শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকট ও কদর্য রাজনীতি। মোঃ নজরুল ইসলাম স

১৯৯৮-র বন্যা ছিলো বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়ংকর বন্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। দুই মাসের বেশী স্থায়ী এই বন্যায় দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যায়।বিএনপি তখন ভিতরে খুশী চেপে রেখে বিরস বদনে ২ কোটি মানুষ মারা যাবে বলে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল।

 

আওয়ামী লীগের লালবাগের এমপি হাজী সেলিম সংসদে খাস ঢাকাইয়া ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে প্রায়ই হাস্যরসের সৃষ্টি করতেন।বিএনপির এই ভবিষ্যৎ বাণী নিয়ে কোন সংসদের কোন এক সেশনে হাস্যরসের চূড়ান্ত করেছিলেন এই সংসদ সদস্য ।স্মৃতি থেকে লিখছি। সেদিন তিনি বলেছিলেন- বিএনপি কইছে বন্যায় ২ কোটি মানুষ মারা যাইব,মাগার কুত্তা, বিলাই,ইন্দুর এবং পিপড়া মিলাইয়াও ২ কোটি প্রাণী মারা যায় নাই।

এই লম্বা ভূমিকার অবতারণা করছি শ্রীলঙ্কার বর্তমান বিপর্যয় আর নেপাল পাকিস্তানের সংকট ঘনীভূত দেখে বিএনপির খুশী খুশী ভাব ভিতরে চেপে রেখে মুখে বেদনার কালো ছায়া মেখে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মত হতে যে ইঞ্চি খানেক বাকী সেটা শত মুখে প্রচার করছে।আর সেই সাথে রুমিন ফারহানাদের মুখ ঝামটা তো আছেই,আছে দূরত্ব বজায় রেখে এক শ্রেণীর নেড়ী কুকুরের মত গগনবিদারী চিৎকারে বীরত্ব প্রদর্শনে পারদর্শী প্রবাসে থাকা ইলিয়াস, পিনাকী, দেলোয়ার, তুহিন মালিক গং সেই সাথে তো আছেই বিএনপির বুদ্বিজীবি কূল শিরোমণিরা।বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো মান্না রবদের কথা বাদ দেই কি করে।আর হ্যা, আরও আছে নূরু, জুনায়েদ সাকী সবিশিষ্টরা।

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে না গিয়ে মোটা দাগে ব্যাপারটি বুঝতে হলে সে দেশের বিপর্যয়ের কারণগুলি জানতে হবে।

শ্রীলঙ্কার আয়ের উৎস গার্মেন্টস খাত আর পর্যটন। করোনা মহামারীর জন্য দুইটিই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।দ্বীপ রাস্ট্রটিতে পর্যটক নেমে আসে শূন্যের কোটায়।আর গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ ঝুঁকি নিয়েছিল,গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দিয়েছিল।এখানেও শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা প্রশংসার দাবিদার। টকশোজীবিদের গেল গেল তার স্বর চিৎকারে তিনি কর্ণপাত করেননি।যার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

তারপর আছে হাম্বানটোটা সমুদ্র বন্দর ও বিমানবন্দর নির্মাণের মত কিছু মেঘা প্রকল্প যা সে দেশটির জন্য শ্বেত হস্তী তে পরিণত হয়েছে।যা তাদের ব্যবহারের সক্ষমতা নেই।বাংলাদেশও এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।কিন্ত এই প্রকল্পগুলোর আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে।বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের কারণে আয়ের অর্থ দিয়েই আমরা এর ঋণ পরিশোধে সক্ষম।পদ্মা সেতু, রুপপুরের মত মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে।আমাদের পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর মোটেই শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার মত হবে না।কারণ এটা পণ্য আমদানী রফতানির জন্য আমাদের নিজেদের জন্যই প্রয়োজন। এতে করে আমাদের সময় ও অর্থও বাঁচবে।তাছাড়া এই সমুদ্র বন্দর ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত সাতটি রাজ্য,এবং নেপালও তাদের ব্যয় সংকোচনের জন্য এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তাছাড়া সিঙাপুরের মত এই বন্দর ব্যবহারের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। যা খুলে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির নয়া দিগন্ত।

শ্রীলঙ্কার রয়েছে রিজার্ভ সংকট। তারা তাদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ।দৈনন্দিন আমদানী ব্যয় মিটাতে পারছে না।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।আমাদের রয়েছে বিপুল রিজার্ভ। আমরা ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা কে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছি।আমাদের রয়েছে আগামী দশ বছরের ঋণ পরিশোধের নিরাপদ সক্ষমতা। যেখানে কোন দেশের দুই মাসের আমদানি ব্যয় মিটানোর সক্ষমতা সেই দেশের শক্তিশালী অর্থনীতির পরিচয় সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ছয় মাসের ব্যয় মিটানোর সক্ষমতা।

তবে হ্যা, বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা পরবর্তী মূল্য স্ফীতি। অনেক উন্নত দেশেও এই জন্য চলছে অস্থিরতা। গ্লোবাল ভিলেজের এই যুগে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে।

শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়, নেপাল, পাকিস্তানের সংকট থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে,আতংকগ্রস্ত হলে চলবে না।তবে আমাদের সাবধান হতে হবে।

Share: