বর্জ্য সমস্যার সৃজনশীল সমাধান উদ্ভাবন করেছে গো গ্রীন

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সারাবিশ্ব যখন পরিবেশ দিবস পালন করছে, তখন দেশের বিভিন্ন ময়লার ভাগাড়ে ময়লার স্তুপ বেড়ে চলেছে। দেশের উন্নয়নের সাথে আবর্জনার পরিমাণ বেড়েছে কিন্তু যথাযথ রিসাইকেলের অভাবে ময়লার স্তুপের আকার বেড়েই চলেছে।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) মতে, দেশের শহর এলাকায় প্রতিদিন ২৫ হাজার টন সলিড বর্জ্য তৈরি হয়। যার মধ্যে ঢাকার বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৪৬৪ টন। সলিড বর্জ্যের পুরোটাই ময়লার ভাগাড়ে, জমিতে বা নদীতে গিয়ে পতিত হয়।

এই ময়লার একটা বড় অংশ হলো মূল্যহীন প্লাস্টিক যেমন একবার ব্যবহ্নত পলিথিন, প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, বিভিন্ন খাবারের প্লাস্টিকের প্যাকেট, কাপড়, ফেস মাস্ক ও সিগারেটের প্যাকেট। বাজারে এই সব বর্জ্যের কোনো মূল্য না থাকায় টোকাই বা ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরাও এসব কেনেন না। ফলে নদী নালা, ফসলি জমি ও ময়লার ভাগাড়ই এগুলোর শেষ ঠিকানা।

ক্ষতিকর এসব বর্জ্য পরিবেশ ক্ষতি করছে, ভরাট করছে নদ-নদী। একইভাবে কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে ত্বরান্বিত করছে।

বর্জ্যের বিভিন্ন অংশ নিয়ে কাজ হলেও একবারে ফেলে দেওয়া এই সব বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের কাজ করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গো গ্রিন বাংলাদেশ। গো গ্রিন বাংলাদেশ ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য থেকে তৈরি করছে ইট, ব্লক, স্যানিটারি রিং ও স্লাব।

গ্রো গ্রিন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান রাজু বলেন, যে সকল বর্জ্য আছে, তার মধ্যে মূল্যহীন সলিড বর্জ্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। গ্রিন হাউজ গ্যাসের উৎপাদনের অন্যতম কারণ এই বর্জ্য। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকে কাজ করলেও, এই বর্জ্য নিয়ে মানুষ চিন্তা করে না। কারণে বাজারে এটার মূল্য নেই বললেও চলে।

‘পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর এই বর্জ্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। রাস্তাঘাটসহ সব জায়গায় এই বর্জ্য চোখে পড়ে। পরিবেশবান্ধব ব্যবসা হওয়ায় আমাদের মাথায় আসে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই আমরা ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য মিশিয়ে তৈরি করেছি ইট, ব্লক, স্যানিটারি রিং ও স্লাব,’ বলেন রাজু।

তিনি বলেন, আমাদের এই ইট, ব্লক, রিং ও স্ল্যাব কেবল টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী নয়, একই সাথে সলিড বর্জ্যের সবচেয়ে ভালো সমাধানও। আমরা এই পণ্যগুলো তৈরির মাধ্যমে বর্জ্য সমস্যার শতভাগ সমাধান করতে পারব।

ইট ও ব্লক ইতোমধ্যে বুয়েটের বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগ এবং পুরকৌশল বিভাগে শক্তিমত্ত্বা ও তাপসহনীয় পরীক্ষা করা হয়েছে।

রাজু আরো জানান, এই সকল পণ্য তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে সেই সব বর্জ্য যা এতদিন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে একবার ব্যবহৃত পলিথিন, প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক, একবার ব্যবহ্নত প্লাস্টিকের স্ট্র, চামচ, প্লেট, সিগারেটের ফিল্টার, ফেলে দেওয়া কাপড় ও ফেস মাস্ক।

পেশায় সাংবাদিক রাজু বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা পণ্য তৈরি ও পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহারিক উপযোগিতার পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। এবার আমরা ব্যাপক আকারে উৎপাদনে যেতে চাই। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদার নেওয়া ও বিনিয়োগের বিষয়ে আমাদের আলাপ চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা বর্জ্য সমস্যা সমাধানে ব্যাপক আকারে কাজ শুরু করতে পারব।’

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি স্ট্যার্টআপ গো গ্রিন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাঁশের তৈরি পানির বোতল, ফ্লাক্স, চপিং বোর্ড, ট্রে, বাঁশের স্ট্র বাজারে এনেছে। প্লাস্টিকের স্ট্রয়ের বিকল্প হিসাবে গো গ্রিন বাংলাদেশ পাটকাঠি থেকে উদ্ভাবন করেছে জুট স্ট্র। সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জুটের স্ট্র দেশের একাধিক রেস্টুরেন্ট ব্যবহার করছে।

Share: