প্রেস ওয়াচ ডেস্কঃ ফেনীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে হ্যাকাররা। ইতোমধ্যে হ্যাকিং বা প্রযুক্তিগত প্রতারণার শিকার হয়ে উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৫৬ জন অভিভাবক। এছাড়া ১২৯ জন অভিভাবকের মোবাইলে সন্তানের উপবৃত্তির টাকা জমা হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জেলায় ৮৬ হাজার ৩৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা হ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের তথ্য আবার যাচাইয়ের জন্য সব উপজেলা দফতরে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও জানান, অভিযোগ রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো কোনও কোনও শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় দফতরের নির্দেশনায় সব স্কুল প্রধানকে বলা হয়েছে অভিভাবকের বক্তব্য নিয়ে তথ্য দিতে। যে তথ্য হাতে এসেছে তা যাচাই করে পুনরায় তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে অনেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টকে না বুঝে পিন নম্বর দিয়ে দেন। এতেও প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতারণা রোধে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষের প্রচারণা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ছে না।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে উপবৃত্তির প্রতারণা প্রসঙ্গে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শাফায়েত আলম বলেন, প্রতারণার বিষয়টি নগদ কঠোরভাবে দেখছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুর জেলা থেকে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে প্রতারণার এমন চিত্রের জন্য তিনি অভিভাবকদের অসচেতনতাকেও দায়ী করেছেন।
সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপবৃত্তি প্রাপ্তি যাচাইয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন হয়নি। করোনাকালে অভিভাবকরা খবর দিলেও আসতে চান না। ফলে প্রদত্ত তথ্যে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে।
শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তি প্রসঙ্গে বিরিঞ্চি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারাহ দিবা খানম জানান, ভর্তির সময় অভিভাবকের মোবাইল নম্বরটি নির্দিষ্ট ঘরে পূরণ করে দেই। কিন্তু হ্যাকাররা কীভাবে পিন নম্বর জানে বা অভিভাবকের নম্বর জেনে ফোন করে তা স্পষ্ট নয়।
এই প্রসঙ্গে শহরের জিএ একাডেমি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন- উপবৃত্তি সম্পর্কে কাউকে কোনও তথ্য দেবেন না। প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষক বা অন্য শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রতারক চক্র অভিভাবকদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ জানান, চার কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা সরকার দিয়ে থাকে। ফেনীর ৫৭৬টি স্কুলে বছরের প্রথম তিন মাসের উপবৃত্তি বাবদ দুই কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার ২৭২ টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রতি তিন মাস অন্তর ৪৫০ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ২২৫ টাকা করে উপবৃত্তি পেয়ে থাকে।