‘বাংলাদেশে অনাহারে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি’

উদিসা ইসলাম

ইত্তেফাক, ১৪ অক্টোবর

১৯৭২ সালে সারা দেশে খাদ্য সংকট, অবৈধ মজুতদার আর চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছিল। বঙ্গবন্ধু নানা নির্দেশনা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট ছিলেন পুরো সময়। ১৩ অক্টোবর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে জাতিসংঘ ত্রাণ তৎপরতা বিষয়ক পরিচালক স্যার রবার্ট জ্যাকশন বলেন, ‘ব্যাপকভাবে তদন্তের পর দেখা গেছে আমাদের ত্রাণ তৎপরতার সাফল্য বিচার করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘তবে পুষ্টিহীনতার সমস্যা এখনও বিরাজ করছে।’সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে খাদ্য সংকটের জন্য ত্রাণকার্য ব্যাহত হতে পারে। কারণ, চলতি বছরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে পর্যাপ্ত ফসল হয়নি।’ জাতিসংঘ থেকে পিটিআই জানায়, স্যার রবার্ট জ্যাকশন বলেন, ‘বাংলাদেশের সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং চালের বাজারমূল্যে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা পর পর জাতিসংঘের  যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়—চালের মূল্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।’ বাংলাদেশের ঘটনাবলি সম্পর্কে একশ্রেণির মার্কিন পত্রপত্রিকায় যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তিনি তার নিন্দা জানান এবং বলেন, ‘ওইসব রিপোর্টে বলা হয়, সর্বস্তরে দুর্নীতি রয়েছে। জাতিগুলোর (বিভিন্ন রাষ্ট্রের) সাহায্য সঠিক স্থানে পৌঁছাচ্ছে না, নষ্ট হচ্ছে।’ মজুত ও খাদ্য বাণিজ্যে ফটকাবাজি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ। ভবিষ্যৎ সংকটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটা একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ ব্যাপার।’ এতে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসব মজুতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হলে আগামী বছরের জন্য তা অনুকূল হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। স্যার রবার্ট বারবারই নিশ্চিত করে বলেন, ‘জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর কাজে সন্তুষ্ট এবং একজন লোকও অনাহারে মারা যাননি।’ এতে বুঝা যায়, বাংলাদেশের সব ঘাটতি এলাকায় খাদ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের সংকট পূর্ণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগকারী হার্ডিং ব্রিজ খোলার ফলে সাহায্যের কাজ আগের চেয়ে সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সোভিয়েত বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রাম বন্দর পরিষ্কার করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য সরকারের অবদান প্রশংসার দাবিদার।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়।’

.

” onclick=”return false;” href=”https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2020/10/13/214ec0c5e69ac2cab235628344f90723-5f84cb5049940.jpg” title=”” id=”media_1″ class=”jw_media_holder media_image jwMediaContent aligncenter”>সংবাদ ইত্তেফাকের, ছবি: দৈনিক বাংলাপরিষদে তুমুল বিতর্কবাংলাদেশ গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে পরিষদে বিধি পদ্ধতিতে স্পিকারকে সম্মান প্রদর্শনের বিধি সম্পর্কিত আলোচনাকালে সরগরম হয়ে ওঠে। এছাড়া অধিবেশনে উত্থাপিত সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক হয়। এই সময় স্পিকার পরিষদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার হাতুড়ি হাতে নেন। পরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত নেতা শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্পিকারকে সম্মান প্রদর্শনের সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট বিধি ও উপবিধিগুলো গ্রহণ এবং তার ওপর আনীত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানানোর পরও পরিষদের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক প্রশমিত হয়নি।

গণপরিষদের বিধি পদ্ধতির দশম অধ্যায়ের ৫২ বিধিতে পরিষদের অধিবেশন চলাকালে পরিষদে প্রবেশের সময়, পরিষদ থেকে বের হওয়ার সময়, আসন গ্রহণের সময়, আসন ত্যাগের সময় স্পিকারের প্রতি সদস্যদের ঝুঁকে সম্মান প্রদর্শনের বিধান প্রস্তাব করা হয় এবং স্পিকারের প্রতি ঝুঁকে সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতিতে চার জন সদস্য চারটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

এদিকে গণপরিষদের অধ্যক্ষ (স্পিকার)  মোহাম্মদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিষদের দুই দফা অধিবেশনে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত বিধি কমিটির রিপোর্ট আলোচনা এবং কয়েকটি সংশোধনী গৃহীত হয়। পরের দিন সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

Share: