পাহাড়ে রক্তপাত-চাঁদাবাজি বন্ধে যা প্রয়োজন সবই করব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দিপু সিদ্দিকীঃপাহাড়ের মানুষ শান্তিপ্রিয়, এখানে রক্তপাত-চাঁদাবাজির চলবে না। পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধে যা কিছু দরকার তার সবকিছুই করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে রাঙ্গামাটি নিউ পুলিশ লাইন্সে তিন পার্বত্য জেলায় আর্মড ব্যাটালিয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা জঙ্গি দমন করেছি, সন্ত্রাসীদের ঘরে ফিরিয়েছি। সেখানে পাহাড়ের তিন জেলায় কেন এত রক্তপাত হবে। পাহাড়ের অনেক জায়গায় ঘুরে দেখেছি, এলাকার মানুষ খুবই সাধারণ। এখানকার মানুষের কোনও চাহিদা নেই এবং খুবই শান্তিপ্রিয়। তাহলে কেন এই রক্তপাত? পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তপাত-চাঁদাবাজি হতে দেব না। এসব বন্ধে যা করার প্রয়োজন সবই আমরা করব।
আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, পাহাড়ি এলাকার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। তাই চুক্তির শর্ত অনুসারে তিন পার্বত্য জেলায় প্রত্যাহার করা সেনা ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। আর এর মাধ্যমে এ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ’পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির নেতা সন্তু লারমা আমাদের বড় ভাই ও এখানকার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে গতকাল দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। কিছু সমস্যা রয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করব।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, চুক্তি হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। যাতে ৭২টি ধারা ও ৯৯টি উপধারা রয়েছে। সেই চুক্তিতে সরকারের জন্য সব পালনযোগ্য, আর চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের জন্য পালনযোগ্য মাত্র দুটি ধারা রয়েছে। ঘ খন্ডের অনুচ্ছেদ ১৩ ও ১৪ । এতে বলা আছে, ’সকল অস্ত্র জমা দিতে হবে এবং সবাই আত্মসমর্পণ করবে’। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হয় সেটা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ’পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীরা যদি যুদ্ধ করতে চান, আসুন স্থান ঠিক করি। ৩০ মিনিট টিকে থাকতে পারবেন না। পাহাড়ে পাহাড়ে লুকিয়ে থাকবেন, মানুষের বাড়িতে গিয়ে জোর করে ভাত খাবেন আর আমাদের দেখে গুলি করে আহত করবেন, এটাকে যুদ্ধ বলে না। এটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, গত পাঁচ বছরে পাহাড়ের ১৩৫ জন খুন হয়েছে, যা গড়ে প্রতি দুই মাসে ৫ জন। তিন জেলায় ১৬ লাখ মানুষ বসবাস করে। আর পুরো দেশে ১৮ কোটি মানুষ বসবাস করে। সরকার যদি দেশের একটি বড় অংশে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী বন্ধ করতে পারে, তাহলে পার্বত্য এলাকায় কেন পারবে না। আমি সন্ত্রাসীদের সব সময় বলি যারা জনগণ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করে তারা আহম্মক। রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে এসব অপশক্তি তুচ্ছ। সবার সহযোগিতা নিয়ে এসব লোকদের খুঁজে বের করবো এবং শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। দুই দশকের পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু চুক্তির কয়েক বছর যেতে না যেতেই পাহাড়ে আবারো শুরু হয় রক্তপাত। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের মাধ্যমে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। একটি আঞ্চলিক সংগঠন বিভক্ত হয়ে বর্তমানে চারটি সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। আর তাদের আধিপত্য ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রায়ই পাহাড়ে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর, সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংরক্ষিত আসনের এমপি বাসন্তী চাকমা প্রমুখ।
Share: