পুষ্টি মেটাতে স্থানীয় ফল-সবজিই যথেষ্ট

বিবিসি ডেস্কঃ স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত শাক-সবিজ বা ডিম, ফলমূল ইত্যাদি থেকেই যে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। এ জন্য বাইরে থেকে খাবার আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এ বার্তা দিতে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে ক্যাম্পেইন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফও এ ক্যাম্পেনে সক্রিয় সমর্থন জানাচ্ছে। যার মূল কথাটা হলো— স্থানীয় খাবার বা ‘লোকাল ফুড সিস্টেম’ই আমার আপনার প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট। ভারতে ইউনিসেফের প্রধান ইয়াসমিন আলি হক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি বলছেন, এ কথাটা ভারতের জন্য যেমন তেমনি বাংলাদেশের জন্যও সত্যি।

ড. ইয়াসমিন বলেন, লোকাল ফুড বলতে আমরা বোঝাচ্ছি— আমার বাড়ির আঙিনায় যেটা পাওয়া যাচ্ছে, কিংবা বাড়ির পাশের বাজারে যেগুলো সব সময় পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো। তবে ভারতের মতো বিশাল দেশের প্রতিটি রাজ্যে, এমন কী দেশের প্রতিটি জেলাতেও যে স্থানীয় খাবারের ধরনটা পাল্টে যেতে পারে সে কথাও ইউনিসেফ মনে করিয়ে দিচ্ছে। ড. ইয়াসমিন বলেন, নিজের বাড়ির আঙিনায় কুমড়ো, লালশাক বা পুঁইশাকও তো আমরা লাগাতে পারি। তা না করে আমরা কি বাজারে যেটা বেশি চোখে পড়ে সেগুলোই শুধু খাচ্ছি? কিন্তু তার মানে কি পশ্চিমবঙ্গের একটি শিশুর হিমাচল প্রদেশ থেকে আনা আপেল খাওয়ার দরকারই নেই? ইয়াসমিন আলির জবাব, সেই প্রয়োজনটা কিন্তু পেয়ারা দিয়েও মেটানো যেতে পারে। কিংবা বাংলায় কুল প্রচুর পরিমাণে হয়। তারা কুলও খেতে পারে। আপেলই খেতে হবে, এমন তো কথা নেই। আপেল-স্ট্রবেরি না খেলেও তাদের চলে যাবে।

ড. ইয়াসমিন বলেন, যেখানে যা পুষ্টিকর খাবার স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়, সেটা যদি আমরা ভারসাম্য রেখে খাই; সঠিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিনস বা শাক-সবিজ খেতে পারি তা হলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়। ইয়াসমিন হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী তিনি। কর্মসূত্রে নানা দেশে থাকলেও তিনি আজও বাংলাদেশি নাগরিক। তার বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাই তিনি ভারতের ক্যাম্পেনে প্রয়োগ করেছেন।

ড. ইয়াসমিন বলেন, ছোটবেলায় আম্মা সব সময় বলতেন গাজর খেতে, তাতে চোখের দৃষ্টি নাকি ভালো হবে। আমরাও যখন মা হয়েছি, বাচ্চাদের গাজর খেতে উত্সাহ দিতে বাড়িতেই গাজর লাগিয়েছি। বাংলাদেশে আর একটা জিনিস ছিল, আপনি কি শাক-সবিজ ধুয়ে কাটেন; না কি কাটার পর ধোন? কাটার পর ধুলে কিন্তু তার ভিটামিন বা মিনারেলস চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেই অভ্যাসটা পাল্টানোর জন্য জাতীয় স্তরে একটা ক্যাম্পেইন দরকার হয়েছিল। আসলে সাধারণ মানুষ তাদের খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনলেই যে নিজেদের ডায়েটে অনেক বেশি পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবে, এ অভিযানের মাধ্যমে ইউনিসেফ সেই বার্তাটাই দিতে চাইছে।

আরো পড়ুন: পাটের নতুন জাত উদ্ভাবন ফলন বাড়বে ২৪ শতাংশ

ড. ইয়াসমিন বলেন, এমন জেলা নেই যেখানে কিছু না-কিছু ফল বা শাক উত্পাদিত হচ্ছে না। ডিম তো সব জায়গাতেই হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন দেখছি বাচ্চারা ডিম না খেয়ে বাইরে থেকে আনা অন্য খাবারের দিকে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, আসলে গর্ভবতী মা-ই বলুন বা বাচ্চারা, তাদের কী খাবার দেওয়া হবে সেখানে লোকাল ফুড সিস্টেমের একটা বড় ভূমিকা থাকা উচিত। একটা বাচ্চাকে স্ন্যাকস দেওয়ার সময় তাকে একটা গাজর, কমলালেবু বা পেয়ারা দিতে পারি। কিন্তু সেগুলো না-দিয়ে আমরা তাকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছি কি না, প্রশ্ন সেটাই।

Share: