শাফিউল বাশারঃদেশের অন্যতম বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এবার ১৯৫তম ঈদ জামাতে ইমামতি করেন শহরের হয়বতনগর মসজিদের ইমাম শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
মঙ্গলবার (০৩ মে) সকাল ৯টায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ঈদের জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। এর আগেই ভোর থেকে দলে দলে মুসল্লি আসতে থাকেন ঈদগাহে। ১০টার আগেই বিশাল মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়।
এবার শোলাকিয়ায় সাড়ে ৩ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।
জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনরা এ মাঠে নামাজ আদায় করেন।
ঈদকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। ঈদগাহে প্রবেশের আগেই মুসল্লিদের কমপক্ষে চারবার পুলিশের নিরাপত্তা তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। মেটাল ডিটেক্টরে দেহ তল্লাশীর পর চূড়ান্তভাবে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয় মাঠে। মুসল্লিদের সঙ্গে মোবাইল ফোন ও ছাতা নিতে দেয়া হয়নি। শুধু জায়নামাজ আর টুপি নিয়ে যেতে হয় মুসল্লিদের।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত বন্ধ ছিল। তাই এবার শোলাকিয়ায় ঈদগাহে মুসল্লি সমাগম ছিল অনেক বেশি।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে শোলাকিয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে শোলাকিয়া ঈদগাহের অবস্থান। প্রায় সাড়ে ৬ একর আয়তনের ঈদগাহ মাঠের ভেতরে স্বাভাবিক অবস্থায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মুসল্লির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখানে প্রতি বছর ঈদের নামাজে অংশ নেন কয়েক লাখ মুসল্লি। মাঠের ভেতরেই দুই লাখের বেশি মুসল্লি নামাজ পড়েন। আর মাঠের বাইরে রাস্তাঘাট ও পেছনে অংশ নেন আরও দেড় লাখের মতো মানুষ। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে শোলাকিয়া ও এর আশপাশ।
মাঠে প্রবেশের আগে সবাইকে পুলিশের চারটি নিরাপত্তা চৌকি পার হতে হয়। সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠের ভেতর ও চারপাশ। মাঠের চারপাশে ছিল ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা মনিটর করে চারপাশ।
জানা গেছে, বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম বীর ঈশাখাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য জমি ওয়াকফ করেন। তারও ২০০ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ওই ওয়াকফ দলিলে উল্লেখ আছে। এ মাঠে লাখো মুসল্লির সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়–এমন ধারণা থেকে প্রতিবছর এখানে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির ঢল নামে। বংশপরম্পরায় এ মাঠে নামাজ পড়ে আসছেন অনেকে।
১৮২৮ সালে শোলাকিয়া মাঠে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।