॥ তানজিম আনোয়ার ॥
ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ : যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই ২০২২ সালে ওয়াশিংটনের সাথে ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হলো। এক ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘকালের এই সম্পর্কই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক উজ্জীবিত করতে সহায়ক হবে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।
আগামী মাসগুলোতে দেশ দুটির মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৪ এপ্রিল দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীর দিনেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিংকেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ওয়াশিংটন যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নব-নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি.হাস’র ঢাকার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনে যাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতার ইঙ্গিত। সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারাও বলেছেন, তারা আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশের সাথে ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক।
এদিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল ইসলাম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে আজ বাসস-এর কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি মনে করি এসব যোগাযোগ এই ইঙ্গিতই বহন করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রও আমাদের দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।’
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নব-নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বলেন যে, তিনি বছরব্যাপী দু’দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের অর্ধশত বার্ষিকী উদযাপন করতে চান এবং বাংলাদেশ ৫০ বছরের মধ্যে যে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে, তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন। পিটার হাস শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ মিশনে যান। মার্চ মাসের গোড়ার দিকে তিনি ঢাকা পৌঁছাবেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ মিশনের কূটনীতিকদের মতে, বাংলাদেশ মিশন ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যৌথভাবে দু’দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও সম্পর্ক :
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অপরাধ-বিরোধী এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)-এর কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এনিয়ে সরকারী মহল ও গণমাধ্যমে বেশ তোলপাড় হয়। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করেছেন যে, এই ইস্যুটির সাথে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
আইন বিশেষজ্ঞ ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে আইনের মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তার সাথে ‘রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের’ সম্পর্কের কোন যোগাযোগ নেই।
বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ প্রোফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘যে আইনের আওতায় বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সেই আইনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অন্তর্ভুক্ত নয়।’ তিনি আরো বলেন, মানবাধিকার লংঘনের দায়ে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কিছু যখন বিদেশী রাষ্ট্র্রকেও সম্পৃক্ত করে, তখন এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি ইস্যু সৃষ্টি করে।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ এখন একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত কমিটি গঠন করেছে। কর্মকর্তারা জানান, ওয়াশিঙটন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরকে জানিয়েছে যে, আগামীমাসে তারা বাংলাদেশে অষ্টম অংশীদার সংলাপে অংশ নিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবেন। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাসসকে বলেছিলেন যে, নীতগতভাবে তারা ২০মার্চে এই সংলাপে বসবেন বলে আশা করছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের দুই দিন পর পর সিকিউরিটি ডায়লগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৮ম নিরাপত্তা ডায়লগটি ৬ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে। (বাসস)