“তাড়ি খাবি? বাড়ী যাবি!” –জাঁ-নেসার ওসমান

“তাড়ি খাবি? বাড়ী যাবি!”
———জাঁ-নেসার ওসমান

“ আর তাড়ি খাবো না চাচা সময় বয়ে যায়/ তাড়ি গাছে উঠলে চাচা অক্কা পাওয়া যায়”
আমার বয়স যখন চার কি পাঁচ, মানে ১৯৫৬-৫৭সাল, তখন বড়দের. মুখে এই গান শুনতাম।
আর আজ ৯ সফর ১৪৪২ এই ছড়া পুলিশ সদস্যদের. বেদবাক্যের. মতো জীবন মরণের পাথেয় হয়ে দাঁড়াবে, তা কে জানতো।
খবরের কাগজে বড় বড় করে. দুই ইঞ্চি, তিন কলাম, হেডিং “ ডোপ টেষ্টে পজিটিভ হলেই চাকুরিচ্যুত”।
“ক্যা, কথা নাই বার্তা নাই, ডোপ টেষ্টে পজিটিভ হলেই চাকুরিচ্যুত”! এ কি কোনো সুচিন্তিত ভাবনা প্রসূত সিদ্ধান্তঃ নাকি “উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়া লেগেছে!! ডোপ টেষ্ট পজিটিভ হলেই হলো।
আরে. ভাই এই যে আমার দাদী আম্মা, কথাশিল্পী শওকত ওসমানের মা, জননী, কবে তাঁেক কোন বিষাক্ত কীট কুট করে. কামড়েছিলো, দাদী আম্মার বাঁ-হাত ফুলে ঢোল। কিছুতেই ফোলা কমে না, অসহ্য যাতনা। কি করি। গ্রামে মানে ১৯১০ সালে মর্ডান চিকিৎসা!
ফলে গ্রাম্য কোবরেজ প্রতিদিন, চুন-হলুদ গরম করে. শেঁক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অল্প-পরিমাণে “আফীং” খাওয়ার প্রেসক্রিপশন দিলেন।
ব্যাস দাদীআম্মা গ্রাম্য কোবরেজের হেকিমি দাওয়াই খেয়ে ধীরে. ধীরে, সুস্থ্য হলেন।
গ্রাম্য ধন্বন্তরির জয়-জয়াকার। কিন্তু আফীম বা আফীং যে নামেই ডাকো না কেনো, নিয়মিত আফীম খেতে খেতে দাদী আম্মার বডি নেশা গ্রস্থ।
এখন আফীম না পেলে দাদী আম্মার হাত-পা কাঁপাকাঁপি, বুক ধড়ফড়, শ্বাস নিতে কষ্ট, এবার বুজুন, শালা গ্রাম্য কোবরেজের চিকিঃসার আফটার ইফেক্ট।
ফলে দাদীআম্মা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঢাকার রথখোলার আফীমের দোকানদারদের. খদ্দের ছিলেন।
তো! দাদীআম্মার ডোপ টেষ্টে পজিটিভ হবেই হবে আর পজিটিভ হলেই চাকুরিচ্যুত”!
খবরের কাগজে ডি এম পি কমিশনার জনাব, মোহা.শফিকুল ইসলাম স্যার বলেছেন“মাদক সেবনে জড়িত থাকলে পুলিশে যে পদমর্যাদারই হোন ছাড় দেব না”( দৈনিক সমকাল, প্রথম পাতা,২৭.০৯.২০২০)।
এ-আবার কি কথা। বিদেশে যখন এফ.বি.আই, পি.বি.আই’এর চৌকষ অফিসাররা ট্রেনিং’এ যান, তখন অনেক সময় ক্লাশ-পার্টিতে, প্রেসিডেন্টের পার্টিতে, দেশের মুখ রক্ষার জন্য রেড-ওয়াইনের গøাশ হাতে নিয়ে ঘুরতে হয়। তখন ভুলে যদি কেউ এক শিপ বা এক চুমুক ওয়াইন পান করেন, ব্যাস সাথে সাথে ডোপ টেষ্টে পজিটিভ হলেই চাকুরিচ্যুত”!!
আমি জানি পৃথিবীর বহু জীবন রক্ষাকারী ঔষধ আছে যাতে এ্যালকোহল রয়েছে, আরে. ভাই তোমার হ্যান্ডরাব হেক্সিসলে, করোনা ঠেকাও বলে সমানে বেঁচলে, সেই হেক্সিসলে এ্যলকোহল প্রায় ৭০%, তাহলে??
জীবনের এতোটা পথ পাড়িদিয়ে দেখলাম যে, বিচারালয়ে মানুষ? ধর্ম-পুস্তক ছুঁয়ে শপথ নিয়েও সাক্ষী মিথ্যে কথা বলছে। আর মদ্যপ ব্যাক্তিটি মদ্য-পানের পর মদের. গøাশ হাতে নিয়ে জীবনে মিথ্যা বলতে পারেন না।
পুলিশের শুদ্ধি অভিযান কেবল মদের. বিরুদ্ধে!!
আরে ভাই পুলিশ সদস্যদের. মদ্য পানে সমাজের কতটা ক্ষতি হয়??

লেখক-জাঁ-নেসার ওসমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমাজচিন্তাবিদ ।

কিন্তু আপনারা যখন ধর্ষণ করে. খুন করার শাস্তি হিসেবে খুনীদের. বিচার করেন, আর তার কদিন পর মৃতমেয়ে, কাদম্বিনী মরিয় প্রমাণ করিলো, কাদম্বিনী মরে. নাই”, এর মতো, জ্যান্ত মেয়ে ফিরে. আসে, তার কি হবে?? এই টেষ্ট কে করবে।
প্রতিদিনের হকারের লাইনের টাকা তোলার টেষ্ট কে করবে?? জামিন বাণিজ্যের. টেষ্ট কে করবে?? কে করবে পকেটে ইয়াবা দেয়ার টেষ্ট?? গলায় জুতার ফিতা দিয়ে থানায় আত্মহত্যার টেষ্ট কে করবে??
সব ছেড়ে কেবল, চেতনা নাশক নিয়ে পড়লেন??
এ যেন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরির সেই শিয়ালের গল্পের মতো।
“ এক লেজ কাটা বেঁড়ে বাঘ সবার নিচে বসেছে। গাছের ডালে শিয়ালকে ধরার জন্য ওই বাঘের পিঠে বাঘ,তার পিঠে বাঘ, এমনি করে. বাঘেরা উঁচু হয়ে শিয়ালকে ধরবে। যখন বাঘ গুলো প্রায় শিয়ালের কাছাকাছি পৌঁচেছে, তখন শিয়াল চীৎকার করে. উঠলো, “ধর ধর ওই লেজ কাটা বেঁড়ে শালাকে ধর!”
এই শুনে ভয়ে লেজ কাটা বাঘ যেই পালাবার জন্য লাফ দিয়েছে, যেহেতু সবার নিচে বেঁড়ে মানে লেজ কাটা বাঘ ছিলো, সে নড়ে যাওয়াতে উপরের বাঘ গুলো ধুড় ধাড়া মাটিতে পড়লো। শিয়াল বেঁচে গেলো।”
এ ও যেন তেমনি। সব বাঘা বাঘা অন্যায় ছেড়ে দিয়ে ডোপ টেষ্ট করো।
না বস, মানতে পারলাম না। এ’টা,তো ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল নয় যে, “ ডোপ টেষ্টে পজিটিভ হলেই চাকুরিচ্যুত”!
আমার মনে হয় বিষয়টা আরোও গভীরে. চিন্তা করার প্রয়োজন। না হলে হয়তো অনেক সরল ভালো পুলিশ সদস্যেও আমার দাদী আম্মার মতো চাকুরিচুত্য হবে!!!

লেখক-জাঁ-নেসার ওসমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সমাজচিন্তাবিদ ।

Share: