বিগত কয়েক দশক ধরে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অবক্ষয়,নতুন প্রজন্ম ধাবিত হচ্ছে অধঃপতনের দিকে। তাই আমরা যদি এখন থেকেই সচেতন না হই, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না গ্রহণ করি তাহলে তরুণ প্রজন্মের ধ্বংস অনিবার্য। যা সমগ্র জাতির জন্য এক মহা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ ক্ষয়প্রাপ্তি। সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, উদারতা, সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা, কল্যাণবোধ, নান্দনিক সৃজনশীলতা ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী লোপ পাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে বলে সামাজিক অবক্ষয়। আর এই অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, অসহিষ্ণুতা ও সর্বগ্রাসী অশ্লীলতার মতো আরো কিছু বিষয়।এদেরই একজন নোয়াখালীর অপু(অফু ভাই)।সামাজিক অবক্ষয় খণ্ডচিত্র কিম্ভূতকিমাকার পোষাক পড়া অপু এবং তার কিশোর গ্যাং ।এই কিশোর গ্যাং কালচারের মারাত্নক পরিণতির সাম্প্রতিক উদাহরণ। এই সমাজ অবক্ষয়ের আর এক ভয়ংকর অনুষঙ্গ নেশা।কিশোর গ্যাং ও টিকটক অপুর সাম্প্রতিক কদর্যতা ভাবিত করেছে আমাদের।ভেবেছেন কবি ও কলামিস্ট নজরুল ইসলাম।টিকটক লাইকি কিশোর গ্যাং ও সমাজ সংস্কৃতির কদর্যতা নিয়ে লেখকের ভাবনা ডেইলি প্রেসওয়াচ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল –
টিকটিক লাইকি হল একধরনের মোবাইল এপসের সাহায্যে শর্ট ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জনপ্রিয় মাধ্যম। চীন এবং সিঙাপুর ভিত্তিক এপস হলেও সারাবিশ্বে নানা ধরনের টুইস্ট, শিক্ষামূলক মজার মজার ভিডিওর জন্য বেশ জনপ্রিয় মাধ্যম। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাও এই এপস দুইটি ব্যবহার করে থাকে বাংলাদেশেও টিনএজ ছেলেমেয়েদের কাছে এপস দুইটি বেশ জনপ্রিয়। তারা বাহারী রঙের নানারকম হেয়ারস্টাইল করে কিম্ভূতকিমাকার পোষাক পড়ে নানারকম ভিডিও আপলোড দিয়ে থাকে।এই সমস্ত ভিডিও দিয়ে এই টিকটক লাইকি জগতে অনেকে আবার সেলিব্রিটি বনে গেছে।তাদের কারও কারও নাকি লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার সাবস্ক্রাইবারও রয়েছে। এদেরই একজন নোয়াখালীর অপু(অফু ভাই)।
![](https://dailypresswatch.com/wp-content/uploads/2020/08/n1-1-300x151.jpg)
গত ৩রা জুলাই এই সেলিব্রিটি টিকটকার অপু উত্তরা ৮ নং সেক্টরে তার কয়েক শ ফলোয়ার নিয়ে রাস্তাজুড়ে আড্ডা দিচ্ছিল বা টিকটক ভিডিও বানাচ্ছিল।তখন রাস্তায় চলমান এক প্রাইভেট কার থেকে সাইড চেয়ে হর্ণ বাজানো হয়।এই ছিল তাদের অপরাধ।সেজন্য গাড়ীর যাত্রীদের বের করে বেদম মারধর করে।পরে স্থানীয় জনতা তাদেরকে ঘেরাও করে কয়েকজনকে পাকড়াও করে উত্তম মাধ্যম দিতে থাকলে পুলিশ এসে তাদের উদ্বার করে এবং কথিত টিকটক সেলিব্রিটি অপুকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাহারী রংধনু রঙে রাঙা চুল আর অদ্ভূত জামা পড়ে এরা জটলা পাকিয়ে এই সমস্ত ভিডিও চর্চা করে,অদ্ভূত এক বিকৃত ভাষায় কথা বলে, নানা কুরুচিপূর্ণ অঙভঙি করে পথচারীদের বিব্রত করে।
এই সমস্ত কালচারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সমাজ কদর্যতার আর এক ভয়ংকর চিত্র কিশোর গ্যাং।এই গ্যাং গ্রুপগুলোর আবার সিনেমা স্টাইলে নাইন স্টার, ডিসকো বয়েজ ইত্যাদি চটকদার নাম রয়েছে।দাদাগীরী,সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ,স্ব স্ব মহল্লায় নিজস্ব লিডারশীপ অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়াস তাছাড়া পার্শ্ববর্তী মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে হরহামেশাই নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় এরা প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে। এমনকি খুন খারাবি পর্যন্ত গড়াচ্ছে।উত্তরায় আদনান কবির হত্যা,বরিশালে মিন্নি হত্যা এই কিশোর গ্যাং কালচারের মারাত্নক পরিণতির সাম্প্রতিক উদাহরণ। এই সমাজ অবক্ষয়ের আর এক ভয়ংকর অনুষঙ্গ নেশা।এই সমস্ত গ্রুপগুলো যারা অধিকাংশই টিনএজ, যাদের এখন উন্নত জীবনের সোপান বিনির্মাণের জন্য ব্যপৃত থাকার কথা তারা মাদকের করাল থাবায় হারিয়ে যাচ্ছে ; পঙু হয়ে যাচ্ছে সুন্দর স্বচ্ছল উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্র সেনানীরা। এই সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য সরকার বা ব্যক্তিবিশেষকে দায়ী না করে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। মুক্তবুদ্ধির চর্চা,সারাক্ষণ মোবাইলে চ্যাট আর গেম না খেলে উন্মুক্ত খেলাধুলা,শুদ্ব সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে আমারা এই মারাত্মক পরিনতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।আর সকল অভিভাবকদের উচিত তাদের স্ব স্ব সন্তানের আচরণ বিধির প্রতি যৌক্তিক নজরদারী করা।
আমাদের মূল্যবোধে অবক্ষয় এ সমাজকে প্রবলভাবে গ্রাস করেছে। আর সামাজিক শিক্ষা কিংবা পারিবারিক শিক্ষা থেকে আমাদের মূল্যবোধ গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু এ সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পরিবারেই আমরা নানা ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করি। এখন আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো আগের মতো নেই। নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে। এটিই পারে সামজিক অবক্ষয় বন্ধ করতে।