abe

প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে আবের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন কিসিদা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, সামরিক খরচ বাড়ানোর প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আবের রেখে যাওয়া কট্টরপন্থী উত্তরাধিকার আরও সম্প্রসারিত করবেন কিসিদা। রক্ষণশীলতায় আবেকে ছাড়িয়ে তিনি আরও অনেক দূর যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) আবের অনুগত সদস্যদের সমর্থন চাইতে পারেন তিনি। যদিও হিরোশিমা থেকে আসা মধ্যপন্থী কিসিদা সবসময়ই পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ চেয়ে আসছেন।

জাপানের ইতিহাসের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিহত হওয়ার দুদিন পর অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সামরিক খাতে কিসিদার উৎসাহ ও আগ্রহ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

সামরিক শক্তি বাড়াতে আবের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী ও এককেন্দ্রীক। মঙ্গলবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় উল্লেখযোগ্য বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন কিসিদা। আবেকে হত্যার পর তার এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো ভোটার অনেক বেশি কট্টরপন্থী মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় কখনোই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুই শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবে। যদিও তার দল ক্ষমতায় আসার সময় এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল।

আরও পড়ুন: আবে হত্যাকারীর মা ‘একত্রীকরণ গির্জার’ সদস্য

কিসিদা প্রশাসনের পরবর্তী প্রতিরক্ষা বাজেট হতে পারে ছয় লাখ কোটি ইয়েন। ডলারের হিসেবে যা সাড়ে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এরমধ্য দিয়ে গেল বছরের তুলনায় নতুন প্রতিরক্ষা বাজেট এগারো শতাংশ বেড়ে যাবে। আবের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী পার্লামেন্ট সদস্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্য দিয়েছেন।

এই আইনপ্রণেতা বলেন, কিসিদা তাতে সফল হলে রক্ষণশীল দলের নেতাকর্মীরা তার পিছু নেবেন, তাকে সমর্থন দেবেন। এরমধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন তিনি। আবের লক্ষ্য বুঝতে পারার মাধ্যমে নিজের গদি পাকাপোক্ত করতে পারবেন কিসিদা।

এদিকে শিনজো আবের পছন্দের নয়া-উদারবাদ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন অর্থনৈতিক নীতি বেছে নিতে চান কিসিদা। এমন কিছু করতে হলে তার জন্য রক্ষণশীলদের সমর্থন বেশি দরকার পড়বে। দলাদলিতে পূর্ণ এলডিপির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে আরেকটি নির্বাচনের আগে পাওয়া তিন বছর সময়ে নিজের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিসিদা।

প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো নিয়ে জাপানি ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। সশস্ত্র সংঘাতে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অনীহা আছে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর চীন প্রতিবেশী তাইওয়ানে হামলা চালাতে পারে বলে অনেক জাপানি নাগরিকের আশঙ্কা।

দেখা যাচ্ছে, বার্ষিক ১০ শতাংশ বাড়ালে এক দশক শেষে সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে জিডিপির দুই শতাংশ হয়ে যাবে। এতে সামরিক খরচের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই তৃতীয় অবস্থানে চলে যাবে শান্তিপ্রিয় দেশ জাপান।

প্রতিরক্ষা খাতে জাপানের চেয়ে চার গুণ বেশি ব্যয় করছে প্রতিবেশী চীন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২১ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট হিসাব থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) জাপান চেয়ার ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ক্রিস্টোফার জনস্টোন বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে নজিরবিহীন সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন কিসিদা। তার প্রস্তাব নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। কিন্তু তিনি এভাবে অগ্রসর হলে বার্ষিক ছয় থেকে সাত শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: মৃত্যুর পরও আবের দলের বড় জয়

দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্ব করে ২০২০ সালে পদত্যাগ করেন শিনজো আবে। দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ২০১২ সালে। তখন অর্থনৈতিক পুনজ্জীবন ও শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধনের অঙ্গীকার করেন তিনি। জাপানের সংবিধানে যুদ্ধ অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না।

সম্মিলিত আত্মরক্ষার সুযোগ দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সংবিধান সংশোধনের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল আবের মন্ত্রিসভা। সামরিক তৎপরতা বাড়াতে আইনগত বৈধতা দিতেই এমন আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তা সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আবের চেয়ে কিসিদার সামরিক আগ্রহ কম। তার ভাষায়—সংবিধানের কিছু অংশে এমন বিষয়াদি আছে, যা সেকেলে এবং তাতে অনেক ঘাটতি আছে। এসব বিষয়াদির সংশোধনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া দলটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখেছে। জনসমর্থনে এলডিপির ঘাটতি নেই বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের জাপান চেয়ার রবার্ট ওয়ার্ড বলেন, এখন অনেক বেশি প্রতিরক্ষা খরচ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কিসিদা। যদিও এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে—তারা কোন টাকা খরচ করবেন? তা কোথা থেকে আসবে?

গত মাসে জিজি প্রেস এক জনমত জরিপের আয়োজন করেছে। তাতে সাড়া দেওয়া অর্ধেকের বেশি প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বলছেন, জাপানের উচিত পর্যাপ্ত পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা। যাতে বিদেশি শত্রুর সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সহজেই হামলা করা সম্ভব হয়।

বড় ধরনের সামরিক ব্যয়ের পক্ষে সমর্থন রয়েছে জাপানের সেলফ-ডিফেনস ফোর্সের সাবেক জয়েন্ট স্টাফ অ্যাডমিরাল কাতসুতোসি কাওয়ানোর। তিনি বলেন, অন্তত ২০ শতাংশ সামরিক ব্যয় বাড়ানো যথাযথ হবে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সরঞ্জামাদিতে অতিরিক্ত তহবিল খরচ করা উচিত, যাতে বিমান-জাহাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা যায়।

সাবেক এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব আছে, সেহেতু অন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো কার্যকর রাখতে সমরাস্ত্রের সরঞ্জাম অদলবদল প্রক্রিয়া কার্যকর রাখতে হবে।

শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তুলতে হলে জাপানকে অন্তত এক দশক সময় নিতে হবে। এতে প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করতে পারবে সূর্যোদয়ের দেশটি। প্রথম তিন বছরে সরঞ্জামাদি একটি গ্রহণযোগ্য মানের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে এবং গোলাবারুদের মজুত বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে।

তবে সামরিক ব্যয় কতটা বাড়াবেন, তা আগস্টের শেষ দিকে প্রকাশ করবেন কিসিদা। আর বছর শেষে তার মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত সংখ্যার অনুমোদন দেবে। জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলও সংশোধন করতে যাচ্ছেন তিনি। বছরের শেষে নতুন পঞ্চবার্ষিকী সামরিক যন্ত্রপাতি ক্রয় সীমা নির্ধারণ করতে যাচ্ছেন কিসিদা।