নারীর পোষাক : সৌন্দর্য ,শৈল্পিকতা ও যৌনতা-ফারহানা আকতার

ফারহানা আকতার এর কলাম :

ফারহানা আকতার

নারীর পোষাক : সৌন্দর্য ,শৈল্পিকতা ও যৌনতা শাড়ি কিংবা অন্য যেকোনো শালীন ও রুচিসমমত পোশাক পড়ে,সাজগোজ করে, কোনো নারী যখন নিজেকে সুন্দরী বলে
মনে করে এবং সেভাবে চলাফেরা করে সেটা প্রকৃতই সুন্দর এবং প্রকৃতই গ্রহনযোগ্য ৷ কিন্তু আমাদের সমাজে কিছু উগ্রবাদী
তথাকথিত শিক্ষিত পুরুষসমাজ একে ;যৌনআবেদনময়ী বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ তাহলে কি সুন্দর মানে
যৌনআবেদন ?কোনো ফুল, গাছ কিংবা কোনো শিশুকে যখন আমরা সুন্দর বলি , তার মানে কি তারাও
যৌনআবেদনময়ী? “আমি মনে করি, মূলতঃ সৌন্দর্য’ , ‘যৌনআবেদন’ এবং ‘ শিল্প’-এই তিনটি আলাদা-আলাদা

কনসেপ্ট অর্থাৎ “সৌন্দর্য” -আলাদা একটি ব্যাপার , “যৌনতা” আলাদা একটি ব্যাপার এবং “শিল্প” আলাদা একটি ব্যাপার৷”

এবং নারী ও পুরুষ ঊভয়েই নিজেকে সমাজে কখনো সুন্দর-রুচিসম্মতভাবে কখনো শৈল্পিকভাবে ও কখনোবা
যৌনআবেদনময়ীভাবে উপস্হাপন করতে পারেন ৷এটি সম্পূর্নভাবে আপনার রুচির ও পছন্দের ব্যাপার , আপনি নিজেকে
কীভাবে উপস্হাপন করবেন ৷ তবে এটা সত্য, যেহেতু বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ার একটি মুসলিম ও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির
দেশ , তাই এখানকার মানুষ নিজেকে সমাজে উপস্হাপনের জন্য সুন্দর-রুচিসম্মত ও শৈল্পিক ব্যাপারটি বেছে নিতে বেশী
পছন্দ করে এবং যৌনআবেদনময়ী তাকে পরিত্যাগ করে ৷ আমরা জানি, প্রতিটি প্রানীর মাঝেই স্ত্রী-পুরুষ উভয় লিঙ্গ
রয়েছে ৷ একমাত্র মানবজাতির মধ্যকার স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো প্রানীদের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গ নিয়ে এত কথা,
এত হিংসা-বিদ্বেষ,এত যৌনতা নিয়ে আহাজারি হয়নি ৷ ফুল ‘সুন্দর’ আর ‘ফল’ টি ফুলের এর মতো সুন্দর নয় , তাই বলে কি এতে ফলের
কোনো আক্ষেপ রয়েছে ? কিংবা তাই বলে কি ‘ফুল’ যৌন -আবেদনময়ী ? মূলতঃ এটি  হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার৷
সঠিক- স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি দিন দিন আমাদের সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে ফলে তরুন প্রজন্ম দ্বিধা-গ্রস্ত, বিপথগামী৷ যে শিক্ষিত
নারী -পুরুষগণ উভয়ে জীবনে চলার পথে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি মেইনটেইন করেন এবং নারীকে ‘মানুষ’ হিসেবে সম্মান দিয়ে
থাকেন, তাদের কাছে নারীর ড্রেস কোনো ম্যাটার নয় এবং তারা কখনই নারীকে ‘যৌন-আবেদনময়ী’ হিসেবে ট্রীট করেন
না৷ তারা নারীর মেধা-বিদ্যা-বু্দ্ধি-ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে তাকে প্রকৃত মানুষের সম্মান দিয়ে থাকেন৷যৌন-আবেদনময়ী
ব্যাপারটি তারা বিবেচনায় আনেন না৷শুধু নারী নয়, সমাজে পুরুষও তো তাকে যৌন-আবেদনময়ী হিসেবে তুলে ধরতে
পারে৷তবে আমি কখনই ‘ উগ্র-পুরুষবাদীতা’ ও ‘ উগ্র-নারীবাদীতা’ পছন্দ করিনা এবং নর-নারীর পবিত্র প্রেমে
উভয়ের সৌন্দর্যকে আমি শৈল্পিকভাবে দেখি এবং সবারই তাই দেখা উচিত৷ এখানেও  অর্থাৎ পবিত্র সম্পর্কের মাঝেও যদি
সমাজের উগ্র-নারীবাদী ও পুরষবাদীরা যৌনাতকেই আলোচনা-সমালোচনায় নিয়ে আসেন, তাহলে তা হবে খুবই
দুঃখজনক৷ তখন সমাজ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও নর-নারীর একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাবে ৷ সমাজে বিশৃঙ্খলার
সৃষ্টি হবে৷
আমি প্রগাঢ়ভাবে মনে করি, নারী-পুরুষ-এর সম্পর্ক একটি শ্রদ্ধার সম্পর্ক, একটি সম্পূরক সম্পর্ক, একটি সুন্দর
ভালোবাসার সম্পর্ক, এটি কখনই শুধু যৌনতার সম্পর্ক নয়৷ যেকোনো শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কিংবা শিক্ষিত সমাজে যারা
কেবলই নারী-পুরুষ-এর মাঝে প্রতিযোগীতার সম্পর্ক আর যৌনতার সম্পর্ক কে প্রাধান্য দিয়ে রঙ্গ-রসাত্বক লেখা
লিখে থাকেন এবং মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অনৈতিকতার দিকে উস্কে দেন, তাদের সেইসব লেখা ও রচনাবলী
রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত ৷
লেখক : ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনষ্টিটিউট , বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক , গবেষক এবং লেখক ৷

Share: