দাম বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচের

বন্দরে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ফের বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। অন্যদিকে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। ভারতে বন্যার অজুহাত তুলে সরবরাহ কমের কথা বলে বাড়ানো হয়েছে পেঁয়াজের দাম। মাত্র একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। এছাড়া কয়েকদিন দাম কম থাকার পর ফের বন্দরে কাঁচা মরিচের দামও বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ৩০ টাকা। এদিকে সিন্ডিকেট করে দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন। অযৌক্তিক দাম বাড়ালে অভিযান পরিচালনারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদিন আগেও বন্দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩২-৩৩ টাকা বিক্রি হলেও, এখন ৩৭-৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় কাঁচা মরিচ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) তা বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

বন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কম হচ্ছে। যেখানে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪০/৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো, বর্তমানে তা কমে ২০/২৫ ট্রাক আমদানি হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানি বেশি হলে দাম কমবে, আর আমদানি কম হলে দাম বাড়বে এটাই নিয়ম। একইভাবে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় আমদানি পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে স্থলবন্দরে পেঁয়াজের বাজার ছিল ১৮/২২ টাকা। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। এর প্রধান কারণ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বন্যা। এ জন্য ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, তাই দাম বেড়েছে। আগে যেখানে পেঁয়াজ কিনতে হতো ৭/৮ রুপি, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ রুপি। এরসঙ্গে কেজিপ্রতি পরিবহন খরচ রয়েছে ৬ রুপি ও ট্যাক্সসহ অন্যান্য খরচ। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৭/২৮ রুপি করে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে বন্দরে ভারত থেকে আসা কাঁচা মরিচেরও ঝাঁজ বেড়েছে। আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশে কাঁচা মরিচের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। মরিচের সরবরাহ কমায় দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি অব্যাহত রেখেছেন আমদানিকারকরা। তবে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বন্যা হওয়ার কারণে সরবরাহ কমে গেছে। এতে বাজার ঊর্ধ্বমুখী। আগে ভারতের নাগপুর, গুলডাঙ্গা ও বিহার অঞ্চল থেকে আমদানি করা হলেও, বর্তমানে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শুধু বিহার অঞ্চল থেকে কাঁচা মরিচ আনা হচ্ছে। এতে বেশি দামে  মরিচ কিনতে হচ্ছে, দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে।

তিনি জানান, গতকাল বন্দর দিয়ে ১৬ ট্রাকে ১০৫ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। যেখানে আগের দিন বন্দর দিয়ে ৩০ ট্রাকে ১৯১ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়।

বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থার বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। সে কারণেই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে হাকিমপুর উপজেলা প্রশাসন মনিটরিং বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বন্দরের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন স্বাভাবিক সময়ে যেভাবে পেঁয়াজ বিক্রি করেন সেভাবেই করবেন। কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Share: