shar

নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহকারী শারমিন জাহান ।বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক হন। বর্তমানে দলে কোনও পদ-পদবি না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহের কাজ হাতিয়ে নেন। কিন্তু আসল মাস্ক সরবরাহের পরিবর্তে সরবরাহ করেন নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক। এ ঘটনায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ মামলা দায়েরের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন শারমিন জাহান নামে ওই নারী। তবে তাকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার (২৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় তাকে শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘এন-৯৫’ মাস্কের পরিবর্তে নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহ করায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। বিএসএমএমইউ’র প্রক্টর বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে আসামি করা হয়েছে। শারমিন জাহান সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা।

পুলিশ ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জন্য কর্তৃপক্ষ এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে। কিন্তু চিকিৎসকদের মাস্ক দেওয়ার পর দেখা গেছে সেগুলো যথাযথ মানসম্পন্ন নয়। সবগুলো মাস্কই নকল। মাস্কগুলোতে লেখা ভুল, লট নম্বর নেই। পরে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়েও বুঝতে পারে এগুলো নকল। পরে কর্তৃপক্ষ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। জবাবে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার শারমিন জাহান দুঃখ প্রকাশ করে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।

জানা গেছে, শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। স্নাতকোত্তর শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন। পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। তবে বর্তমান কমিটিতে তিনি কোনও পদ পাননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে তিনি চীনের উহানে উচ্চ শিক্ষার জন্য যান। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের শুরুতেই দেশে ফেরেন তিনি। এর আগে চীনে থাকা অবস্থাতেই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি। দলীয় প্রভাব ও তদবির করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের কাজ বাগিয়ে নিতেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শারমিন জাহান শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। তার সম্পর্কে আমি এখনও অবগত না। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে শারমিন সম্পর্কে সব তথ্য আমাদের দেওয়ার জন্য বলেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রারকেও তার সম্পর্কে সব তথ্য আমাকে দিতে বলেছি। কেউ যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করেন, তাহলে অন্য কোথাও বিজনেস বা পার্টটাইম জব করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতে হয়। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নীতি বর্হিভূত কাজ করে পার পাবে না। আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পর তদন্তের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পুলিশ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।’

এদিকে গ্রেফতারের আগে যোগাযোগ করা হলে শারমিন জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার প্রতিষ্ঠান মাস্ক উৎপাদন করে না। আমরা এক জায়গা থেকে কিনে অন্য জায়গায় বিক্রি করি। প্রথম দুই লটে কোনও সমস্যা ছিল না। পরে দুই লটে কিছু মাস্কে সমস্যা থাকায় বিএসএমএমইউ ফেরত দিয়েছে। আমি তাদের ব্যাখ্যাও দিয়েছি।’ বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলা আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে বলেও জানান তিনি।