ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ : ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং একাদশ জাতীয় সংসদের দু’জন সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ সংসদে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের দু’জন সংসদ সদস্য হচ্ছন, ঢাকা -১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ও নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম।
এছাড়া ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি মৃত্যুবরণ করেন।
এডভোকেট সাহারা খাতুন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ জুলাই রাতে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর ৪ মাস ৯ দিন।
মো: ইসরাফিল আলম গত ২৭ জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ফুসফুসে সংক্রমণজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর ৪ মাস ১৪ দিন।
একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুন এবং নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি, উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু শ্রী প্রণব মুখার্জি দিল্লীর সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও করোনাজনিত কারণে ৩১ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকেই প্রণব মুখার্জি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ওই সময়ে রাজ্যসভার তরুণ সদস্য হিসেবে ভারত সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের স্বীকৃতি আদায়ে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তিনি। নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্য ড্রামাটিক ডিকেড: দ্য ইন্দিরা গান্ধী ইয়ারস’-এর একটি অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, তাঁকে একের পর এক দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে বিভিন্ন দেশ সফরে পাঠান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে অকৃত্রিম বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন প্রণব মুখার্জি। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারকে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে যেকোনো সংকটে সাহস যুগিয়েছেন।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ভারত এবং বাংলাদেশের জনগণের অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী, দেশপ্রেমিক চিরভাস্বর এই মহান নেতাকে বাংলাদেশের জনগণ চিরকাল স্মরণ করবে। তিনি তাঁর আদর্শ ও কর্মের মধ্য দিয়ে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে একান্ত আপনজন হয়ে বেঁচে থাকবেন । অসাধারণ ব্যক্তিত্বের আলোয় দেদীপ্যমান এই প্রাণপুরুষ অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন নব প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের কাছে। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ, প্রজ্ঞা ও ত্যাগ মাইলফলক হয়ে থাকবে, স্বর্ণাক্ষরে খচিত থাকবে উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের নাম। তিনি অনন্য, অসাধারণ ও অমলিন। বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁকে।
প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সিরাজ, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য লেফট্যানেন্ট কর্ণেল (অব.) এইচ. এম এ গাফফার বীর উত্তম, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবুল কাশেম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য টি এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাবেক হুইপ মোঃ আশরাফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান, সাবেক এমএনএ ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আ ন ম নজরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মোঃ নূরূল হক, সাবেক সংসদ সদস্য এ টি এম আলমগীর, সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান উদ্দিন ভূইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য ড. শাহজাহান আলী তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) সাইফুল আযম, সাবেক সংসদ সদস্য কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিস ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামছউদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত, মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার লে. কর্নেল (অব.)আবু ওসমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রথম নির্বাচিত মেয়র, সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, প্রতিরক্ষা সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, আইন ও বিচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব নরেন দাস, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাহাত খান, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আছাদুজ্জামানের স্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট সাইফুজ্জামানের মাতা মাগুড়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বেগম মনোয়ারা জামান, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসংগ্রামী ডাক্তার সাঈদ হায়দার, একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য সঙ্গীতব্যক্তিত্ব সুরকার আলাউদ্দিন আলী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, ভাস্কর মৃণাল হক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক প্রযোজক ও জিএম মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব ও তাঁর ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এছাড়া, নারায়নগঞ্জের তল্লায় মসজিদে এসি বিস্ফোরণে মৃত্যুবরণকারীসহ প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে যে সব গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং ভারতের কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
এর আগে চলতি সংসদের সদস্য মরহুম এডভোকেট সাহারা খাতুন ও ইসরাফিল আলমের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের আবদুল মতিন খসরু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাহজান খান, শহীদুজ্জামান সরকার, শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ।
আলোচনা শেষে উত্থাপিত শোক প্রস্তাব সর্বসম্মভাবে গৃহীত হয়।
এছাড়া মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। এর আগে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ি দিনের অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করে অধিবেশন মুলতবি করা হয়।(বাসস)