কেন এত আত্মহত্যা?

ফাহমিদাঃএইতো সপ্তাহ দুই আগের কথা। চারদিকে জানাজানি হয় নাটরে ছাত্র-শিক্ষিকা প্রেম করে বিয়ে করেছেন আট মাস আগে। এই ঘটনা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বেশ দীর্ঘ সময় ধরে। সেই আলোচনায় কিছু ভাটা পড়তে না পড়তেই এবার দম বন্ধ করা এক খবর এলো। মারা গেছেন সেই শিক্ষিকা। এবার যেন, উল্টো রথ। সামাজিক মাধ্যমে যারা তীব্রভাবে সমালোচনা করেছিলেন তারাই এবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন। এই মৃত্যুর পেছনের কারণ হিসেবে অনেকেই ধারণা করছেন খায়রুন নাহার ডিপ্রেশনে ছিলেন। আশপাশের মানুষজনের কথা তিনি হয়তোবা ভালোভাবে নিতে পারেননি।

 

শুধু এই শিক্ষিকা নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। এ সংস্থার দাবি  সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম প্রধান কারণ। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ ছিল আতহত্যা। হতাশা, জীবনের আনন্দ হারিয়ে ফেলা, বিষণ্নতা এবং উদ্বিগ্নতা অর্থাৎ বলা যায় মনস্তাত্ত্বিক নাজুক অবস্থা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এমন পরিস্থিতিতেই ভুল পথে পা বাড়িয়ে পথভ্রষ্ট হন অনেকে।

আত্মহত্যা শব্দটি নতুন নয়, প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে অত্মহননের পথ বেছে নেয়া মানুষের সংখ্যা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনেও এটা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোবিজ অঙ্গনে তারকাদের আত্মহত্যা সালমান শাহকে দিয়েই শুরু করা যাক। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে শোবিজে পা রাখা সালমান শাহ যখন একের পর এক দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দিচ্ছিলেন; তখনই তার পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার খবরে বজ্রপাতের মতো হঠাৎ থমকে গিয়েছিলেন তার ভক্ত, অনুরাগীরা। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন প্রিয় নায়ক আর কোনো দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন না। যদিও তার মৃত্যু রহস্যের জট আজও খোলেনি। তবে তিনি যে জীবন নিয়ে হতাশ ছিলেন সে বিষয়টি বার বারই উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।
এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডলি আনোয়ার। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। অনেকের মতো ডলি আনোয়ারের এ মৃত্যু রহস্যই থেকে গেছে। এ পর্যন্ত অনেক তারকার আত্মহত্যা নিয়ে রহস্যও কম হয়নি। তবে হতাশার বিষয়টিও কিন্তু উঠে এসেছে বার বার। গত কয়েক বছরে তারকাদের আত্মহত্যার তালিকায় রয়েছেন মডেল-অভিনেত্রী মিতা নূর, লাক্স তারকা রাহা, মডেল-অভিনেতা মঈনুল হক অলি, সিনহা, নায়লা, লোপা, সাবিরা, পিয়াসসহ অনেকেই। এতো গেল দেশীয় তারকাদের আতহত্যার খবর। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বলিউড হলিউড কোথাও কমতি নেই আত্মহত্যার মতো ঘটনাগুলো।
স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশ যেটাকে আত্মহত্যা বলে জানি সেই আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা সুই সেইডেয়ার থেকে। বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীদের মতে আত্মহত্যার উল্লেখযোগ্য কারণ স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া-বিবাদ, মা-বাবা ও ছেলেমেয়ের মনোমালিন্য, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দীর্ঘস্থায়ী রোগযন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি, প্রেমে বিরহ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি ও ব্যর্থতা, শত্রুর কাছে ধরা না দেয়া বিষয়গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ মোট কথা সাম্প্রতিক জীবনের চাপ নিতে না পারা। যখন কারও জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায় তখনই মানুষ এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় বলে ধরে নেয়া হয়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে সমাজের একজন হিসেবে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো যতটুকু সম্ভব অন্যের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকা, কারণ একজনের সামান্য সাহায্য হয়তো অন্যের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি হতে পারে যা তাদের অগোছালো জীবনকে কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং আত্মহত্যা শুধু একজন মানুষকে নয়, বরং একটি গোটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই নিজে সচেতন হতে হবে অন্যকেও সচেতন করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
Share: