একটি বাদানুবাদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনাবাজদের আস্ফালন প্রসঙ্গ ।। দিপু সিদ্দিকী

১.গাড়ির সম্মুখভাগে এই স্টিকারটি থাকার পর আর তো কোন কথা থাকতে পারেনা।
২. কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মুভমেন্ট পাসের আওতায় নয়, তারপরও ম্যাজিস্ট্রেট /পুলিশ কেন তা দেখতে চাইলেন তা বোধগম্য নয়।
৩. এই স্টিকারটি উপেক্ষিত হওয়ার জেরে বাদানুবাদ বা ঝগড়ার সূচনা। বাদানূবাদে মুক্তিযুদ্ধে বীরবিক্রম খেতাব পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ক্ষোভ একটু বেশি ঝেরে ফেললেও বিষয়টি কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনাধীন। স্বাধীন বাংলাদেশের যে ভূখণ্ডে আমরা স্বাধীনভাবে চলাচল করছি তাদের প্রাণের বিনিময়ে ;যারা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন নিঃশর্তভাবে। মুক্তির জন্য। দেশের মুক্তির জন্য।জীবনকে বাজি রেখেছিলেন আমাদের জন্য; তাদের পরিবারের জন্য নয়। বরং পরিবারকে অন্ধকারে নিরুদ্দেশ পথে রেখেই জাতির অভিস্ট লক্ষ্য অর্জনে,মুক্তির পিপাসায় বুক চিতিয়ে দিয়েছিল পাকহানাদারদের অস্ত্রের মুখে। সেই পরিবারের গর্ব, অহংকার আমাদেরই অহংকার। তাদের সেই গর্বে যারা একাত্ম হতে পারেন না, বিলীন হতে পারেন না, বরং হিংসায় জর্জরিত হন তারা মূলত পাকিপ্রেতাত্মা;এরা নিছক কাঁকড়া মানসিকতারই না (Crab mentality)।
এটি একটি সেন্টিমেন্টের বিষয় বটে। তবুও ধন্যবাদ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে যিনি দেরিতে হলেও সামলে নিয়েছেন ।
৪. আর এটিকে নিছক ঝগড়া ধরে শিক্ষিত, মুক্তিযোদ্ধা,ক্ষমতা ইত্যাদি ইস্যু তুলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ট্রলকরা সহ কুতর্কে লিপ্ত প্রকারান্তরে তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনাধারী।এরা মরুঝড়ে মাথা গুজারি উট । এসব সুযোগ সন্ধানী ও সস্তা সেন্টিমেন্ট তৈরির কারিগরদের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বাংলাদেশে যতদিন থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ততদিন থাকবে ।তাদের সম্মান আকাশসম। তাদের পরিবারকে সম্মান প্রকারান্তরে সমগ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান। কোনভাবেই কোন কিছুর বিনিময়েও এ সম্মান আর কারো ভাগ্যে জুটবে না কস্মিনকালে। মুক্তিযোদ্ধারাই সেই ভাগ্যবান; দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তথা কালোত্তীর্ণ সূর্যসন্তান, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। পরম শ্রদ্ধেয় বীরবিক্রম শওকত আলী সাহেবের আত্মজকে আরেকটু ধৈর্য ধরে মোকাবেলা করলে জাতির কি বা ক্ষতি হতো। বরং লাভই হতো বেশি। সম্মানী কে সম্মান দিলে তিনি আরো বিনয়ী হন ,সংযমের পথে হাঁটেন। উগ্রবাদী হননা। জাতির সূর্যসন্তানদের সম্মান ৭৫’ পরবর্তী পর্বে বিলীন করার চেষ্টা করা হয়েছে,নানা ভাবে অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাস বিকৃতির মধ্য দিয়ে ।মুক্তিযোদ্ধা তালিকাকে বিতর্কিত করা হয়েছে। অমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভূক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের তালিকাকে উপহাসে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া পক্ষপাত দুষ্ট হয়েছে ভাবলে মর্মাহত ভিন্ন কিছুই করণীয় নেই।এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উপেক্ষা করে কোনভাবেই বাংলাদেশ এগুতে পারেনা। তাই সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি,মুক্তিযোদ্ধা বহনকারী গাড়িতে সরকারিভাবে স্টিকার সংযুক্ত করতে হবে তাদেরকে প্রতীক দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে এবং রাস্তায় দেখামাত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষ/ বাহিনী কর্তৃক সংগ্রামী অভিবাদন /স্যলুট প্রদানের আইনানুগ ব্যবস্থা করতে হবে।করতেই হবে । এটা শুধু তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বা সম্মানই নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশের রচয়িতাকে চিনিয়ে দেওয়া। সর্বোচ্চ সম্মাননাপ্রাপ্তকে কিভাবে সম্মান করতে হয় তাও শিখিয়ে দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যুগের পর যুগ বহন আর ভবিষ্যৎ দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরিতে এর কোন বিকল্প নাই। মুক্তিযুদ্ধচেতনাবিরোধীরা জ্যামিতিকহারে যেভাবে বেড়ে উঠছে তা প্রতিহত করতে এটা একটা অনন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
তারা সর্বাবস্থায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্য।
জয় বাংলা ।।জয় মুক্তিযোদ্ধা।।
Share: