বাবার সামনে হাতকড়া পরিয়ে শিক্ষককে ‘পেটাল’ পুলিশ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদদাতাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে নাজমুল হাসান নামে এক স্কুল শিক্ষককে মারধর ও হাতকড়া পরানোর অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিরুদ্ধে। পরে ওই শিক্ষক মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

রোববার (০৭ মার্চ) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে পৌর এলাকার কান্দিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষক নাজমুলের পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।


পুলিশের হাতে নাজেহাল হওয়া শিক্ষক নাজমুল হাসান জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সহেদেবপুর গ্রামের মো. আবদুল হাই ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পৌর এলাকার কান্দিপাড়ার মৃত আবদুল আওয়ালের বাড়িতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন। নাজমুল হাসান বিজয়নগর উপজেলার দক্ষিণ পেটুয়াজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

নাজমুল হাসানের পরিবারের অভিযোগ, কান্দিপাড়ার প্রয়াত আবদুল আওয়ালের বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস করেন আবদুল আওয়ালের বড় ছেলে রাজীব আহমেদ। দ্বিতীয় তলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন ভাড়াটিয়া ও শিক্ষক নাজমুল হাসান। রোববার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাজমুল হাসানের বৃদ্ধ বাবা আবদুল হাই ভূঁইয়া (৮০) ছাদে শুকাতে দেওয়া কাপড় আনতে বাসার ছাদে যান। এ সময় আবদুল আওয়ালের বাড়িতে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে ওসি আলমীগের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের আটজন সদস্য। তারা তালা ভেঙে তৃতীয় তলায় রাজিবের ঘরে ঢোকেন। এ সময় ডিবি পুলিশের সদস্যরা বাসার ছাদ থেকে বৃদ্ধ আবদুল হাই ভূঁইয়াকে ডেকে রাজীবের ঘরে নিয়ে যান। এদিকে বৃদ্ধ বাবা ঘরে না ফেরায় নাজমুল হাসান ছাদের দিকে যাওয়ার পথে তিনি দেখেন তার বাবাকে রাজিবের ঘরে ডিবি পুলিশ দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।

নাজমুল হাসান রাজিবের কক্ষে গিয়ে ডিবি পুলিশের কাছে তার বাবাকে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের সদস্যরা নাজমুলকে তার বাবার সামনেই বেদম মারধর করেন। পরে তার দুই হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাজিবের ঘরের বিছানায় নাজমুলকে বসিয়ে পাশে দুটি ফেনসিডিলের বোতল রেখে ছবি তুলেন। পরে নাজমুলের কাছ থেকে থেকে পুলিশ একটি মুচলেকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেন।

শিক্ষক নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ। বাবাকে রাজিবের ঘরে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে ডিবি পুলিশ আমাকে মারধর করে ও আমার হাতে হাতকড়া পরায়। পরে আমাকে রাজিবের ঘরের বিছানায় বসিয়ে আমার পাশে দুটি ফেনসিডিল বোতল রেখে  ছবি তোলে। পরে আমি ডিবি পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছি এবং এতে আমি অনুতপ্ত লিখে আমার কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করে। 
 
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করব।

নাজমুল হাসানের বাবা আবদুল হাই ভূঁইয়া বলেন, আমার চোখের সামনেই বিনা কারণে পুলিশ আমার ছেলেকে মারধর করেছে। আমি ও আমার পরিবার এখন পুলিশের আতঙ্কের মধ্যে আছি।

এ ব্যাপারে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নাজমুল হাসান একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি আমাদের মাদক উদ্ধার অভিযানে বাধা দিয়েছেন। এই মর্মে মুচলেকাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, মারধর ও হাতকড়া পরানোর অভিযোগ সঠিক না।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের মাদক উদ্ধারের অভিযান চলমান রয়েছে। মাদক উদ্ধার অভিযান চলাকালে পুলিশ সদস্যদের অভিযান ভিডিও করার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযানের পুরো ভিডিও দেখে বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারব কী ঘটেছে। তিনি জানান, ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সুত্র-সময়
Share: