প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শক্তিশালী, টেকসই সম্পর্ক তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : মোমেন

শাফিউল বাশার/বাসস: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি শক্তিশালী, আরও টেকসই এবং চিরবিকাশমান বন্ধুত্ব তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যখন দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। তিনি বলেন,”এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, আমি পুনর্ব্যক্ত করে নিশ্চিত করতে চাই যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্য দেয়।” সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে এইদেশ সফরে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং সেই সফরের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উষ্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, “তারপর থেকেই, আমরা দ্বিপাক্ষিক এবং বৈশ্বিকভাবে আমাদের অভিন্ন বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য অনুসরণে একটি ক্রমপ্রসারমান সহযোগিতার আওতায় একত্রিত হয়েছি।” তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ের কর্মকান্ডের পাশাপাশি, উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ আর সেই সঙ্গে, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যেকার পারস্পরিক সংযোগ দুই দেশের সার্বিক যোগাযোগ বৃদ্ধির পরিপূরক হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীও দুই দেশের মধ্যে একটি অপরিহার্য সেতু। তিনি বলেন,”আজ আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আগামী ৫০ বছরে এই বন্ধনগুলো বাড়তেই থাকবে।”
২০১৯ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। এই সংখ্যাটি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে উল্লেখ করে ডা. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশের তৈরি পোষাকের একক বৃহত্তম বিদেশী ক্রেতা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় এবং সাধারণ পরিপূরকের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে।” তিনি বলেন, বাংলাদেশ দেখতে চায় যে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো অন্যান্য খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে তার বিনিয়োগকে বৈচিত্র্যমুখী করুক। তিনি আরো বলেন “আমরা আশা করি যে, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে সহজতর করার জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হবে।” তিনি বলেন, একাধিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী গণতন্ত্র হিসেবে রয়ে গেছে এবং বাংলাদেশের মূল সম্পদ হল এর জনগণ, কারণ দেশটি সাংবিধানিকভাবে জনগণের সব ধরনের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন,”আমরা সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি এবং নারীর ক্ষমতায়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রশংসনীয় সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে একটি মধ্যপন্থী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
মোমেন রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবিক সহায়তার শীর্ষস্থানীয় একক অবদানকারী হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,”তবে আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরও অনেক কিছু করতে পারে।” বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী মার্কিন ভ্যাকসিনের বৃহত্তম প্রাপক হওয়ায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশকে ৬ কোটি ১০লাখের বেশি ডোজ কোভিড টিকা দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি’র উপ-প্রশাসক ইসোবেল কোলম্যান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ এমপি, নাইম রাজ্জাক এমপি, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Share: