
ডা. এইচবিএম ইকবাল : শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের অগ্রদূত
ড. এমাদুল ইসলাম, ড. দিপু সিদ্দিকী: ডা. এইচ বি এম ইকবাল শুধু একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাই নন, তিনি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের অন্যতম রূপকারও। দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনার পর তিনি উপলব্ধি করেন, প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হবে যখন দেশ সুশিক্ষিত, দক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল মানবসম্পদ তৈরি করতে পারবে। তাই তিনি শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নকে নিজের আজীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই মূলত তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হন। এবং ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রমনা- তেজগাঁও সংসদীয় এলাকায় বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় মূলত তার সংসদীয় এলাকার শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন এবং আধুনিক সুবিধা সম্বলিত শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, উইলস লিটিল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ সহ নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি তাঁর হাত দিয়ে গড়ে ওঠে। তিনি একজন পরীক্ষিত এবং সফল ব্যবসায়ীও বটে। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি ব্যবসায় তিনি সফল হয়েছেন তাঁর সততা নিষ্ঠা এবং কর্মগুণে। তিনি অধিকতর অর্থের উৎসের দিকে মনোযোগ না দিয়ে তিনি তার কাঙ্খিত স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নতি করার কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে গড়ে তুলেন রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা এবং
ঢাকার অদূরে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে নিভৃত পল্লীতে প্রতিষ্ঠা করেন ডাক্তার মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধা বঞ্চিত নারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে বৃত্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শিশু শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কারিগরি স্বাস্থ্য খেলাধুলা খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন বিস্তৃত পরিসরে। সেই লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন ‘ডা. এইচ বি এম ইকবাল শিক্ষা ভুবন“কোলাহলমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের নিবিড় সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের এক অপার সম্ভাবনাময় ক্যাম্পাস গড়ে তুলেছেন ভৈরবে।
শিক্ষা প্রসারে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা
শিক্ষাকে বাণিজ্যের ঊর্ধ্বে রেখে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডক্টর ইকবাল একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সংকল্প করেন। সে লক্ষ্যে তিনি তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাঁশগাড়ি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ” ডা. এইচ বি এম ইকবাল শিক্ষা ভুবন”।
কয়েকশত একরজুড়ে ছায়াসুনিবিড়, পরিকল্পিত প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই শিক্ষা কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয় “জেড রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজ” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এটি দ্রুতই জেলার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং এখনো সেই সাফল্য ধরে রেখেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা, এবং যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা সংযুক্ত করে তিনি শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা
শুধু স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে ডক্টর এইচ বি এম ইকবাল উচ্চশিক্ষাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
এই লক্ষ্যেই
প্রতিষ্ঠা করেন “ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি” এবং ঢাকার তেজগাঁওয়ে সুবিশাল পরিসরে গড়ে তোলেন “রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা“।
এই দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়েছে, যা বিশ্ব নাগরিক তৈরির উপযোগী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত এবং প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি অ্যাডভাইজরি বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাঠামো ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।
কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ও শিক্ষার বাস্তবায়ন
শুধু ডিগ্রি প্রদানই নয়, শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদানেও তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রিমিয়ার গ্রুপ এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একটি বিপ্লবী উদ্যোগ, যা শিক্ষাকে কর্মমুখী ও বাস্তবমুখী করতে সহায়ক হবে।
শিক্ষা ও অর্থনৈতিক মুক্তির সমন্বিত দৃষ্টি
ডক্টর ইকবাল মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ তখনই আসবে যখন দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। তাঁর মতে, টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি হলো মানসম্মত শিক্ষা। তাই তিনি যুগোপযোগী কারিকুলামের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপসংহার
ডা. এইচ বি এম ইকবালের শিক্ষাব্যবস্থার এই রূপান্তরশীল উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র এশিয়ার জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষা খাতকে বাণিজ্যের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, সত্যিকারের মানবসম্পদ গঠনের যে প্রচেষ্টা তিনি শুরু করেছেন, তা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে।