“ভানু’দার শ্মশান উদ্বোধন”

রম্য রচনা

—জাঁ-নেসার ওসমান

যাক বাবা বাঁচা গেলো।

এখন আর মড়াপোড়াতে পাঁচক্রোশ দূরের শ্যেউড়া তলার শ্মশানে যেতে হবে না, আমাদের. গ্রামেই হচ্ছে ডিজিটাল শ্মশান।

সত্যি! বলিস কিরে. আমাদের. এই অজ পাঁড়া গাঁয়ে আধুনিক বৈদ্যুতিক শ্মশান!

ভাবা যায়!! আধুনিক ডিজিটাল বৈদ্যুতিক শ্মশান! তো কবে হবে রে. বৈদ্যুতিক শ্মশান? দশ বছর লেগে যাবেনা তো?

হ্যার, বেটা! দেখোস না, এখন ঘরে. ঘরে.পল্লী বিদ্যুৎ। এখন আর চিন্তা নাই, “লগে আছে বিদ্যুৎ / কাম হবে অদ্ভুৎ”

হেঁঃ ঁেহঃ হেঁঃ ঁেহঃ ভিলেনের নিজের রসিকতায় নিজেই হেঁসে উঠলো হ্যান্ডসাম মনিরেন্দ্র।

তা কবে উদ্বোধন হবে রে.আমাদের.ক্যাউড়া তলার শ্মশান?

অতি শীঘ্রই উদ্বোধন হবে ক্যাউড়া তলার শ্মশান। আর উদ্বোধন কে করবে জানিস তো, আমাদের.সর্ব শ্রদ্ধেয়, সৎ-সজ্জন ব্যক্তি শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা।

ও রেপ্প, বাব্বারে., তবে তো আর দেরী নাই, ভানু’দা ধরেছে মানে তো চট যলদি ক্যাউড়া তলার শ্মশান উদ্বোধন হবেই হবে।

শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা একটা চিজ, বটে। মনে আছে তোর, গেল বারে. যখন বন বিভাগ থেকে সব চোরেরা বনের গাছ চুরি করছিলো, তখন ভানু’দা করলেন কি, ্ওই গাছচোর গুলোকে, চাকরি দিয়ে, বন পাহারার কাজে নিযুক্ত করলেন, ব্যাস, শালা বন বিভাগের, গাছ চুরি বন্ধ! ঘুষ খোর অফিসার দের. মুখ কালো। এই হলো আমাদের. সর্ব শ্রদ্ধেয়, সৎ-সজ্জন ব্যক্তি শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা।

হালায় মাল একটা। মানুষের উপকার করে. আনন্দ পায়। বর্তমান সময়ে এই ধরনের মানুষ পাওয়া ভাগ্যের. ব্যাপার।

তো পঞ্জিকা দেখে উদ্বোধনের দিন-ক্ষন কি ঠিক করেছিস?

আরে. মনু তোমারে. কবো কি? উদ্বোধনের দিন-ক্ষন কি ঠিক করতে যেয়ে বেধেছে গোল!!

ক্যা, মনু, গোল বাধলো ক্যা? আর ভানু’দার, কামে গোল বাধাইবে, হেই ব্যাডা ক্যেডা?

আরে উদ্বোধনের দিন-ক্ষন নিয়া গোল বাধাইছে, স্বয়ং শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা।

কউ কি? স্বয়ং ভানু’দার, লগে ফাইট করতাছে ভানু’দা নিজেই!! হ্যেইয়া তো মুই জনমে হুনি নাই, নিজের লগে নিজে ফাইট।

বিষয়টা কি খুইল্লা কবা?

আরে. শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা হইলো সিএসপি ক্যাডার, র্শাপ বেরেন, মাথার মইধ্যে আইডিয়া গিজ গিজ করে. হ্যেয় খালি কইলো,“ যেই দিন, ক্যাউড়া তলার শ্মশান তো উদ্বোধন করবা, হেই দিন মড়া যে পাইবা, হ্যের, গ্যারান্টি কি? মড়া যদি না পাও তয়লে, ক্যাউড়া তলার শ্মশান উদ্বোধন করবা, ক্যেম্ব্য়া?”

কথার. মইধ্যে যুক্তি আছে, পুরো পরশাষন নিশ্চুপ। কেউ আর রা কাড়ে না।

কি করন যায়, ব্যেবাগতে, চিন্তিত!

তখন এক ব্যাডা ইয়ং কৃষ্ণচুড়া না কি জানি, কি ফুলের নামে নাম, হেইব্যাডা খাড়ায়া কয় কি, “ আমারে.যদি একটা অনুমতি দেন তয় মুই এক্ষান কথা কইতে পারি, উপায় একটা আছে স্যার।”

বেবাগ মজলিশ হই হই কইরা উঠল, কউ বাবা কও উপায়ডা কও?

ইয়ং ব্যাডা একটু পোচ মাইরা কয়,“স্যার আমারা নিজেরা একটা ইউটিউব চ্যানেল খুইল্লা শ্মশানের ভিডিও আপ লোড করমু আর লগে লগে ডলার কামামু”।

আরে. একুশে ব্যাডা কয় কি, ইউটিউব চ্যানেল খুইল্লা শ্মশানের ভিডিও আপ লোড করবো, আরে. ব্যাডা শ্মশানে মড়া না পোড়াইলে ভিডিও আপ লোড করবা কি? মড়া কোই?

“ আরে. মনু চেতেন ক্যা? একটু ধৈর্য্য ধইরা হুনেন, আমারা মেডিকেল থেইক্কা বে ওয়ারিশ লাশ আনুম আর শ্মশানে জ্বালামু, ব্যাস প্রবেলম সলভ্”।

বেবাগ পাবলিক খুশীতে, বাগ বাগ, ক্যাউড়া তলার শ্মশান উদ্বোধনের দিন ক্ষন ঠিক কইরা ফালান্। ইয়ং একুশে ফুলের গর্বে বুক ফুইল্লা উঠলো। ব্যাড্য়া একডা বুদ্ধি দিছে ও!! মজলিশের আনন্দের. আর সীমা নাই।

এই সময় আমাদের. সর্ব শ্রদ্ধেয়, সৎ-সজ্জন ব্যক্তি শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা, ব্যাডার বুদ্ধি, ভানু’দা একটু মুচকি হাইস্যা কইলো,

“লাশ যেইডা পাইবা হেইডা যে সনাতন ধর্মালম্বী হিন্দু ধর্মের.অনুসারী হইবো হ্যের. গ্যারান্টি কী? অন্য কোনো বৈাদ্ধ-খৃষ্টানের লাশ ক্যাউড়া তলার শ্মমানের উদ্বোধনের দিন পোড়াইলে, ধর্ম যুদ্ধ লাই¹া যাইবো ভাই হ্যের. মইধ্যে আমি নাই।”

ব্যাস, বেবাগতে চুপ। মজলিশে কব্বরের নিঃশব্দতা। কারো মুখে রা নাই। অহন হরবা কী? উদ্বোধনের দিন মড়া পাইবা কোই?

তায়লে, ক্যাউড়া তলার শ্মশান কি আর ্হইবো না ্!! একুশে ব্যাডার ইউটিউব চ্যানেল আর হইবো না!! আর ডলার ক্মাাইতে পারমু না??

তয় সবে শকুনের মতো বইন্সা আছে কবে মড়া পাইবো আর সর্ব শ্রদ্ধেয়, সৎ-সজ্জন ব্যক্তি শ্রী শ্রী চন্দ্রবিন্দু নমঃ ভানু’দা, ক্যেউড়া তলার শ্মশান উদ্বোধন করবো!!

লেখক: চলচ্চিত্র পরিচালক ও সমাজ সংস্কারক।

Share: