আইনশৃঙ্খলায় সফল, এলাকার উন্নয়নেও এগিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এখন নেই অতীতের মতো হানাহানি, কমেছে চুরি-ছিনতাই কিংবা রাহাজানি। নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তিনি কাজে লাগাচ্ছেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে।

জঙ্গিবাদ দমনসহ সীমান্তে অতীতের চেয়ে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিস্তারসহ সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখছেন এই সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সুচারুরূপে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 

পর পর দুই মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন কামাল। এখন পর্যন্ত তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে। জাতীয় যে কোনো সংকট মোকাবেলা করেছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সফলতার কথা এখন শোনা যায় মানুষের মুখে মুখে।

ব্যক্তি হিসেবে তিনি সদালপী, প্রচারবিমুখ। উন্নয়নমূলক কাজ করেও প্রচার চান না তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েও নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিরত রাখেননি। 

এই করেনাকালেও তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। রাজধানীতে ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ এসব মানুষের খাবার জুটছে নানাজনের দেওয়া ত্রাণে। এপ্রিলের শুরু থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকার নিম্নআয়ের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। এরইমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী। মানুষ তার কাছে আসেনি, বরং তিনি ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে।

শুধু এই সময়ে নয়, নিজের সঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়ে অসহায় দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের নগদ অর্থ সহায়তা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কাজও করছেন কামাল। এ ধারাবাহিকতায় হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবনে চাকরি দেওয়া হয়েছে হিজড়া সম্প্রদায়ের রিয়াদি শামসকে।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় বাসচাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার পর পরই দেশজুড়ে শুরু হয় নিরাপদ সড়কের আন্দোলন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও একপর্যায়ে অসাধু চক্রের ছড়ানো গুজবে ক্রমেই পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে থাকে। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশ। এতে করে বিভিন্ন অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করায় স্বল্পতম সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

শুধু শিক্ষার্থীদের ঘরেই ফেরত পাঠাননি, তাদের দাবি অনুযায়ী পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অল্পদিনেই যার সুফল পেতে থাকেন দেশবাসী। দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা পূরণে নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয় তার হাত ধরেই।

সড়কে চলাচল আরও নিরাপদ করতে ২০১৯ সালে নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে গেলে বেঁকে বসেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। টানা কয়েকদিন অচলাবস্থা চলতে থাকলে এ সংকট সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। অবশেষে নতুন আইনের কিছু বিধিবিধান বাস্তবায়নে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সব পক্ষের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করেন। এর ফলে নতুন আইন কার্যকরসহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

তার নেতৃত্বে পুলিশ ক্রমেই জনবান্ধব পুলিশিং সেবার দিকে অগ্রসর হয়েছে। সাধারণ জনগণের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে পুলিশ। করোনাকালে পুলিশের সেবায় মুগ্ধ হয়েছে মানুষ।

বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবসম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান, উদ্ধার অভিযান/তৎপরতা, অপরাধদমন, অপরাধী শনাক্তকরণ, জল ও স্থল সীমান্ত নিরাপত্তা, চোরাচালান রোধ, প্রবাস ও অভিবাসন সম্পর্কিত নীতিমালা/চুক্তি প্রণয়ন, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ, মানবপাচার রোধ, ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সরকারের অন্যতম বৃহৎ মন্ত্রণালয় হিসেবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ, সুন্দর, সুখী ও শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি নির্মাণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরলস ও বদ্ধপরিকর। আর এসব কাজ সফল হচ্ছে আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে।

আসাদুজ্জামান খান ১৯৫০ সনের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও থানার মনিপুরিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে তেজগাঁও পলিটেকনিক হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৬৭ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি অনার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী কামাল লেখাপড়ার পাশাপাশি সত্তরের দশকে মঞ্চ নাটক করতেন এবং তুখোড় ব্যাডমিন্টন ও দাবা খেলোয়াড় ছিলেন।

ছাত্র জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল ২নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেন। তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী-লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

আসাদুজ্জামান ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে ১২ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। দক্ষতা, যোগ্যতা এবং দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং যথারীতি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে দ্বিতীয়বারের মতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করে তিনি বর্তমানে বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানের মাধ্যমে দেশে মাদকের প্রকোপ কমিয়ে আনতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন কামাল।

তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও জাতিসংঘে টেকসই শান্তি সম্মেলনসহ বহু আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।

তার নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধিভূক্ত ১০টি প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ও সেবা দানে প্রাগ্রসর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলানোর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের স্থায়ী কামিটির সদস্য ছিলেন।  প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড এবং প্রেস কাউন্সিলেরও একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কামাল।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে তিনি দোহার পদ্মা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, হোসেন আলী স্কুলের সভাপতি, তেজগাঁও কলেজের প্রেসিডেন্ট এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনেট সদস্য। রাজনীতির পাশাপাশি একজন সমাজকর্মী হিসেবে তিনি সুপরিচিত। তিনি তেজগাঁও, রমনা, হাতিরঝিল ও দোহার এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। 

বই, পত্রিকা পড়া এবং ভ্রমণ তার পছন্দ। তার সহধর্মীনি লুৎফুল তাহমিনা খান। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

Share: