জঙ্গি ছিনতাইয়ের হুমকি: ৬৮ কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার

কারাগার

তবে ঘটনার পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হুমকিদাতাকে শনাক্ত করা যায়নি এখনও। কারা অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কারা সূত্র জানায়, সম্প্রতি লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেল সুপারের কাছে একটি উড়োচিঠি আসে। ওই চিঠিতে কারাগারে আটকে থাকা জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয় তাদের সহযোগী জঙ্গিরা। চিঠির পরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করেও একই হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও জানানো হয়। কারা অধিদফতর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সারা দেশে কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করে।

লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার কিশোর কুমার নাগ  বলেন, ‘আমাদের কারাগারে ২০ জন জঙ্গি রয়েছে। তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য একটি উড়োচিঠি এসেছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পরে কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশে আমরা কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করেছি।’

কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটিকে কারা কর্তৃপক্ষ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। কারণ এর আগে কাশিমপুর কারাগার থেকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির পলায়ন ও ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন এক বন্দির পলায়ন নিয়ে কারা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণে কারাগারে নিরাপত্তা ঢেলে সাজানোর জন্য কারা মহাপরিদর্শক একটি চিঠি পাঠান এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত নিরাপত্তা তদারকি শুরু করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেল সুপারের পাশাপাশি জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার একই উড়োচিঠি লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়েছিল। চিঠি পাঠানোর কয়েকদিনের মাথায় জেলা প্রশাসককে ফোন করেও জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক আবু জাফর  বলেন, ‘উড়োচিঠির পাশাপাশি টেলিটকের একটি নম্বর থেকেও ফোন কল এসেছিল। আমাদের পক্ষ থেকে সদর থানায় একটি জিডি করার পাশাপাশি বিষয়টি সব গোয়েন্দা সংস্থাকেও জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখছে।’

যোগাযোগ করা হলে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা  বলেন, ‘এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা ও স্পেশাল ইউনিটগুলোকেও জানিয়েছি। আমরা কারাগার এলাকায় আমাদের নিরাপত্তাও জোরদার করেছি।’

২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। এছাড়া ২০১৭ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী এলাকায় হামলা চালিয়ে কারাবন্দি হুজি নেতা মুফতি হান্নানকেও ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগেই জানতে পারায় জঙ্গিদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিশেষায়িত ইউনিট ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হামলা করে কারাগার থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো শক্তি ও সামর্থ্য জঙ্গিদের এখন নেই। তারপরও বিষয়টি জানার পরে আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ টেলিটকের যে নম্বর থেকে কল এসেছিল সেটি অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।

Share: