bbb

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৬ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনায় যুক্ত হয়ে নিজেকে এখনও বরগুনার এমপি মনে করার বিষয়টি জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিত এলাকা বরগুনার তালতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে শারিকখালী ইউনিয়ন ব্যতীত বাকি ছয়টি ইউনিয়নে আগামী ১৫ জুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ।

তবে এ তালিকায় তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় গুরুত্ব দিয়ে যাদের নাম পাঠিয়েছে তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে লাঞ্ছিতকারী, নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী এবং দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গত ৬ ও ৭ মে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী যাচাই বাছাই করে প্যানেল তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

আরও পড়ুন: কুসিক নির্বাচন: আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৪ জন

এসময় তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ও কড়ইবাড়ীয়া ইউনিয়নে ভোটের মাধ্যমে সিরিয়াল অনুযায়ী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্যানেল প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া ছোটবগী, বড়বগী, নিশানবাড়িয়া ও সোনাকাটা ইউনিয়নে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্যানেল প্রস্তুত করা হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মনোয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নে ভোট কিনে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে প্রথম হয়ে এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার প্রথমে নাম লিখিয়েছেন সাবেক শিবির নেতা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার। এছাড়াও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে নৌপথে আমতলী থেকে তালতলী যাওয়ার পথে বগীরহাট বাজার সংলগ্ন পায়রা নদীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা স্পিডবোটে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতীক লাঙ্গল তুলে দিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করেন আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার।

এছাড়া কড়ইবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভোটে জিতে এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার প্রথমে নাম লিখিয়েছেন মো. জসিম উদ্দীন মোল্লা। তিনি তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজবি-উল-কবিরের ভগ্নীপতি।

আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর এ ইউনিয়নের যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন জসিম উদ্দীন মোল্লা। অভিযোগ উঠেছে- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর রেজবি-উল-কবির প্রভাব বিস্তার করে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ভগ্নীপতি জসিম উদ্দীন মোল্লাকে ভোটে বিজয়ী করেছেন তিনি।

গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রকাশ্য বিরোধিতা করায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় নাম দেয়নি বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর মিয়া আলম মুন্সির। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ আলমগীর মিয়া আলম মুন্সির নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এই ইউনিয়ন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকার দুই নম্বরে। এতে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তালতলী থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রকাশ্য বিরোধিতা করার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় তার নাম দেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগ তার নাম ওই ইউনিয়ন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় তিন নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এতে বিব্রত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা।

ছোটবগী ইউনিয়নে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা আবুল হোসেনের নাম মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় চার নম্বরে দিয়েছিল ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা আবুল হোসেনের নাম চার নম্বর থেকে দুই নম্বরে উঠিয়ে আনার অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এছাড়াও নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কবীর আকনকে সোনাকাটা ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিক তালুকদার বলেন, নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করতে স্পিডবোটে আমতলী থেকে তালতলী যাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বগীরহাট বাজার সংলগ্ন পায়রা নদীর তীরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য। তখন প্রধানমন্ত্রী স্পিডবোট নিয়ে নদীর তীরে আসলে তার স্পিডবোটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতীক একটি কাঠের লাঙল তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লাঞ্ছিত করেন রাজ্জাক হাওলাদার। সে এখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চায়। আমরা তাতে লজ্জিত।

বড়বগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য আলমগীর মিয়া আলম মুন্সিকে দল থেকে বহিষ্কার করে মাইকিং পর্যন্ত করা হয়েছে। এজন্য তৃণমূল তার নাম দেয়নি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায়। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ তার নাম তালিকার দুই নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, তালতলী থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দুলাল ফরাজির নাম আমরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় দেয়নি। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এতে আমরা বিব্রত।

আরও পড়ুন: হুংকার দিয়ে লাভ নেই, ফখরুলকে বললেন কাদের

ছোটবগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দলে অনুপ্রবেশকারী নব্য আওয়ামী লীগ আবুল হোসেনের নাম এ ইউনিয়ন থেকে আমরা চার নম্বরে দিয়েছি। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগ তার নাম দুই নম্বরে দিয়েছে।

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কয়েকজনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর কয়েকজন নিজেদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে তাদের সবার সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য তালতলী গেলে জানা যায়- তারা সবাই ঢাকা অবস্থান করছেন।

তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি-উল-কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে জানা যায়, তিনিও ঢাকা অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে নারাজ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবির।

তবে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, তালতলী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সুপারিশপ্রাপ্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে অনেক অভিযোগ আমিও শুনেছি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্তে পাঠানো হয়।