দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

দিপু সিদ্দিকীঃদক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ জয়হীন টানা ঊনিশ ম্যাচ। এমন পরিসংখ্যান নিয়ে আজ বাংলাদেশ খেলতে নামে সেঞ্চুরিয়নে। বিগত কিছুদিনের সব বিতর্ক ছাপিয়ে আজ বাংলাদেশ পেলো বিশাল এক জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে জয়খরা কাটিয়ে ৩৮ রানের সহজ জয় পেল বাংলাদেশ।

ব্যাটিংয়ে সাকিব, লিটন, ইয়াসিরসহ বাকিদের পারফরম্যান্সের পর বল হাতে জ্বলে উঠলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে ৪৮ ওভার পাঁচ বলে ২৭৬ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও অধরা জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়া জয়ে বিদেশের মাটিতে এবার নিয়মিত জয়ের অভ্যাস গড়ে উঠছে টাইগারদের।


নানা বিতর্কে জর্জরিত দল নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসে। দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানের খেলা না খেলা নিয়ে বিতর্কে টালমাটাল বাংলাদেশ, মাঠের খেলায় আজ শুরু থেকেই দুর্বার। এ এক অন্য বাংলাদেশ। ইতিবাচকতাকে সঙ্গী করে ম্যাচে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিল তামিম-লিটন জুটি। যার উপর ভর করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ।

জবাবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ভ্যান ডার ডুসেন ও মিলারের ব্যাটে ম্যাচে টিকে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ হন্তারকের ভূমিকায় দৃশ্যপটে এলে বাংলাদেশের জয় সুনিশ্চিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ভ্যান ডুসেন করেন সর্বোচ্চ ৮৬ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৯ রান করেন মিলার।

বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ৬১ রানে ৪ উইকেট। তাসকিন আহমেদ নেন ৩ উইকেট। এছাড়া ২টি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
 

এর আগে শুরুতেই প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত হানেন টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম। তার করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মুশফিকের হাতে ক্যাচবন্দি হন জানেমান মালান। মালান ১০ বল মোকাবিলায় ৪ রান করে মাঠ ছাড়েন। এরপর তাসকিন নবম ওভারে এসে ৪ বলের ব্যবধানে শিকার করেন ২টি উইকেট। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা মিস করেন কাইল ভেরেন্নি।

অন ফিল্ডের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তটা রিভিউ করেননি, করলেও লাভ হতো না। প্রোটিয়া ওপেনার ২৫ বলে ১১ রান করে মাঠ ছাড়েন। এর ২ বল পর এইডেন মারক্রামকে ফেরান তাসকিন। জায়গা পেয়েছেন ভেবে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন মারক্রাম, তবে শরীর থেকে দূরে শট খেলাটা বিপদ ডেকে এনেছে তার। বড়সড় আউটসাইড-এজের পর ক্যাচ গেছে পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে।

এরপর  দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন টাইগার পেসার শরিফুল। তার বাড়তি বাউন্স দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ককে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছে। ৫৫ বলে ৩১ রান করে বিদায় নেন টেম্বা বাভুমা। তাতে ভাঙে ডুসেনের সঙ্গে তার ৮৫ রানের অনবদ্য জুটি। বাংলাদেশকে আরেকবার জয়ের পথে পাল তুলতে সহায়তা করেন শরিফুল।

এর আগে  সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বড় লক্ষ্যই বেধে দেয় বাংলাদেশ। লিটন, সাকিব ও ইয়াসিরের ফিফটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান। রাবাদাদের মাটিতে প্রথম ইনিংসে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে হলে করতে হবে ৩১৫ রান।


ব্যাট হাতে নেমেই বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে যত রেকর্ড, সবগুলোতেই আছেন তামিম ইকবাল খান। প্রথম ওয়ানডেতে লিটনকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতেও আগের ৪৬ রানের রেকর্ড ভেঙে গড়েছেন নতুন নজির। তবে দলীয় শতরান এবং ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দোরগোড়ায় গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তামিম। আন্দ্রে পেহেলুকায়োর বলে সাজঘরে ফেরার আগে তামিম ৬৭ বল খেলে ৩ চার ও এক ছয়ে করেছেন ৪১ রান।

এদিকে সময়টা যেন নিজের করেই নিয়েছেন লিটন দাস। দেশের মাটিতে কিংবা বিদেশে সবখানেই দুরন্ত ছন্দে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ প্রথম ওয়ানডেতেও ফিফটি করেছেন। তবে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের পরই কেশব মহারাজের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরলেন। তবে এদিন হতাশ করেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর। ১২ বল মোকাবিলায় তিনি মাত্র ৯ রান করে মাঠ ছেড়েছেন।

মুশফিকের বিদায়ের পরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাকিব ও ইয়াসির চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১১৫ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েন। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ম্যাচে মাত্র ১ রান করলেও, চতুর্থ ম্যাচে এসে আস্থার প্রতিদান দিলেন ইয়াসির আলী। ৪৩ বলেই পূর্ণ করে ফেলেন অর্ধশতক। তবে তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি কাগিসো রাবাদা। ৪৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কার মারে সাজানো ছিল ইয়াসিরের ইনিংসটি। অন্যদিকে সাকিব ফিরেছেন ৭৭ রান করে। ৬৪ বল মোকাবিলায় টাইগার অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কার মার।
শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৭ বলে ২৫, আফিফ হোসেনের ১৩ বলে ১৭ এবং মেহেদী মিরাজের ১৩ বলে ১৯ রানের ‍ওপর ভর করে তিনশো ছাড়ায় বাংলাদেশ। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে মার্কো জানসেন ও কেশভ রাজ ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
Share: