হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আহমদ শফী। এদিন বিকালেই চট্টগ্রাম থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা আনা হয়।
শোক জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের খবর জেনে আমরা দুঃখিত ও মর্মাহত হয়েছি। আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’
শোক বার্তায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আহমদ শফী।’
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী ইসলামি শিক্ষার প্রসার ও প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বাণী প্রচার এবং ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে তিনি সারা জীবন কাজ করেছেন। তার মৃত্যুতে মুসলিম উম্মাহ একজন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদকে হারিয়েছেন।’
আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শোকবার্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অপর এক শোকবার্তায় ধর্ম সচিব ড. মো. নুরুল ইসলাম মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
শাহ্ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মরহুম শাহ্ আহমদ শফীকে ইসলামি চিন্তা জগতের একজন বরেণ্য আলেম আখ্যায়িত করে তার মৃত্যুকে দেশবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও দেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ে ইহকাল ও পরকালের সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে বঞ্চিত হলো দেশবাসী। তিনি মানুষকে সুপথে চলার জন্য কোরআন-হাদিস যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেভাবে বক্তব্য রেখেছেন। নম্রতা, বিনয় ও সৌজন্যবোধ ছিল তার স্বভাবজাত। ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দেশের স্বনামধন্য ইসলামি চিন্তাবিদ শাহ্ আহমদ শফীর মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ ও খ্যাতিমান আলেমকে হারালো, যেটি সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’
আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুতে উপমহাদেশের এক প্রখ্যাত আলেমের জীবনাবসান হলো। তার মৃত্যুতে দেশের ইসলাম প্রসারের ধারায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ইসলামের সেবায় আহমেদ শফীর অবদান অক্ষয় হয়ে থাকবে। ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে আহমেদ শফীর প্রতিটি উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
দেশের আলেম সমাজে প্রাচীনপন্থী আলেম হিসেবেই পরিচিত ছিলেন আহমদ শফী। ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে সামনে আসেন তিনি। পরে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারা দেশের আলেমরা কর্মসূচি দেওয়ার পর থেকে তিনি আলোচিত ও সমালোচিত হন।
শোক প্রকাশ করেছেন গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম ও খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘বেফাক, কওমি সনদের স্বীকৃতি, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণাসহ মাদারেসে কওমি ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কাজ করেছি। কওমি মাদ্রাসার ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য স্বকীয়তার প্রশ্নে তিনি কখনও আপস করেননি।’
জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন আলেম-উলামা ও তৌহিদী জনতার প্রিয় রাহবার। তার ইন্তেকালে দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সারা জীবন ইসলামের খেদমত করে গিয়েছেন। তিনি দেশে ইসলামি শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বহু আলেমের উস্তাদ। ইলমে দ্বীনের খেদমতের জন্য যুগ যুগ ধরে এ দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে জাতি একজন খ্যাতিমান আলেমে দ্বীনকে হারাল। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’
আহমদ শফীর মৃত্যুতে খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, ‘শাহ আহমদ শফী দ্বীনি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’
শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।