বহুমাত্রিক নাগরিক সুবিধায় গড়ে উঠছে রাজশাহী মহানগরী

শাহ সুলতান নবীনঃ প্রশস্ত রাস্তা, কারুকাজ, সবুজের নান্দনিকতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এক শৈল্পিক রূপসহ বহুমাত্রিক নাগরিক সুবিধায় অত্যাধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে রাজশাহী মহানগরী। মেট্রোপলিটন এ শহরের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করেই এগিয়ে চলছে উন্নয়ন কাজ। নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কর্মকৌশলে বদলেছে নগরীর পুরো চিত্র। করোনা পরিস্থিতিতেও সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে মুজিববর্ষের নতুন রূপ পেয়েছে ‘গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি’ নগরী।

রাসিক সূত্রে জানা যায়, সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রথমবার মেয়র থাকাকালে সবুজের মহানগরীতে পরিণত করাসহ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে এবং শহরের রাস্তা ও ফুটপাত বাদে ফাঁকা জায়গাগুলো সবুজ গাছে ঢেকে দিতে ‘জিরো সয়েল’ প্রকল্প গ্রহণ করেন তিনি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সবুজ ও বিচিত্র ফুলের সমাহারে নতুন রূপ পেয়েছে নগরী।

মহানগরীর রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ, উপশহর মোড় থেকে সোনাদিঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-নর্দমাসমূহের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্পে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র বদলাচ্ছে। এতে খুশি নগরবাসী।

নগরীর অটোরিকশাচালক সুরুজ ইসলাম জানান, নগরীর রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে তাদের গাড়ি চলাচলে অনেক সুবিধা হয়েছে। আগের চেয়ে রাস্তাঘাট বড় হওয়ায় ও নগরীর ভেতরের রাস্তাগুলোও নতুন রূপ পাওয়ায় যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি কমেছে, তেমনি তারাও গাড়ি চালিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

নগরীর শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শিল্পাঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক। যেখানে  প্রায় ১৪ হাজার কর্মসংস্থান হবে। এরই মধ্যে হাইটেক পার্কের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে কাজে নেমেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে আশাবাদী হচ্ছেন রাজশাহীর শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা।

রাজশাহী কলেজশিক্ষার্থী বদরুদ্দোজা জানান, তিনি এরই মধ্যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্সের কাজ শিখেছেন। আন্তজার্তিক প্রযুক্তি বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকতে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলার প্রচেষ্টায় আছেন। আর তাদের মতো প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজশাহীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পরিবেশ উন্নয়নের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্প, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৫টি জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৫টি সেকেন্ডারি ট্রান্সপার স্টেশন নির্মাণ, মহানগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, মহানগরীর সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প, সড়কবাতি ও ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আধুনিকায়ন, শ্রীরামপুর পদ্মা নদীর তীরে বঙ্গবন্ধু ইকো পার্ক নির্মাণ প্রকল্প, শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প, নগরীর পরিবেশ উন্নয়ন কার্যক্রম, স্বাস্থ্য কার্যক্রম, আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, দরিদ্র ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, শিল্পায়ন, যানজট কমাতে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ, পিপিপির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, ডিজিটাল কার্যক্রম, শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার উন্নয়ন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, রাজশাহী সিটি মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কিছু বাস্তাবায়ন ও চলমান থাকায় এরই মধ্যে মডেল নগরী হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে এ শিক্ষা মহানগরী।

রাজশাহী নগরীর সৌন্দর্য ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দেখতে অন্য জেলাগুলো থেকে অনেকেই ঘুরতে আসছেন। প্রশংসামূলক অনুভূতি জানিয়ে রাজশাহীকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করার কথাও বলেন তারা। গাইবান্ধা পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ জানান, তিনি রাজশাহীর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ। গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি খ্যাত রাজশাহী নগরীকে অন্যান্য পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মডেল হিসেবে নিয়ে অনুসরণ করতে পারে।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ব্র্যাকের একটি প্রতিনিধি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে তিনি অংশ নেন। সেখানে অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে রাজশাহীকে মডেল হিসেবে নিয়ে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার খায়রুল বাশার জানান, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও নির্দেশনায় নগরজুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। নগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন, সবুজায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নগরীর চেহারাই পাল্টে গেছে। রাজশাহী শান্তির শহর ও উত্তম বাসযোগ্য শহর হিসেবে প্রস্তুত হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার নির্দেশনায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। রাজশাহীকে গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটিসহ আধুনিক মডেল শহর হিসেবে গড়তে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে রাসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন সহযোগিতা করছেন, তেমনি সাধারণ মানুষও সহযোগিতা করছেন। সবার সহযোগিতায় রাজশাহীকে এক অন্যন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়নে ১৭৩ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত সড়কটি ৩০ ফুট থেকে ৮০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে ১০ ফুট চওড়া ফুটপাত ও রাস্তার দক্ষিণ পাশে সাড়ে সাত ফুট ড্রেন করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটিতে বাইসাইকেল লেন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড। সবুজায়নের জন্য আইল্যান্ডে ইতোমধ্যে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।

Share: