসব অবৈধ পাম্প ও মুদি দোকানে দাহ্য জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।