কৃষকের পান্তাভাত এখন অস্ট্রেলিয়ার রন্ধন প্রতিযোগিতায় -মোঃ নজরুল ইসলাম

প্রেসওয়াচ ফিচার পাতাঃ বাংলাদেশের গ্রামবাংলার মানুষের আবহমানকালের খাবার পান্তাভাত আর আলুভর্তা পরিবেশন করে রান্না বিষয়ক একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী।

প্রথম দিন ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার রান্না করেন ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস, আলু ভর্তা ও সার্ডিন’। অর্থাৎ বাঙালির কাছে চিরচেনা পান্তা-ভাত, আলু ভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি(ইলিশের জাত ভাই) ।

নজরুল ইস লাম – কবি ও রাজনীতিবিদ ।সবুজবাগ, ঢাকা ।
গতকাল ছিল পহেলা বৈশাখ।পহেলা বৈশাখ পালনের অনেকগুলো উপকরণ যার মধ্যে অন্যতম হল সকালে পান্তাভাত খাওয়া।এবার রোজা থাকায় অবশ্য অনেকেই পান্তাভাত দিয়ে ইফতার করেছেন।
এই পান্তাভাত নিয়ে যেমন আদিখ্যেতা দেখা যায় তেমনি দেখা গেছে পান্তাভাত খাওয়া নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রুপ বর্ষণ।
পান্তাভাত আমাদের পিতা প্রপিতামহদের দৈনন্দিন খাবার ছিল। আমরা খাই কালেভদ্রে বা খাওয়া হয়না।কিন্তু অন্তত পহেলা বৈশাখে আমরা উৎসব হিসেবেও যদি পান্তা ভাত খেয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করি সেটাতে খারাপ কিছুতো দেখিনা।
পান্তাভাত খাবার উপকরণ বিভিন্ন রকমের ভর্তা, শুটকি।অধিকাংশ মানুষই ইলিশ নিয়ে মাতামাতি করে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ অবশ্য নোনা ইলিশ দিয়ে করলা।
এখন পান্তাভাত নিয়ে যেমন আদিখ্যেতা দেখা যায় তেমনি এটা গরীবের খাবার বলে একটা সময় নাক সিটকানো ছিল।কিন্ত এই পান্তাভাত নিয়ে দেখা যাক পুষ্টিবিদ এবং গবেষকদের মতামত।
ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যাপারে গবেষণা পরিচালিত হয়, যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়া।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয় এবং যেসব দেশে ভাত প্রধান খাবার, মূলত সেসব দেশে ভাত পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু আছে।
এসব এলাকায় আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং আর্দ্র হওয়ার কারণে খুব সহজেই ভাত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণে এই খাবার দ্রুত নষ্ট হয় না।
মূলত সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করেই এই পান্তা ভাতের চল শুরু হয়।
১০/১২ ঘন্টা পানির নীচে থাকার ফলে অক্সিজেনের অভাবে ভাতে স্থুলতার কারণ কার্বোহাইড্রেট ভেংগে।যায়।এছাড়াও ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যেসব এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকে সেগুলোরও ক্ষয় হয় এবং ভাতটাও হাইড্রেট হয়ে থাকে।

কী আছে পান্তা ভাতে

কৃষকের পান্তাভাত এখন অস্ট্রেলিয়ার রন্ধন প্রতিযোগিতায়
গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, তারা দেখেছেন সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে এসব পুষ্টিদায়ক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম।
একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তা ভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম।
গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের উপস্থিতিও অনেক বেড়ে যায়।
“ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যে এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর আছে সেটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টিকর পদার্থকে বেঁধে রাখে।
ফলে ভাত খাওয়ার পরেও মানুষের শরীর এসব গ্রহণ করতে পারে না।
কিন্তু ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তা ভাতের ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহণ করতে পারে।
উপকারিতা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন যেটা পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, এছাড়াও তারা গবেষণায় দেখেছেন যে পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও এসব সাহায্য করে।
“এছাড়াও পান্তা ভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।”
তিনি জানান, গবেষণায় তারা দেখেছেন যে পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দই-এর মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
এছাড়াও গরমের সময় পান্তা ভাত শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।
Share: