সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন – আ. লীগের মনোনয়ন লড়াইয়ে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর দুই নাতি, মাঠে আছে বিএনপি

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে মাঠে নাম শোনা যাচ্ছে এমন প্রার্থীরা। ওপরে বাম থেকে: প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় (আ.লীগ), ব্যারিস্টার শেহেরিন সেলিম রিপন (আ.লীগ), অমিত দেব (আ. লীগ), কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (বিএনপি)। নিচের সারিতে বাম থেকে: নাজমুল হাসান রানা (বিএনপি), আলাউদ্দিন হোসেন (বিএনপি), সেলিম রেজা (বিএনপি), তহযিবুল এনাম তুষার (বিএনপি)।

আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে শাসক দলে প্রার্থিতার লড়াই জমে উঠেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর দুই নাতি এই আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করে মাঠে নেমেছেন। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র তুলে কেন্দ্রের দিকে চেয়ে আছেন তারা।

এদের একজন আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। তিনি প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারালে ডামি প্রার্থী থেকে আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি এবং বিপুল ভোটে জয়ীও হয়েছিলেন। পরে বাবার সম্মানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন প্রয়াত নাসিমের বড় ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র ব্যারিস্টার শেহেরিন সেলিম রিপন। তিনিও উচ্চ শিক্ষিত এবং তার বাবাও এলাকার পরিচিত মুখ। এম মনসুর আলীর এই দুই নাতির প্রার্থিতার যুদ্ধে ঢুকে গেছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অমিত দেবও। তিনিও দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে পাবনা-৪ আসনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলেও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন সভার সদস্যরা।

বিবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত জুনে হঠাৎই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। হাসপাতালে ভর্তির পর তার করোনা ধরা পড়ে। করোনা মুক্ত হলেও কোমায় চলে যান তিনি। সেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি। গত ১৩ জুন তার মৃত্যু হয়। এ কারণে আসনটি শূন্য হলে এ মাসেই এ আসনেও উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের টিকিটের অন্যতম দাবিদার প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ-১ আসন শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পুণ্যভূমি। আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ আসনে আমার দাদা, পরে আমার পিতা এবং আমি নিজেও এমপি ছিলাম। বাবা আমৃত্যু কাজিপুর তথা সিরাজগঞ্জবাসীর পাশে থেকেছেন। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো করোনাকালের শুরুতেও কাজিপুরে ছুটে গেছেন বাবা। অসহায় ও দুস্থদের ত্রাণ ও বিনামূল্যে ওষুধপত্র সরবরাহ করেছেন। শেষ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন তিনি। বাবার পাশাপাশি আমিও সব সময় ছুটে গিয়েছি কাজিপুরে। সেই আসনে উপনির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী আমি একজন প্রার্থী। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, আর ইনশাআল্লাহ আমি যদি নির্বাচিত হই দাদা-বাবার মতোই মানুষের সেবায় সর্বদা কাজ করে যাবো।’

অন্যদিকে, শেহেরিন সেলিম রিপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাজিপুরের মানুষ পরিবর্তন চায়। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তবে অবশ্যই আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো।’

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অমিত দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেমন প্রস্তুতি রয়েছে তেমনি বিএনপিও এই আসনে প্রার্থী দিচ্ছে তৃণমূলে এমন আভাস রয়েছে। মাঠে বিএনপির বিভিন্ন প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে। যদিও দলটির মাঠের রাজনীতির অবস্থা বেশ ভঙ্গুর, প্রার্থীদেরও মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এ আসনে বিএনপি থেকে গত জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা কণ্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত পেলে আবারও প্রার্থী হতে পারেন তিনি। এছাড়া প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান রানা, কাজিপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা টিএম তহযিবুল এনাম তুষার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা এস এম শামীর আকতার তামিমের নাম।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে কাজিপুরে বিএনপির অস্তিত্ব সংকট এখনও কাটেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর কোনও কার্যক্রম এখনও দৃশ্যমান নয় এখানে। মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২১ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে দলটি। তবে এখনও করতে পারেনি হালনাগাদ কোনও ইউনিয়ন কমিটি। তাই প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি দলটিকে এসব দিকও সামলাতে হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু সোমবার (৩১ আগস্ট) সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সব সময়ই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং নির্বাচনমুখী। নির্বাচন ও গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমেই আমরা সবসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছি। চলমান বন্যা ও করোনার কারণে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপনির্বাচনে আমরা অংশ নিতে না পারলেও কাজিপুরের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছে আমাদের আছে। একাধিক যোগ্য প্রার্থীও প্রস্তুত রয়েছে। এখনও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আমাদের হাতে আসেনি।

অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশ নিতে পারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-ও। জাসদ ঢাকা উত্তরের সভাপতি আলমগীর হোসেন এখানে প্রার্থী হতে পারেন এমন গুঞ্জন দলটির নেতাদের কাছে শোনা যায়। তবে এ বিষয়ে প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনও প্রচারণা চোখে পড়েনি।

এদিকে, কাজিপুরে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নেই। নেতাকর্মীকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, আসন্ন উপনির্বাচন উপলক্ষে এখনও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজিপুরে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৫ জন।

Share: