সোমবার (১০ আগস্ট) মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন আলাউদ্দিন আলীর জামাতা কাজী ফায়সাল আহমেদ।
তিনি জানান, সোমবার বাদ জোহর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আলাউদ্দিন আলীর আবাসস্থল খিলগাঁওয়ের নূর-ই-বাগ মসজিদে। সেখান থেকে মিডিয়ার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা আড়াইটার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে বিএফডিসিতে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। তাকে সমাহিত করা হবে সেখানেই।
কাজী ফায়সাল আহমেদ জানান, কাল জোহর নামাজ পর্যন্ত মরদেহ রাখা হবে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।
রবিবার (৯ আগস্ট) বিকাল ৫টা ৫০ মিনিট নাগাদ রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। তার মৃত্যুর খবরে শোক নেমে আসে দেশের সংগীতাঙ্গনে।
২০১৫ সালের জুন মাসে আলাউদ্দিন আলীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি কয়েক দফায় বিদেশেও চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এরপর থেকে তিনি সেভাবে উঠে দাঁড়াতে পারেননি। ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে, সংগীতে।
আলাউদ্দিন আলী বাংলাদেশের বরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার। এ পর্যন্ত ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এরমধ্যে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সংগীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। সে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি।
আলাউদ্দিন আলী ১৯৭৫ সাল থেকে সংগীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’ এবং ‘যোগাযোগ’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন।
তার সুর করা গানের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, হয় যদি বদনাম হোক আরও, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে, এমনও তো প্রেম হয় চোখের জলে কথা কয়, কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিলো না, আমায় গেঁথে দাওনা মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলেসহ আরও অসংখ্য গান।
আলাউদ্দিন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তৈরি করেছেন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে তার জন্ম। বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।
দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলে এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্র শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।