mod

বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে ইসলাম-বিদ্বেষ ও মুসলমানদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর আগে এমন প্রতিক্রিয়া কখনো দেখায়নি আরব বা উপসাগরীয় দেশগুলো।

হঠাৎ কেন এই প্রতিক্রিয়া?

গত দুই দশকে ভারতের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্কও উন্নত হয়েছে। কারণ, আরব দেশগুলো সাধারণত ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর হামলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। গরু রক্ষার নামে বেশ কয়েকজন মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেসব ঘটনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর তরফ থেকে ভারতের নিন্দা বা সমালোচনা করে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য বা উদ্বেগ জানানো হয়নি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারে ব্যতিক্রম হওয়ার জন্য ধর্মীয় কারণটিই প্রধান বিবেচ্য হলেও এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে সামাজিক মাধ্যম। যেখানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকও দেয়া হচ্ছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই ও ওমানে দায়িত্ব পালন করা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত তালমিজ আহমদ মনে করেন, মন্তব্যটা করা হয়েছে ইসলামের নবী এবং তার পরিবারকে নিয়ে। আমরা জানি, মুসলিমরা নবী মুহাম্মদের কোনো অবমাননাকর মন্তব্য মেনে নেবে না। কিন্তু সেই সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: মহানবী (সা.)-কে অবমাননা: অ্যাকশনে পুলিশ

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়া এসেছিল সামাজিক মাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমই এ অঞ্চলের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর চাপ তৈরি করেছিল। নবী মুহাম্মদকে নিয়ে করা মন্তব্যে ক্ষোভ ও জনমত তৈরি হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত দেশগুলোর নেতাকে বাধ্য করেছিল অবস্থান নিতে।

আরব দেশের ওপর কতটা নির্ভরশীল ভারত?

জ্বালানি, তেল, গ্যাস ও রেমিটেন্সের কারণে গালফ অঞ্চল বা মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল ভারত। ভারতের মোট আমদানির অর্ধেক আসে উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) ছয়টি দেশ থেকে।

ইরান ও ইরাককে যোগ করলে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকেই আসে ভারতের পেট্রলের ৮০ শতাংশ। ভারত বছরে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে তার অর্ধেক আসে কাতার থেকে।

আরও পড়ুন: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য থেকে বাদ পড়ল ভারত

শুধু তাই নয়, উপসাগরীয় দেশগুলোরও ভারতের প্রতি নির্ভরশীলতা রয়েছে। ইউএই’তে বছরে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রফতানি করে ভারত। এছাড়া জিসিসির সদস্য উপসাগরীয় ছয়টি দেশে ৮৫ লাখের বেশি ভারতীয় কাজ করেন। বাকি আরব দেশেও বহু ভারতীয় কাজ করেন। আরব দেশগুলো থেকে প্রবাসী ভারতীয়রা বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠান।

ভারতের পিছু হটা

আর এসব কারণেই আরব দেশের প্রতিক্রিয়ার জবাবে ভারত কিছুটা পিছু হটে যায়। বিজেপির বিতর্কিত নেতা নূপুর শর্মাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং নবীন কুমার জিন্দালকে দল থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে বিজেপি জানিয়েছে, তারা যে কোন ধর্মের বা যে কোন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে অপমানের নিন্দা করে। কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মকে অপমান করা, বা হেয় করা- বিজেপি এমন আদর্শেরও বিরুদ্ধে। বিজেপির ওই দুই নেতা এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন।

আরও পড়ুন: ভারত কার, যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়ার

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা করছে বহু দেশ। তাই জ্বালানির উৎস নিয়ে ভারত ঝুঁকি নিতে চাইবে না, সেটাই স্বাভাবিক।

সেই সঙ্গে কর্মসূত্রে বিভিন্ন আরব দেশে বসবাস করা ভারতীয়রা বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়বেন এমন ভয়ও রয়েছে। কুয়েত ও কাতারের মতো অন্যান্য আরব দেশেও ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক ছড়িয়ে পড়লে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে কারণে ভারতের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াকে এই মুহূর্তে আরব বিশ্বের টানাপড়েন সামাল দেয়ার একমাত্র উপায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি